আজ তোমাদের জন্য সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো
তৃতীয় অধ্যায়
সৃজনশীল অনুশীলন
১। জনাব শ্যামল মিত্র একজন সংসদ সদস্য। তিনি তার এলাকায় ইভ টিজিং সমস্যা সমাধানের জন্য সংসদে একটি বিল উত্থাপন করলে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। জনাব অর্ক বড়ুয়া 'ক' দেশের উচ্চ আদালতের প্রধান। তিনি একটি মামলায় অপরাধীর সাজা নির্ধারণের সময় প্রচলিত আইনের সঙ্গে মিল না পেয়ে তার প্রজ্ঞা ও বিচার-বুদ্ধির উপর ভিত্তি করে সাজা নির্ধারণ করেন।
\হ
ক) 'কমেনটরিজ অন দ্যা লজ অব ইংল্যান্ড' গ্রন্থটি কার?
খ) আন্তর্জাতিক আইন কী? ব্যাখ্যা করো।
গ) জনাব শ্যামল মিত্র যেখানে বিল উত্থাপন করে তা আইনের কোন ধরনের উৎস? ব্যাখ্যা করো।
ঘ) জনাব অর্ক বড়ুয়ার বিচারিক সিদ্ধান্ত প্রদান পদ্ধতিটি আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস- বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ক) 'কমেনটরিজ অন দ্যা লজ অব ইংল্যান্ড' গ্রন্থটি বস্নাকস্টোনের।
খ) সাধারণত আন্তর্জাতিক আইন বলতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট আইন, যা এক রাষ্ট্র বা জাতির সঙ্গে অন্য রাষ্ট্র বা জাতির সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক রক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়, তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। আন্তর্জাতিক আইন কোনো একক রাষ্ট্রের সৃষ্টি নয়। এ আইন বিভিন্ন রাষ্ট্রের ঐকমত্য এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং তা প্রত্যেক রাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায়ের জন্য সৃষ্ট। প্রত্যেক রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে চলতে দায়বদ্ধ।
গ) আইনের অনেকগুলো উৎস আছে। উদ্দীপকে জনাব শ্যামল মিত্র যেখানে বিল উত্থাপন করে তা আইনের প্রধান উৎস আইনসভা। কেননা আমরা জানি, আধুনিককালে আইনের শ্রেষ্ঠতম এবং বৃহত্তম উৎস হচ্ছে আইনসভা।
আইনসভা জনমতের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং পুরাতন আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করে তোলে। প্রত্যেক রাষ্ট্রের আইন পরিষদ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং প্রয়োজনে আইনের রদবদল ও সংশোধন করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভার অপ্রতিহত ক্ষমতা রয়েছে। তার প্রভাব সর্বত্র বিদ্যমান। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভা জনমতের প্রতিনিধিত্ব করে।
উদ্দীপকের শ্যামল মিত্রের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, তার এলাকার ইভ টিজিং সমস্যা সমাধানের জন্য সংসদে তথা আইনসভায় বিল উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
ঘ) জনাব অর্ক বড়ুয়ার বিধান বিচারিক সিদ্ধান্ত প্রদান পদ্ধতিটি আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কেননা আদালতে উত্থাপিত মামলার বিচার করার জন্য প্রচলিত আইন অস্পষ্ট হলে বিচারকরা তাদের প্রজ্ঞা ও বিচার-বুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে ওই আইনের ব্যাখ্যা দেন এবং উক্ত মামলার রায় দেন।
পরবর্তীকালে অন্যান্য বিচারকরা সেসব রায় অনুসরণ করে বিচার করেন। এভাবে বিচারকের রায় আইনে পরিণত হয়। বিচারকের রায় আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উদ্দীপকে জনাব অর্ক বড়ুয়ার ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই, তিনি একটি দেশের উচ্চ আদালতের প্রধান। একটি মামলায় অপরাধীর সাজা নির্ধারণের সময় প্রচলিত আইনের সঙ্গে মিল না পেয়ে তিনি তার প্রজ্ঞা ও বিচার-বুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে সাজা নির্ধারণ করেন। তার এই কাজের সঙ্গে আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বিচারকের রায়ের সাদৃশ্য রয়েছে।
তাই বলা যায়, অর্ক বড়ুয়ার বিধান বিচারিক সিদ্ধান্ত প্রদান পদ্ধতিটি আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
চতুর্থ অধ্যায়
১। দুটি রাষ্ট্রের সরকারের ক্ষমতা ধারা :
ক) উত্তরাধিকার সূত্রে গঠিত সরকার ব্যবস্থার নাম কী?
খ) পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কী? ব্যাখ্যা করো।
গ) 'ক' রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ) 'খ' রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থায় জনমতের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়- উক্তিটির পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করো।
উত্তর :
ক) উত্তরাধিকার সূত্রে গঠিত সরকার ব্যবস্থার নাম হলো 'রাজতন্ত্র।'
খ) পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বলতে সেই রাষ্ট্রকে বোঝায়, যেখানে সম্পত্তির উপর নাগরিকদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকার করা হয়। এ সরকার ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ (ভূমি, শ্রম, মূলধন ও ব্যবস্থাপনা) ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে। এর উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎপাদন ও সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রে নাগরিকরা সম্পদের মালিকানা ও ভোগের ক্ষেত্রে স্বাধীন।
গ) 'ক' রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থা একটি গণতান্ত্রিক ও গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ব্যবস্থা, যেখানে সরকারপ্রধান একটি নির্বাহী শাখার নেতৃত্ব দেয় যা আইনসভা বা বিধানসভা বা সংসদসভা থেকে আলাদা হয়ে থাকে। সরকারের এই প্রধান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রেরও প্রধান হয়ে থাকেন, যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচিত হন।
রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার বলতে সেই সরকারকে বোঝায় যেখানে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিকট দায়ী থাকে না। রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা আইনসভার সদস্য নন। মন্ত্রীরা তাদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট দায়ী থাকেন। রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির ওপর মন্ত্রীদের কার্যকাল নির্ভর করে। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই প্রকৃত শাসক ও সরকারপ্রধান। তিনি কোনো কাজে মন্ত্রীদের পরামর্শ গ্রহণ করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন। ছকের 'ক' রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থাটিও পাঠ্যবইয়ের রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সুতরাং বলা যায়, 'ক' রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি শাসিত।