বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত দপ্তর। সঙ্গত কারণেই সেখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, ৭ নম্বর ভবনে বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগে। ৬ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আর সেই আগুন পুরোপুরি নিভতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ ঘণ্টা। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার যে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত দপ্তরে অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। জানা যায়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে মধ্যরাতে আগুন লাগার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। আমরা মনে করি, সেসব প্রশ্ন এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
উলেস্নখ্য, বুধবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানে পদত্যাগ দাবি করে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভায় আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন আমলারা। প্রশাসনে এমন চলমান অস্থিরতার মধ্যেই ওইদিন রাতেই এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা চলছে বলেও জানা যায়। রাষ্ট্রের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গভীর রাতে আগুন লাগার কারণ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সন্দেহের কথাও বলছেন। আমরা মনে করি, এই দিকগুলো আমলে নেওয়া এবং সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। লক্ষণীয় যে, আগের সরকারের 'দুর্নীতির প্রমাণ নষ্ট করতে' আগুন লাগানো হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। এছাড়া, এটি নাশকতা, নাকি স্বাভাবিক অগ্নিকান্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই আগুনকে অন্তর্বর্তী সরকারকে 'ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র' হিসেবে দেখছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া- এমনটিও খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে বলে মনে করেন সচিবালয়ের কাছে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী- এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে সেগুলোকে বিবেচনায় রাখাসহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
বলা দরকার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডিজি বলেছেন, রাত ১টা ৫২ মিনিটে তারা মেসেজ পান সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লেগেছে। ১টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে তাদের ইউনিট সেখানে পৌঁছে। ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো ঢুকতে না পারায় কাজে বেগ পেতে হয়েছে। ৬ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। জানা যায়, সচিবালয়ের যে ভবনটি আগুনে পুড়েছে, তার ১০টি তলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে সেখানে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে। ফলে, এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা কতটা উদ্বেগের তা সহজেই অনুমেয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একদিকে দেশে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে- যা রীতিমতো উদ্বেগের। আবার যদি বাংলাদেশ সচিবালয়ের মতো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত দপ্তরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তবে তা কতটা আশঙ্কার সেটা অনুধাবন করতে হবে। জানা যাচ্ছে, অগ্নিকান্ডের কারণ খুঁজতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। অগ্নিকান্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দ্রম্নত এই অগ্নিকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।