তৃতীয় অধ্যায়

ঘ) কামাল দেশীয় সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে না পারার কারণ হলো সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। পরিবর্তন সংস্কৃতির ধর্ম। এ কারণে সাংস্কৃতিক আদর্শ বজায় থাকা তথা দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেমনটি উদ্দীপকের কামালের ক্ষেত্রে ঘটেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। যেমন- পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা, চিকিৎসা, সংগীত, দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, ফ্যাশন ইত্যাদি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে পরিবর্তন হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বায়নের যুগ মানেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতির ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতার যুগ। ফলে এক দেশের মানুষ উন্নত শিক্ষার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। সেখানে যাওয়ার পর সে ওই দেশের সংস্কৃতি আত্তীকরণের চেষ্টা করছে। ফলে দেশীয় সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সঙ্গে অন্য সংস্কৃতি গ্রহণের ফলে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত কামাল সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের জন্য দেশীয় সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারছে না।

২।

দৃশ্যকল্প-১ : লিপির মা-চাচিরা শাড়ি পরলেও সে বিয়ের পর শাড়ি না পরে সালোয়ার-কামিজ পরছে। চাচাতো ভাইবোনদের সঙ্গে একত্রে বড় হলেও লিপি তার স্বামী-সন্তান নিয়ে এককভাবে থাকছে।

দৃশ্যকল্প-২ : চরশোলাদি গ্রামের মানুষ এখন মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বের সব সংবাদ দ্রম্নত সংগ্রহ করে। এর ফলে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়েছে।

ক) সামাজিক উন্নয়ন কী?

খ) বাংলাকে সঙ্গীতের দেশ বলা হয় কেন?

গ) দৃশ্যকল্প-১ : এ সংস্কৃতির যে বিষয়টির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে- তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ) দৃশ্যকল্প-২ : এ সংস্কৃতির পরিবর্তনের যে কারণটি নির্দেশ করেছে সেটাই কি একমাত্র কারণ? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর :

ক) সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাবে সমাজের ক্রমেই পরিপূর্ণতা লাভ করাই হলো সামাজিক উন্নয়ন।

খ) বাংলাদেশের মাঠে-প্রান্তরে, আধ্যাত্মপনায়, সাহিত্য-শিল্পের আলোচনায়, উৎসবে, পালা-পার্বণে, ধর্মে সঙ্গীতের ব্যবহার ও চর্চা হয়ে থাকে বলে বাংলাদেশ চিরকালই সঙ্গীতের দেশ।

বাংলাদেশের কৃষক হাল চাষ করতে করতে, মাঝি নৌকা বাইতে বাইতে গলা ছেড়ে গান গাইতে থাকে। আমাদের আদি গ্রন্থ চর্যাপদ ও বৈষ্ণব পদাবলিও মূলত গানের সংকলন। মুর্শিদি, পালা, বারমাস্যা, ভাওয়াইয়া, গম্ভীরা ইত্যাদি বহু লোকগান ছড়িয়ে আছে সারা বাংলায়। তাই বাংলাকে সঙ্গীতের দেশ বলা হয়।

গ) উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের জীবনাচরণ বা সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পাশ্চাত্য, ধর্মীয় ও লোক সংস্কৃতির প্রভাবে পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, সঙ্গীত, কলা, ফ্যাশন ইতাদিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে।

উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ দেখা যায়, লিপির মা-চাচিরা শাড়ি পরলেও সে বিয়ের পর শাড়ি না পরে সালোয়ার-কামিজ পরছে। চাচাতো ভাইবোনদের সঙ্গে একত্রে বড় হলেও লিপি তার স্বামী-সন্তান নিয়ে একক পরিবার গঠন করেছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে তার মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কারণে আগের যৌথ পরিবার ভেঙে এখন গ্রাম ও শহর উভয় স্থানে একক পরিবার গড়ে উঠছে। লিপির পোশাক পরিচ্ছদে পরিবর্তন ও একক পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

মূলত বিশ্বায়নের প্রভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এ ধরনের বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ঘ) উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এ সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে প্রযুক্তিগত কারণটি নির্দেশ করেছে তবে এটিই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের একমাত্র কারণ নয়। পরিবর্তন সংস্কৃতির ধর্ম। সংস্কৃতির এই পরিবর্তনশীলতার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন- সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি, সাংস্কৃতায়ন, সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ, সাংস্কৃতিক আদর্শ, প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের প্রভাব। এসব কারণে সংস্কৃতির পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটে। উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ চরশোলাদি গ্রামের মানুষ এখন মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বের সব সংবাদ দ্রম্নত সংগ্রহ করে যা মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। এই প্রযুক্তিগত কারণটিই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের একমাত্র কারণ নয়। দুটি সমাজের সংস্কৃতির সংমিশ্রণ, অন্য সংস্কৃতির উপাদানকে নিজ সংস্কৃতিতে আত্মস্থ করার মাধ্যমেও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটে। এছাড়া নতুন বা অন্য সংস্কৃতিকে আত্তীকরণ, এক সংস্কৃতি থেকে অন্য সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে অনেক উন্নত ও সহজ করেছে। যা সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শুধু প্রযুক্তিগত কারণ নয় বরং উপরে আলোচিত বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ প্রভাবে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটে।

৩। "ক" দেশের স্থাপত্য রীতি ও রান্না কৌশল প্রসিদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে "ক" দেশের সঙ্গে "খ" যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ফলে "ক" দেশের অনুকরণে রান্না ও স্থাপত্যশৈলী "খ" দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে।

ক) চন্ডীমঙ্গল কে রচনা করেন?

খ) প্রযুক্তি কীভাবে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটায়?

গ) উদ্দীপকের সংস্কৃতির পরিবর্তনশীলতার কোন কারণটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ) শুধু ওই কারণেই কি সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে? মতামত দাও।

উত্তর :

ক) মুকুন্দরাম চন্ডীমঙ্গল রচনা করেন।

খ) আধুনিক প্রযুক্তি বা বস্তুগত সংস্কৃতির দ্রম্নত পরিবর্তন ও উন্নয়ন সমাজে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে গোটা বিশ্ব এখন একটি বিশ্বপলস্নীতে রূপান্তরিত হয়েছে। যার ফলে যোগাযোগ প্রক্রিয়া অনেক উন্নত হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এক সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসছে। অনুন্নত সংস্কৃতি দ্রম্নত উন্নত সংস্কৃতির উপাদান গ্রহণ করছে। এভাবে প্রযুক্তি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়