সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা

২য় পরিচ্ছেদ

ভাষা ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য মনের ভাব প্রকাশ করা। মনের ভাব প্রকাশ করতে মানুষ শব্দ ও শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে। এগুলোর অর্থই মূলত বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে সংযোগ ঘটায়। ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় শব্দের অর্থ কখনো মুখ্য হয়, কখনো গৌণ হয়, কখনো প্রসারিত হয়, কখনো সংকুচিত হয়, কখনো অর্থের উন্নতি ঘটে, কখনো অবনতি ঘটে। আবার শব্দ কখনো কখনো সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে।

শব্দের একাধিক অর্থ হতে পারে ধরে নিয়েই প্রাচ্য কি পাশ্চাত্য উভয় বাগার্থশাস্ত্রে শব্দের আরেক ধরনের অর্থ বা বৃত্তি স্বীকৃত হয়েছে। ভারতীয় শব্দশাস্ত্রে সেটির নাম লক্ষণা। এই লক্ষণা অবশ্যই একটি গৌণ অর্থ, যেমন, কাউকে অবজ্ঞা করে বলা 'তুমি একটা 'গোরু' বা 'গাধার মতো কথা বোলো না।' এই দুটি বাক্যে 'গোরু' বা 'গাধা'র মূল অর্থ রক্ষিত হয়নি, বরং একটি 'লক্ষিত' বা 'অভিপ্রেত' অর্থ শব্দ দুটিতে বক্তার ইচ্ছায় আরোপিত হয়েছে। লক্ষণার ধর্মই হলো উপলক্ষ অনুযায়ী মূল অর্থ বা অভিধাকে আড়াল করে নিজেকে সামনে নিয়ে আসা। এতে অভিধার বাইরে একটি গৌণ অর্থ এসে অভিধাকে স্থানচু্যত করছে।

একটি শব্দের নানা রকম অর্থ থাকতে পারে। বাক্যে প্রয়োগের ওপর শব্দের অর্থ নির্ভর করে। উদাহরণ হিসেবে সুকুমার রায়ের 'পাকাপাকি' ছড়াটির কথা বলা যায়। ছড়াটি পড়ার সময়ে 'পাকা' শব্দটি কত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা খেয়াল করতে হবে। 'পাকাপাকি' ছড়ার প্রথম বাক্যটি হলো 'আম পাকে বৈশাখে, কুল পাকে ফাগুনে'। এখানে 'পাকা' শব্দের অর্থ দাঁড়িয়েছে 'পরিপক্ব'। এভাবে পরবর্তী বাক্যে ব্যবহৃত 'পাকা' শব্দের অর্থ হলো- শক্ত, স্থায়ী, পরিপূর্ণ, দক্ষ, সাদা, পটু, পরিপক্ব, পরিণত ইত্যাদি। এসব অর্থ আবার মুখ্য অর্থ ও গৌণ অর্থ।

\হকোনো শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে যে ধারণা জেগে ওঠে, তাকে ওই শব্দের মুখ্য অর্থ বলে। শব্দের মুখ্য অর্থের পাশাপাশি এক বা একাধিক গৌণ অর্থ থাকতে পারে। নিচে 'অঙ্ক' শব্দের মুখ্য অর্থ ও একাধিক গৌণ অর্থের প্রয়োগ দেখানো হলো।

প্রশ্ন :বাক্যে প্রয়োগের ওপর শব্দের কী নির্ভর করে?

উত্তর :বাক্যে প্রয়োগের ওপর শব্দের অর্থ নির্ভর করে।

প্রশ্ন :'পাকাপাকি' ছড়াটি কার লেখা?

উত্তর :'পাকাপাকি' ছড়াটি সুকুমার রায়ের লেখা।

প্রশ্ন :সুকুমার রায়ের বিখ্যাত ছড়া গ্রন্থের নাম কী?

উত্তর :সুকুমার রায়ের বিখ্যাত ছড়া গ্রন্থের নাম 'আবোল তাবোল'।

প্রশ্ন : 'পাকাপাকি' ছড়াটি সুকুমার রায়ের কোন বই থেকে নেওয়া হয়েছে?

উত্তর : 'পাকাপাকি' ছড়াটি সুকুমার রায়ের খাই খাই নামের ছড়ার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন :আম পাকে কোন মাসে?

উত্তর :আম পাকে বৈশাখ মাসে।

প্রশ্ন : কাঁচা ইট কীভাবে পাকা হয়?

উত্তর : কাঁচা ইট আগুনে পোড়ানোর পর পাকা হয়।

প্রশ্ন : কথা যার পাকা নয়, কাজে সে কেমন?

উত্তর : কথা যার পাকা নয়, কাজে সে ঠনঠন।

প্রশ্ন : রাঁধুনি পাকে বসিয়ে কোথায় পাক দেয়?

উত্তর : রাঁধুনি পাকে বসিয়ে হাঁড়িতে পাক দেয়।

প্রশ্ন : অল্প বয়সে বেশি বয়সের মতো আচরণ করলে তাকে কী বলে?

