বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৯ম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি য়
  ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো

৫। 'সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে উদ্যত কালো হাত' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : 'সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে উদ্যত কালো হাত' বলতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সোনালি দিনটিকে ভুলিয়ে দিতে অশুভ শক্তির উদয় ঘটেছে তা বোঝানো হয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পড়ন্ত বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির ডাক দেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই বাঙালি যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যর পর এ দেশে অশুভ শক্তির উদ্ভব ঘটে। তারা মুছে দিতে চায় বাঙালির সোনালি অতীত। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক স্থানটির চিহ্নও তারা বিলুপ্ত করে দিতে চায়। 'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো' কবিতায় কবি এমন তৎপরতা চালানো মানুষের কালো হাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

৬। কবি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প লিখে যাচ্ছেন কেন?

উত্তর : ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আসল ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্ব অনুভব করে কবি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প লিখে যাচ্ছেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের এক ঐতিহাসিক বিকেলে বঙ্গবন্ধু বাংলার স্বাধীনতার ডাক দেন। কিন্তু সেদিনের স্মৃতিগুলো ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য অশুভ শক্তির তৎপরতা লক্ষ্য করেন উদ্বিগ্ন কবি। আগামীদিনের শিশুরা তাহলে আর বাঙালির সেই গর্বের ইতিহাসটি জানতে পারবে না। আগামীদিনের কবিদের সেদিনের কথা জানিয়ে যাওয়ার দায়িত্ববোধ থেকে কবি তাই বিষয়টিকে নিজের কবিতার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখতে চান।

৭। 'শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : 'শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প' বলতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের স্বর্ণালী মুহূর্তের কথাকে বোঝানো হয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বিকেলে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন। কবির ভাষার সেই বিকেলটি ছিল বাংলার মানুষের জন্য 'শ্রেষ্ঠ বিকেল'। কেননা এই বিকেলেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তার ভাষণটিই বাঙালি জাতির জন্য মুক্তির ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল।

৮। 'এই শিশুপার্ক সেদিন ছিল না'- কথাটি কেন বলা হয়েছে?

উত্তর : রেসকোর্স ময়দানের যে স্থানটিতে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে এখন শিশুপার্ক গড়ে উঠেছে- এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে কথাটির মাধ্যমে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তি সেই গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্ত ও স্থানটির স্মৃতি মুছে দিতে চায়। রেসকোর্স ময়দানের যেখানে ৭ মার্চের সমাবেশস্থল ছিল সেখানে এখন শিশুপার্ক স্থাপিত হয়েছে। ইতিহাস মুছে দেওয়ার এই অপতৎপরতার কথা বোঝাতেই কবি কথাটি বলেছেন।

৯। 'শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : 'শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে' বলতে বোঝানো হয়েছে যে, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে করতে বাঙালি যেন স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।

বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে। সেই থেকে আমরা সংগ্রাম করে এসেছি- কখনো ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, কখনো পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগে আমরা পার হয়ে এসেছি ইতিহাসের বহু অধ্যায়। তারই ধারাবাহিকতায় বাঙালির চূড়ান্ত মুক্তির বার্তা নিয়ে হাজির হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। আর সেই মুক্তির বার্তা ধ্বনিত হয় বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ৭ মার্চের পড়ন্ত বিকেলে। স্বাধীনতাযুদ্ধের ঠিক আগের এই সোনালি মুহূর্তটি এসেছিল শত বছরের শত সংগ্রামের পর।

১০। 'সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পর থেকে 'স্বাধীনতা' শব্দটি বাঙালির জন্য ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে- এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে কথাটির মাধ্যমে।

'স্বাধীনতা' শব্দটি কেবল বুলিমাত্র নয়। এটি একটি অনুভব, মানুষের জন্মগত অধিকার। 'স্বাধীনতা' শব্দটি বাঙালির জন্য আরও অনেক বেশি গুরুত্ববাহী। এ শব্দের সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম ও মুক্তির প্রসঙ্গ জড়িত। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ধ্বনিত হওয়ার পর থেকেই 'স্বাধীনতা' শব্দটি পায় নতুন অর্থ ও ব্যঞ্জনা। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়েই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধু যেন তার ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙালির মাঝে স্বাধীনতার বীজটি বপন করে দিয়েছিলেন।

১১। 'ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : 'ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি'- বলতে রেসকোর্স ময়দানকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। সেই ভাষণে ধ্বনিত হয়েছিল বাঙালির মুক্তির চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা। কবি তাই এ স্থানটিকে ঢাকার হৃদয় মাঠ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু স্মৃতিময় এ স্থানটি এখন খেলনা, বাগান ইত্যাদিতে সজ্জিত। কবি মনের ঢাকার হৃদয় মাঠখানিকে এভাবেই সুকৌশলে ঢেকে দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি।

১২। 'জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকত' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : 'জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকত' বলতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মানুষের ঢল এবং ঐতিহাসিক মঞ্চটি কাব্যিক ব্যঞ্জনা পেয়েছে তা বোঝানো হয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য হাজির হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। কবি মানুষের এমন অভূতপূর্ব সমাবেশকে কল্পনা করেছেন জনসমুদ্রের বাগানরূপে। সেই জনসমুদ্রের একদিকে ছিল বক্তৃতার মঞ্চটি। কবির ভাষায় সেটি যেন সেই জনসমুদ্রের তীর বা সৈকত। সমুদ্রের ঢেউগুলো যেমন সৈকতে এসে আছড়ে পড়ে। তেমনি রেসকোর্স ময়দানের লক্ষ জনতার সমস্ত ব্যাকুলতা ছিল মঞ্চটিকে কেন্দ্র করে।

১৩। 'গণসূর্যের মঞ্চ' বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর : মঞ্চে গণমানুষের প্রাণের নেতার উজ্জ্বল উপস্থিতির বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে আলোচ্য উপমাটির মাধ্যমে।

'গণসূর্য' অর্থ হলো জনতার সূর্য। সূর্য দ্বারা রূপকার্থে জাতীয় নেতাকে বোঝানো হয়েছে। আর সেই অবিসংবাদিত নেতার জন্য তৈরি হয়েছে একটি ঐতিহাসিক মঞ্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন জনগণের নেতা, মঞ্চে দাঁড়ানো অবস্থায় তার তেজিয়ান দু্যতি চারদিকে বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। তিনি যেন এক গণসূর্য। সেই নেতা যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে, সেটা তো গণসূর্যের মঞ্চ। মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের ভাষণ যে মঞ্চে প্রদান করেছিলেন, সেটিকে 'গণসূর্যের মঞ্চ' বলে অভিহিত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে