মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

লড়াইয়ে তিনগুণ বেশি মূল্যের যুদ্ধবিমান: কেনো পারল না ভারত

যাযাদি ডেস্ক
  ১২ মে ২০২৫, ২০:২৩
লড়াইয়ে তিনগুণ বেশি মূল্যের যুদ্ধবিমান: কেনো পারল না ভারত
জে-১০সি ও রাফায়েল যুদ্ধবিমান

কয়েকদিনের যুদ্ধ পরিস্থিতির পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। মাত্র চারদিনের এই সংঘাতময় পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে দশকের পর দশক ধরে চলে আশা সামরিক মতবাদের।

পরাশক্তি ও পশ্চিমা বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্বের বয়ানকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া শক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তির বিচারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে চীনের উদ্ভাবনকে।

৭ মে রাত ১টা বেজে ৫ মিনিট থেকে দেড়টার মধ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে অভিযানে নামে ভারত। তবে এই সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তান।

দেশটির দাবি, তাদের বিমানবাহিনী (পিএএফ) আধুনিক বিমান যুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে পাল্টা আক্রমণ চালানোর মাধ্যমে।

বিশ্বব্যাপী যেকোনো বিমান বাহিনীর জন্য প্রথমবারের মতো ফরাসি-নির্মিত ৪.৫ প্রজন্মের ১২০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বহুমুখী যুদ্ধবিমান ডাসল্ট রাফায়েল সফলভাবে ভূপাতিত করার মাধ্যমে সংঘাতে প্রথম নজিরবিহীন ক্ষতি সাধন করে পিএএফ। রাফায়েল ধ্বংসে ব্যবহার করা হয় চীনের তৈরি ৪.৫ প্রজন্মের জে-১০সি যুদ্ধবিমান।

এই ফাইটার জেটটি রাফায়েলের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কম মূল্যের (৪০ মিলিয়ন ডলার)।

দামে এতো কম হলেও কৌশলগত দিক দিয়ে যে জে-১০সি অনেকটা এগিয়ে সেটি প্রমাণ করেছে পাকিস্তানকে সফলতা এনে দেয়ার মধ্য দিয়ে।

এটি সামরিক বিমান প্রযুক্তির বিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তাই কৌশলগতভাবে পাকিস্তানের বিজয় হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।

কম মূল্যের এবং চীনা প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানের এই সফলতা বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা সম্প্রদায়ের জন্যও একটি স্পষ্ট বার্তা যে শ্রেষ্ঠত্বের আবরণ আর কেবল পশ্চিমা মহাকাশ শক্তির ওপর নির্ভর করতে পারে না।

এমনটি প্রমাণিত হওয়ার পথেও রয়েছে। রাফায়েল ভূপাতিত হওয়ার পরের দিন এর নির্মাতা কোম্পানি ডাসল্ট এভিয়েশনের শেয়ার ৬ শতাংশ কমে যায়। দিনের মধ্যেই এত বড় পতন অত্যন্ত অস্বাভাবিক যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকে প্রতিফলিত করে।

বিপরীতে, জে-১০সি-এর নির্মাতা এভিয়েশন ইনডাস্ট্রি করপোরেশন অব চায়না (এভিআইসি)-এর শেয়ার শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে নজিরবিহীনভাবে ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বাজারের প্রতিক্রিয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থার একটি শক্তিশালী অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি কল্পনাতীত বিষয় যে প্রথমবারের মতো চীনা প্ল্যাটফর্মে তৈরি যুদ্ধাস্ত্র বাস্তব-বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে একটি পশ্চিমা ফ্ল্যাগশিপ ফাইটারকে নিরপেক্ষ করেছে।

এর অর্থ পশ্চিমা বিমানের শ্রেষ্ঠত্ব দাবির প্রসঙ্গটি বেশ দুর্বল। এর আরেকটি অর্থ হলো চীনের বিমান শক্তি এখন বিশ্ব মঞ্চে যুদ্ধ-প্রমাণিত।

শুধু যুদ্ধবিমানেই সীমাবদ্ধ নয়, সব থেকে অবাক করার বিষয় ২০ লক্ষ ডলার মূল্যের রাফালের উন্নত মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্র কৌশলগতভাবে ১ লক্ষ ডলার মূল্যের চীনা পিএল-১৫ দ্বারা পরাজিত হয়েছে।

এ থেকে বোঝা যায়, অনেক যুদ্ধে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের শ্রেষ্ঠত্বের বয়ান বা গোপন কৌশলের চেয়ে ‘প্রথমে লক-প্রথমে-কিল’ মতবাদ বেশি নির্ধারক।

রাফাল ভূপাতিতকরণের মাধ্যমে পিএএফের মনোযোগ এই শ্রেষ্ঠত্ব ও কৌশলের ব্যারিকেডে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটি সমগ্র কিল চেইনের কার্যকারিতার দিকে সরে যায়। যেমন—রাডার, ডেটা লিঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র যা আধুনিক বিমান যুদ্ধে এক অনন্য অবস্থায় নিয়ে গেছে পাক বাহিনীকে।

এর মাধ্যমে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। সেটি হলো—ভারতের ‘বিমান শক্তি শ্রেয়’ মতবাদের ত্রুটিগুলো প্রকাশ পেয়েছে। একটি যুদ্ধাস্ত্রের প্রতি ইউনিটে ১২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ হওয়ার পর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা তার অক্ষমতায় প্রমাণ করে।

ফলে এখন একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এই ঘটনা কি ভারতীয় বিমান বাহিনীকে (আইএএফ) মানবহীন যুদ্ধ ব্যবস্থার দিকে পরিচালিত করবে? স্পষ্টতই, এই পরাজয়ের পর আইএএফের কাঠামো আধুনিক সমকক্ষের মানদণ্ডের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে।

জে-১০সি দ্বারা রাফায়েল ভূপাতিত, ৩টি বিষয়কে স্পষ্ট করেছে। রাফায়েল, ইউরোফাইটার টাইফুন এবং এফ-১৬-এর মতো পশ্চিমা জেটের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিযোগী হিসেবে জে-১০সিকে বৈধতা দিয়েছে; উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফাইটার অধিগ্রহণের পছন্দকে পর্যালোচনায় ফেলেছে এবং চীনা প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়েছে।

রাফায়েলের সাথে জে-১০সির মুখোমুখি হওয়া থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা স্পষ্ট। তা হলো—কিল চেইনে শ্রেষ্ঠত্ব। এই শ্রেষ্ঠত্ব কেবল যুদ্ধবিমানের মূল্য কিংবা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতির অহংকারের পরিবর্তে-বিজয়কে নির্ধারণ করে।

এই উচ্চস্তরের লড়াইয়ের মধ্যে তিনটি বিষয় উপেক্ষা করা যায় না। তা হলো—পাকিস্তান বিমানবাহিনীর (পিএএফ) পাইলটদের ব্যতিক্রমী প্রশিক্ষণ; তাদের কৌশলগত সূক্ষ্মতা এবং আধুনিক আকাশ যুদ্ধে তাদের দক্ষতা।

পিএএফ পাইলটরা যুদ্ধের অন্তর্দৃষ্টি, বহু-ডোমেন সমন্বয়, নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক যুদ্ধ উচ্চ কৌশলের সঙ্গে নির্ভুলভাবে একত্রিত করেছিলেন।

নিশ্চিতভাবেই, এটি কেবল উন্নত যন্ত্রাংশের ওপর যন্ত্রাংশের বিজয় নয়; এটি যুদ্ধক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ও নিজেদের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার বিজয় যা দক্ষতা, দ্বিগুণ বিচার এবং পরিস্থিতিগত সচেতনতার মাধ্যমে পাকিস্তানের পক্ষে ভারসাম্য বজায় রেখেছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে