বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: যে বোমা পাল্টে দিতে পারে যুদ্ধের সমীকরণ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ জুন ২০২৫, ১৭:৫৬
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: যে বোমা পাল্টে দিতে পারে যুদ্ধের সমীকরণ
ফাইল ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা এখন নতুন মাত্রা নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে, এবং এই পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট অস্ত্রের সম্ভাবনা যুদ্ধের সমীকরণকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই নিবন্ধে আমরা সেই সম্ভাব্য 'গেম-চেঞ্জার' বোমা নিয়ে আলোচনা করব।

ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তাদের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ভেদ করার ক্ষমতা। ইরান তার পারমাণবিক স্থাপনা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবকাঠামো মাটির গভীরে নির্মাণ করেছে, যা ঐতিহ্যবাহী বোমা দিয়ে ধ্বংস করা কঠিন। এখানেই ইসরায়েলের হাতে থাকা "GBU-72 Advanced 5K Penetrator" বোমার গুরুত্ব চলে আসে।

GBU-72: এক বিধ্বংসী ক্ষমতা প্রায় ২,২৬৮ কিলোগ্রাম (৫,০০০ পাউন্ড) ওজনের একটি উন্নত বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা, যা ইসরায়েল সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করেছে বলে ধারণা করা হয়।

গভীর অনুপ্রবেশ ক্ষমতা: এটি প্রচলিত বাঙ্কার-বাস্টিং বোমার চেয়েও বেশি গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম। এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে এটি শক্তিশালী কংক্রিট এবং ইস্পাতের একাধিক স্তর ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

নির্ভুলতা: জিপিএস গাইডেড হওয়ায় এর লক্ষ্যভেদের নির্ভুলতা অত্যন্ত বেশি, যা ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের জন্য অত্যাবশ্যক।

ব্যাপক ধ্বংসাত্মক শক্তি: একবার লক্ষ্যবস্তুতে প্রবেশ করার পর এর বিস্ফোরক শক্তি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে সক্ষম, যা ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর করে দিতে পারে।

যদি ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে GBU-72 বোমা ইসরায়েলের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা নিয়ে আসতে পারে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির হুমকি: ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মাটির গভীরে সুরক্ষিত। GBU-72 ব্যবহার করে ইসরায়েল এই স্থাপনাগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিতে সক্ষম।

ইরানের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করা: ইরানের সামরিক বাহিনীর ভূগর্ভস্থ কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে ইসরায়েল তাদের যোগাযোগ এবং অভিযান পরিচালনার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: এই বোমার উপস্থিতি ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে একটি কঠিন বার্তা দিতে পারে যে তাদের সুরক্ষিত স্থাপনাগুলোও নিরাপদ নয়। এটি ইরানের প্রতিরোধের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করতে পারে।

তবে, এর ব্যবহারের ঝুঁকিও রয়েছে:

ব্যাপক প্রতিক্রিয়া: GBU-72 বোমার ব্যবহার ইরানের পক্ষ থেকে আরও বড় এবং অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে, যা আঞ্চলিক সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

আন্তর্জাতিক চাপ: এই ধরনের একটি বিধ্বংসী বোমার ব্যবহার ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করবে।

GBU-72 বোমা নিঃসন্দেহে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। এটি ইসরায়েলকে ইরানের ভূগর্ভস্থ সামরিক সক্ষমতাকে লক্ষ্যবস্তু করার একটি নতুন এবং শক্তিশালী উপায় প্রদান করে।

তবে, এই বোমার ব্যবহার অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এর পরিণতি সুদূরপ্রসারী হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এমনিতেই অত্যন্ত নাজুক, এবং এই ধরনের একটি 'গেম-চেঞ্জার' বোমার উপস্থিতি সেখানে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বোমা কি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের সমীকরণ পাল্টে দেবে, নাকি সংঘাতকে আরও জটিল করবে, তা কেবল সময়ই বলতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে