একের পর এক সড়কে ঘটছে ভয়াবহ ঘটনা। মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। ফলে, সাবির্ক পরিস্থিতি কতটা ভীতিকর তা আমলে নিতে হবে। বলা দরকার, সম্প্রতি জানা গেল ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল পস্নাজায় বাসচাপায় মা, দুই মেয়ে, এক নাতিসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল বেলা ১১টার দিকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাওয়ার দিকে যাচ্ছিলেন সুমন। ধলেশ্বরী টোল পস্নাজায় মোটর সাইকেল থামিয়ে তিনি টোল পরিশোধ করছিলেন। পেছনে সিরিয়ালে ছিল একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার। এ সময় ঢাকা-কুয়াকাটা রুটে চলাচলকারী ব্যাপারী পরিবহণের একটি দ্রম্নতগতির বাস টোলপস্নাজায় ঢুকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যায়। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় প্রাইভেটকারটি। মোটর সাইকেলে থাকা শিশু আব্দুলস্নাহ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাইভেটকারে চার যাত্রীর মৃতু্য হয়। জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে।
আমরা বলতে চাই, এই ঘটনার সামগ্রিক বিষয় আমলে নিয়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রম্নতগতির বাস টোলপস্নাজায় ঢুকে গেল কেন কিংবা কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেটা এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক ঘটনা আমলে নিতে হবে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া, উলেস্নখ্য যে, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ট্রাকচাপায় করিমনের যাত্রী চার কৃষি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। গতকাল ভোরে সাঁথিয়া-মাধপুর সড়কের রাঙামাটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তথ্য মতে, ভোরে কয়েকজন কৃষি শ্রমিক পেঁয়াজ লাগানোর জন্য একটি করিমনে মাধপুর এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। মাঝপথে করিমনের সমস্যা হলে রাঙামাটি এলাকায় সড়কের পাশে থামিয়ে মেরামত করছিলেন চালক। ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে মাধপুর থেকে সাঁথিয়াগামী একটি দ্রম্নতগতির ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই করিমনের তিন যাত্রী মারা যান। আহত হন পাঁচজন। এছাড়া, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ দু'জন নিহত হয়েছেন। গতকাল কুতুবখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
আমরা বলতে চাই, শুধু এই ঘটনাগুলো নয়, প্রতিনিয়ত সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে, যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া নৌপথ, রেল এসব দুর্ঘটনায়ও মানুষ নিহত হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাবসহ বিভিন্ন কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। ফলে, সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি বলতে চাই, এবারের ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন। পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়কের ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়, যেখানে প্রতিনিয়তই মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে- যা এড়ানো যাবে না। মনে রাখা দরকার, নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে- যা কাম্য হতে পারে না। একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে।