রাজধানী ঢাকার ভয়াবহ যানজট জনজীবনকে কতটা বিপর্যস্ত করে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতি বছর রমজানে রাজধানী ঢাকার ভয়াবহ যানজটের অভিজ্ঞতাও তিক্ত। জানা যায়, এবারে সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার কাজে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা ও রিজার্ভ পুলিশকে যুক্ত করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতার জন্য মাঠে থাকছে শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া, সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ নতুন কৌশল। ফলে, এসব উদ্যোগের কারণে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, যানজটের অসহনীয় ভোগান্তি নগরবাসীর পিছু ছাড়েনি- যা উদ্বেগের।
তথ্য মতে, রোববার প্রথম রোজার দিনেই নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা যেন পুরোপুরি ভেঙে পড়ে! বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে ঢাকার প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যা সামলাতে ট্রাফিক ও থানা পুলিশের পাশাপাশি সহযোগী সবাইকে গলদঘর্ম প্রচেষ্টা চালিয়েও চরমভাবে ব্যর্থ হতে হয়েছে। আরও লক্ষ্য করার বিষয় হলো, বাণিজ্যিক এলাকা ও অফিসপাড়ায় বিকাল থেকে শত শত গাড়ি তীব্র যানজটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকে। ফলে ঘরমুখো যাত্রী সাধারণকে রাস্তায় ইফতার করতে হয়- যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাহলে, একগুচ্ছ উদ্যোগ এবং যানজট স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হলো তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে হবে।
যদিও পর্যবেক্ষকরা নগরজুড়ে অসহনীয় এই যানজটের জন্য ট্রাফিক পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাব ও চালকদের বেপরোয়া আচরণ, সড়কে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তার একাংশ দখল করে হকারদের রাজত্ব ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকে দায়ী করছে। কিন্তু বিবেচনায় রাখা দরকার, পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। তারা সড়ক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনাকেই দুষছেন। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, যুগের পর যুগ রমজানে যানজটের ভোগান্তিতে নগরজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও তা নিরসনে পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতি বছর রমজানের শুরুতে এলোমেলো কিছু ছক তৈরি করে যানজট নিরসনের চেষ্টা করে জনগণকে উল্টো ভোগান্তিতে ফেলা হয়।
আমরা মনে করি, আলোচ্য বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। শুধু রমজান মাস বা ঈদ পূজা পার্বণ নয়, বছরজুড়েই যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তাই যানজটের ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বছর বছর রমজানে যানজটের ভোগান্তিতে নগরজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে- এটাকে কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। উলেস্নখ্য,
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলছেন- সড়কে গাড়ির চাপ সব সময়ই থাকে। কিন্তু রমজানে স্বল্প সময়ের মধ্যে অফিস আদালত ছুটি হওয়ার কারণে এই চাপ অনেক বেড়ে যায়। মানুষের কাজের প্রয়োজনে রাস্তায় যেতে হয় তাই প্রথমত পলিসি প্রণয়নে এ বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সর্বোপরি ভয়াবহ যানজট এবং নগরবাসীর ভোগান্তি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানে রাজধানীতে যানজটের বড় একটি কারণ যথাযথ পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা। মূলত পার্কিং সংকটকে পুঁজি করেই বিপণি বিতানের আশপাশে নিয়ম ভাঙার এক ধরনের উৎসব চলে। এই বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। রমজান মাস এলে জনভোগান্তি আরও চরমে উঠবে- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যানজট নিরসন ও জনভোগান্তি লাঘবে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।