বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গতকারণেই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জের বিষয়। আর সুস্বাস্থ্য, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেই যদি সংকট থাকে তবে কতটা উদ্বেগজনক তা সহজেই অনুমেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে ৯৩ শতাংশ প্রাণ রসায়নবিদের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, দেশে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক কাজের সুযোগ না দেওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে। ফলে, এই পরিস্থিতি এড়ানো যাবে না। ৯৩ শতাংশ প্রাণ রসায়নবিদের ঘাটতিকে সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বলা দরকার, প্রাণ রসায়নবিদরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কিত দিক, জিনের বহিঃপ্রকাশসহ নানা কিছু পরিচালনা এবং পরীক্ষাগারের কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। যদি প্রাণ রসায়নবিদদের ঘাটতি ৯৩ শতাংশ হয় তবে তা ভীতিকর। সার্বিকভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই, এর সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। তথ্য মতে, দেশজুড়ে ৬৩৯টি সরকারি হাসপাতাল, পাঁচ হাজার ৫৭৭টি বেসরকারি হাসপাতাল, ১০ হাজার ৭২৭টি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র এবং ১৪০টি বস্নাড ব্যাংক রয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কোনো সরকারি হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে একজনও প্রাণ রসায়নবিদ নেই! জানা যাচ্ছে, প্রাণ রসায়নবিদদের হয়ে রোগ নির্ণয়ের কাজ করেন টেকনিশিয়ানরা। এটা খুবই উদ্বেগজনক। রোগীর জীবন নিয়ে তামাশার শামিল। ফলে, এই পরিস্থিতির নিরসন জরুরি।
এটাও জানা যায়, দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ২০ হাজার প্রাণ রসায়নবিদ দরকার। অথচ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বস্নাড ব্যাংকগুলোয় রোগ নির্ণয়ে কাজ করেন মাত্র এক হাজার ৪০০ জন প্রাণরসায়নবিদ। আর এই ৯৩ শতাংশ প্রাণরসায়নবিদের ঘাটতি নিয়ে চলছে দেশের হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলো। সংশ্লিষ্টরা এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এমনিতেই চিকিৎসা ও চিকিৎসাসংক্রান্ত ব্যয় নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ, চিকিৎসার নামে প্রতারণা, ডিগ্রিবিহীন চিকিৎসক সেজে অর্থ আয়সহ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে নানা সময়ে। তাই সার্বিক বিষয় আমলে নিতে হবে। প্রাণ রসায়নবিদের সংকট দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের চিকিৎসা খাতে নানা সংকট বিদ্যমান। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামও অপ্রতুল। আবার যদি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রাণ রসায়নবিদের ঘাটতি থাকে তবে তা সামগ্রিকভাবেই হতাশাজনক। এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নীতিনির্ধারকদের অজ্ঞতার কারণে 'স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনে' প্রাণ রসায়নবিদদের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে। আর চিকিৎসকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে- এই আলোচনাও উঠে আসছে। রোগ নির্ণয়ের কিছু কাজ আছে, সেগুলো শুধু প্রাণ রসায়নবিদরা করতে পারেন। তাই, এই বিষয়গুলোকে কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। বরং এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
সর্বোপরি, যত দ্রম্নত সম্ভব প্রাণরসায়নবিদদের ঘাটতি দূরীকরণে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একইসঙ্গে দেশের চিকিৎসা খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। জনসাধারণের সামর্থ্যের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় যেন সমন্বয় করা যায়- সেই দিক আমলে নিয়েও কাজ করতে হবে। দেশের অনেক পরিবার শুধু চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতেই দরিদ্র হয়ে যায়- এমন খবরও নানা সময় উঠে এসেছে। উলিস্নখিত চিত্র হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর সঙ্গে চরম তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং সার্বিকভাবে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।