কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসে, তা উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বিশ্বের শহরগুলোর তালিকায় বায়ুদূষণে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই এটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। তথ্য মতে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ারের সূচক অনুসারে, ২২২ স্কোর (একিউআই) নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' পর্যায়ে পৌঁছায়। এদিন বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল আফগানিস্তানের কাবুল। এছাড়া লক্ষণীয়, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববারের সকালেও ঢাকার বায়ুর মান ছিল অস্বাস্থ্যকর। তথ্য মতে, নগরীর পাঁচ স্থানে পরিস্থিতি আরও নাজুক। সেসব এলাকার মান খুব অস্বাস্থ্যকর। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্বের ১২৬টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল চতুর্থ এমনটিও জানা যায়।
আমরা বলতে চাই, যে তথ্য সামনে আসছে, তা যেমন আমলে নিতে হবে, এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে এসেছে- সেটাও এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, বায়ুদূষণ কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা আমলে নেওয়ার পাশাপাশি বিবেচনায় রাখা দরকার, এর আগে এমনও জানা গিয়েছিল, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃতু্য হয়। ফলে, দেশের সংশ্লিষ্টদের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্টদেরও কর্তব্য হওয়া দরকার- সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করা। আমরা এটাও বলতে চাই, বায়ুদূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এটাও জানা যায় যে, সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান, যেমন ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, পাওয়ার স্টেশন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।
এছাড়া যেহেতু বায়ুদূষণের একাধিক উৎস রয়েছে, তাই ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বায়ুর গুণগতমান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। ফলে, বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। উলেস্নখ্য, এর আগে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক বলেছেন, 'বায়ুদূষণের বর্তমান প্রধান কারণ হচ্ছে রাস্তা। কারণ রাস্তায় নানা সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলতেই থাকে। এছাড়া, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতাসে দূষণ ছড়ায়। পরামর্শ দিয়ে এই বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ এটাও বলেছেন যে, 'ঢাকার বাতাসে বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ নামের অতি সূক্ষ্ণ পদার্থ স্বাভাবিকের চেয়েও ৫০০ গুণ বেশি ভেসে বেড়াচ্ছে। এই অবনমন দিন দিন বাড়ছেই। ফলে, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক বলেই প্রতীয়মান হয়।
স্মর্তব্য, রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ সক্রান্ত উদ্বেগ বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। এর আগে এমনটিও আলোচনায় এসেছিল যে, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের গবেষণায় উঠে এসেছিল, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী বলেও তথ্য উঠে এসেছিল। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে নানা সময়ে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণমুক্ত করতেও যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।
সর্বোপরি বলতে চাই, বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি এটাও জানা গিয়েছিল। ফলে বায়ুর মানের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। এছাড়া ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও এর আগে উঠে এসেছে। ফলে, ঢাকার বাতাস ঝুঁকিপূর্ণ- এটি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।