প্রশ্ন: নোমানের দেশের বাড়ি বরগুনা জেলায়। সে ঢাকার একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। ছুটিতে সে সবসময় নদীপথে যাতায়াত করে। বাড়ি যাওয়ার পথে সে লক্ষ্য করে অনেক ছোট ছোট নদী, খাল ভরাট হয়ে গেছে। সে চিন্তা করে সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে।
ক. বাংলাদেশের মেঘনা বিধৌত অঞ্চলের বিস্তৃতি কত?
খ. পস্নাবণ সমভূমি কীভাবে গঠিত হয়েছে?
গ. নোমানের দেখা বিষয়টির কারণ বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের উক্ত বিষয়টি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. বাংলাদেশের মেঘনা বিধৌত অঞ্চল হচ্ছে ২৯,৭৮৫ বর্গকিলোমিটার।
খ. অসংখ্য ছোট-বড় নদী বাংলাদেশের সর্বত্র জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। সমতলভূমির উপর দিয়ে এ নদীগুলো প্রবাহিত হওয়ার কারণে বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এভাবে বন্যার সঙ্গে পরিবাহিত মাটি সঞ্চিত হয়ে পস্নাবণ সমভূমি গঠিত হয়েছে।
গ. নোমানের দেখা নদী ও জলাশয় ভরাটের পিছনে বহুবিধ প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশ প্রায় সমগ্র ভূপৃষ্ঠ পলিমাটি দ্বারা গঠিত। পলিমাটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পানির সংস্পর্শে এটি সহজে দ্রবণে পরিণত হয়। বর্ষাকালে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে এবং এর উজানে প্রতিবেশী দেশ চীন, নেপাল, মায়ানমার ও ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অপেক্ষাকৃত অধিক বৃষ্টি হয়। বর্ষাকালে উজান থেকে আসা খরস্রোত নদীগুলো পাহাড়ি পলি বয়ে নিয়ে আসে এবং নদী তীরে ভাঙনের সৃষ্টি করে। ভাটিতে নদীগুলোর স্রোতের গতি কমে যায়। তখন নদীগুলোর তলদেশে পলি সঞ্চিত হয়ে ভরাট ও নাব্য হারায়। দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নদীর দু'ধারে অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়ক, কলকারখানা, আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ ও পয়ঃনিষ্কাশনের নির্গমন এবং নদী অপদখল ও ভরাটকরণের ফলে দ্রম্নত নদী মরে যাচ্ছে, জলাশয় ভরাট হচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক নদীগুলো নিয়ে বিরোধ ও ওইগুলো থেকে পানি প্রত্যাহারের ফলে পানির খরস্রোত ধারা কমে যাওয়ায় নদী মোহনায় পলি সঞ্চিত হয়ে চর জেগে উঠছে।
ঘ. বাংলাদেশের নদীগুলো প্রতিনিয়ত নাব্য হারিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। দ্রম্নত এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই এদেশের নদীগুলো ভরাটের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে :
১. বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত নদীগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করে এদের নাব্য রক্ষা করা।
২. পরিকল্পিত ও পরিবেশ উপযোগী বাঁধ এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা।
৩. অপদখলীয় নদী উদ্ধার, পাহাড়কাটা বন্ধকরণ, কলকারখানার সাথে বাধ্যতামূলকভাবে বর্জ্য পরিশোধন ট্রিটমেন্ট পস্নান্ট নির্মাণের ব্যবস্থা করা।
৪. ভারত, নেপাল ও চীনের সাথে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নদী গঙ্গা, তিস্তা, ব্র?হ্মপুত্র ও ফেনীসহ অন্য নদীগুলোর নাব্যের ভিত্তিতে পানির হিস্যা নিশ্চিত করা।
৫. বিদ্যমান পরিবেশ আইন যুগোপযোগী ও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।
সুতরাং উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উদ্দীপকের উক্ত বিষয় তথা নদী ভরাট প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাসে বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০৩ সেন্টিমিটার।
ক. বাংলাদেশে কোন ধরনের জলবায়ু দেখা যায়?
খ. কোন ঋতুতে কালবৈশাখী ঝড় হয় এবং কেন?
গ. একটি মানচিত্রে উদ্দীপকের দেশটিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের বণ্টন দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকে যে ঋতুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় তার বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত কর।
উত্তর:
ক. বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি সমভাবাপন্ন। এ ধরনের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু নামে পরিচিত।
খ. কালবৈশাখী এক ধরনের স্বল্পস্থায়ী ঝড়, যা কোনো জায়গায় স্বল্প পরিসরে অল্প সময়ব্যাপী বজ্রবিদু্যৎসহ সংঘটিত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত বৈশাখ মাসে সংঘটিত হয় এবং তা মানুষের ব্যাপক ক্ষতি করে বলে একে 'কালবৈশাখী' বলা হয়। সাধারণত সন্ধ্যার পূর্বে এ ঝড় শুরু হয় এবং ঘণ্টাখানেক স্থায়ী হয়। গ্রীষ্মকালে দিবাভাগের কোনো কোনো অঞ্চলে বেশি উত্তপ্ত হওয়ায় নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে প্রবল ঝড়ো বায়ু প্রবাহিত হয়, যা কালবৈশাখী নামে পরিচিত।
গ. মানচিত্রে উদ্দীপকে উলিস্নখিত বাংলাদেশের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের বণ্টন দেখানো হলো :
চিত্র : বাংলাদেশের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত
ঘ. উদ্দীপকে বর্ষা ঋতুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাস (জ্যৈষ্ঠ-কার্তিক) পর্যন্ত বর্ষাকাল, উদ্দীপকে যা উলিস্নখিত হয়েছে। শীত-গ্রীষ্মের মাঝামাঝি বৃষ্টিবহুল সময়কে বর্ষাকাল বলে। বর্ষাকালীন জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
১. তাপমাত্রা : বর্ষাকালে সূর্য বাংলাদেশে লম্বভাবে কিরণ দেয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে অধিক বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে এ সময় অধিক তাপমাত্রা অনুভূত হয় না। এ সময়কার গড় তাপমাত্রা ২৭ক্ক সেলসিয়াস।
২. বায়ুপ্রবাহ : জুন মাসে বাংলাদেশের ওপর সূর্যের অবস্থানের কারণে বায়ুচাপের পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে আগত দক্ষিণ-পশ্চিম অয়ন বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করলে বর্ষাকাল আরম্ভ হয়। দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুতে পরিণত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়।
৩. বৃষ্টিপাত : এ সময় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর জলীয়বাষ্প সঙ্গে নিয়ে আসে। ফলে শৈলোৎক্ষেপ পদ্ধতিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। বছরের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ ভাগ এ সময় হয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়