উত্তর : অল্প বয়সে বেশি বয়সের মতো আচরণ করলে তাকে জ্যাঠামি বলে।

প্রশ্ন : 'পাকাপাকি' ছড়ায় কিলানো অর্থ কী?

উত্তর: 'পাকাপাকি' ছড়ায় কিলানো অর্থ খিল বা গোঁজা ঢোকানো।

প্রশ্ন : একটি শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনে যে ছবি বা ধারণা জেগে ওঠে সেটাকে ঐ শব্দের কী বলে?

উত্তর : একটি শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনে যে ছবি বা ধারণা জেগে ওঠে সেটাকে ঐ শব্দের মুখ্য অর্থ বলে।

প্রশ্ন : কোনো শব্দের মুখ্য অর্থের পাশাপাশি এক বা একাধিক অর্থ থাকলে তাকে কী বলে?

উত্তর : কোনো শব্দের মুখ্য অর্থের পাশাপাশি এক বা একাধিক অর্থ থাকলে তাকে ঐ শব্দের গৌণ অর্থ বলে।

প্রশ্ন : 'তার কথা শুনতে ভালো লাগে।' এখানে 'কথা' কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

উত্তর : 'তাঁর কথা শুনতে ভালো লাগে।' এখানে 'কথা' মুখ্য অর্থে মুখের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রশ্ন : 'তিনি কাজ পাগল।' এখানে 'পাগল' শব্দের কী অর্থ প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর : 'তিনি কাজ পাগল।' এখানে 'পাগল' শব্দের গৌণ অর্থ (অনুরাগী অর্থে) প্রকাশ পেয়েছে।

প্রশ্ন : একটা শব্দকে অন্য শব্দ দিয়ে প্রকাশ করার শব্দকে কী বলে?

উত্তর : একটা শব্দকে অন্য শব্দ দিয়ে প্রকাশ করার শব্দকে প্রতিশব্দ বলে।

প্রশ্ন : অগ্নি, অনল, বহ্নি কোন শব্দের প্রতিশব্দ?

উত্তর : অগ্নি, অনল, বহ্নি আগুন শব্দের প্রতিশব্দ।

প্রশ্ন :জগৎ, ভুবন, দুনিয়া, ধরণি কোন শব্দের প্রতিশব্দ?

উত্তর :জগৎ, ভুবন, দুনিয়া, ধরণি 'পথিবী' শব্দের প্রতিশব্দ।

প্রশ্ন : যেসব শব্দ পরস্পর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে সেগুলোকে কী বলে?

উত্তর : যেসব শব্দ পরস্পর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে সেগুলোকে বিপরীত শব্দ বলে।

প্রশ্ন : 'উপস্থিত' শব্দের বিপরীত শব্দ কী?

উত্তর : 'উপস্থিত' শব্দের বিপরীত শব্দ অনুপস্থিত ?

প্রশ্ন : 'জ্ঞানী' এর বিপরীত শব্দ কী?

উত্তর : 'জ্ঞানী' এর বিপরীত শব্দ মূর্খ।

শূন্যস্থান পূরণ

ক. আম পাকে বৈশাখে কুল পাকে থথথথ।

খ. ফলারটি পাকা হয় থথথথ।

গ. কান পাকে ফোড়া পাকে, পেকে করে থথথথ।

ঘ. থথথথ ছেলে বেশি কথা কয় সে।

ঙ. কথা যার পাকা নয়, থথথথ।

চ. একটি শব্দের অনেক রকম থথথথ থাকতে পারে।

ছ. জ্যাঠামিতে পাকা ছেলে বেশি থথথথ কয় সে।

জ. সজোরে পাকালে চোখ ছেলে কাঁদে থথথথ।

ঝ. দুহাতে পাকালে গৌফ তবু নাহি থথথথ সে।

ঞ. একটি শব্দ শোনার সাথে সাথে মনে যে ছবি বা ধারণা জেগে ওঠে, সেটাকে ওই শব্দের থথথথ অর্থ বলে।

ট. কোনো শব্দের মুখ্য অর্থের পাশাপাশি এক বা একাধিক থথথথ অর্থ থাকতে পারে।

ঠ. 'রাস্তার মাথায় যাও' বলতে রাস্তার থথথ বোঝায়।

ড. একটা শব্দকে অন্য শব্দ দিয়ে ও থথথ করা যায়।

ঠ. যেসব শব্দের অর্থ অনুরূপ বা প্রায় সমান, সেসব শব্দকে থথথথ বলে।

উত্তর : ক. ফাগুনে, খ. লুচি দই আহারে, গ. টনটন, ঘ. জ্যাঠামিতে পাকা, ঙ. কাজে তার ঠনঠন, চ. অর্থ, ছ. কথা, জ. বাড়িতে, ঝ. পাকে, ঞ. মুখ্য, ট. গৌণ, ঠ, শেষ প্রান্তকে, ড. প্রকাশ, ঢ. প্রতিশব্দ।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে