প্রশ্ন: দৃশ্যকল্প-১ : অনেক দিন বৃষ্টিহীন। হঠাৎ একদিন বিকালে ঈশান কোণে মেঘের ঘনঘটা। প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রবিদু্যৎসহ বৃষ্টিপাত হলো এবং এর স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ২ ঘণ্টা। এই বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম হলো না।
দৃশ্যকল্প-২ : কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশে ঘন কালো মেঘের ঘটা। এভাবে প্রায় ৩/৪ মাস থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে।
ক. বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়?
খ. বাংলাদেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণ কী?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ নির্দেশিত বৃষ্টিপাতের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এবং দৃশ্যকল্প-২ এ জলবায়ুগত যে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তার তুলনামূলক বিবরণ দাও।
উত্তর:
ক. বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
খ. বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয় পাহাড়ে বাধা পেয়ে ওপরে ওঠে এবং ঠান্ডা হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। তাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়ে থাকে।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ নির্দেশিত বৃষ্টিপাত হলো কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে সংঘটিত বৃষ্টি। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে কালবৈশাখী ঝড় হয়ে থাকে। এ ঝড় ও বৃষ্টি গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা। এর পূর্বে শীতে অনেকদিন এ দেশটি বৃষ্টিহীন থাকে। উদ্দীপকে যা উলিস্নখিত হয়েছে। গ্রীষ্মকালে সমুদ্র উপকূল থেকে দেশের অভ্যন্তর ভাগে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন বাংলাদেশের দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু অধিক উত্তাপের প্রভাবে হালকা হয়ে ওপরে ওঠে যায়। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ুর সাথে এ বায়ুর সংঘর্ষের কারণে দৃশ্যকল্প-১ এ নির্দেশিত বৃষ্টিপাতটি সংঘটিত হয়ে থাকে। প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বজ্র বিদু্যৎসহ বৃষ্টি পাত ঘটে, যা সাধারণত বিকেলের দিকে হয় এবং খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না। উদ্দীপকে যেমন ২ ঘণ্টার উলেস্নখ আছে। তবে উদ্দীপকের তথ্য অনুযায়ী মাঝে মাঝে এ বৃষ্টিপাত ও ঝড় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন কালবৈশাখী ঝড়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং দৃশ্যকল্প-২ এ বাংলাদেশের বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের ধরন উলেস্নখ আছে। বাংলাদেশে মার্চ থেকে মে মাস গ্রীষ্মকাল ও জুন থেকে অক্টোবর মাস বর্ষাকাল। সাধারণত তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের ধরনের ওপর নির্ভর করে এই দুই ঋতুর মধ্যে প্রভেদ দেখা দেয়।
তাপমাত্রা : গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এ সময় তাপমাত্রা ২১ক্ক সেলসিয়াস থেকে ৩৪ক্ক সেলসিয়াস হয় এবং গড় তাপমাত্রা ২৮ক্ক সেলসিয়াস। অন্যদিকে বর্ষাকাল তুলনামূলকভাবে কম উষ্ণ থাকে। এ সময় গড় তাপমাত্রা ২৭ক্ক সেলসিয়াস।
বৃষ্টিপাত : গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও তা বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ২০ ভাগ। মূলত কালবৈশাখী ঝড়ের কারণেই এ সময় বৃষ্টিপাত হয়। এ সময়ের গড় বৃষ্টিপাত ৫১ সেন্টিমিটার। বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যা মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ ভাগ।
বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু প্রবাহ অধিক উত্তাপের প্রভাবে উপরে উঠে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ফলে এ সময় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষাকালে বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুতে পরিণত হয়।
বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা কম অনুভূত হয়। আবার গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর কারণে তাপমাত্রা সমভাবাপন্ন থাকে।
প্রশ্ন: মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এর দিক পরিবর্তন হয়। এ বায়ুর কারণে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় আর শীতকাল শুষ্ক থাকে।
ক. মৌসুমি বায়ু কাকে বলে?
খ. শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না কেন?
গ. শীত ও গ্রীষ্মকালে উদ্দীপকের বায়ুপ্রবাহ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত কর।
উত্তর:
ক. ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয় তাকে মৌসুমি বায়ু বলে।
খ. শীতকালে এশিয়ার অভ্যন্তর ভাগ প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে এবং উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয়। স্থলভাগের এ উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মহাসাগরের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয়। স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ বায়ুতে জলীয়বাষ্প থাকে না। এ কারণে শীতকাল বৃষ্টিহীন থাকে।
গ. উদ্দীপকে মৌসুমি বায়ু প্রবাহের কথা বলা হয়েছে। শীত ও গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ নিচে ব্যাখ্যা করা হলো :
শীতকালীন মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ : এ সময় মকরক্রান্তি অঞ্চলে সূর্য খাড়াভাবে পতিত হওয়ায় সে অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এ সময় উত্তর গোলার্ধে সৌরতাপ কম থাকায় শীতল হয়ে মধ্য অক্ষাংশে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে এ উচ্চ চাপ এলাকার বায়ু অপেক্ষাকৃত উষ্ণ সাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে সূর্য কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়ায় সেখানে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এ নিম্নচাপ কেন্দ্রে চাপ অত্যন্ত কম থাকায় দক্ষিণ গোলার্ধের দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে ফেরেলের সূত্রানুযায়ী ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকের মৌসুমি বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হলো :
১. মৌসুমি বায়ু এক প্রকার সাময়িক বায়ু। বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে এটি বিশেষ দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
২. ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এই বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয়।
৩. গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে বিধায় এ সময় বায়ু প্রবাহিত পার্শ্ববর্তী স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। যেমন : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত হয়।
৪. শীতকালে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুতে প্রচুর জলীয়বাষ্প না থাকায় এ সময় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম।
৫. মৌসুমি জলবায়ুর কারণে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যধিক হয়ে থাকে। এর প্রভাবে শীত ও গ্রীষ্মে তাপের তারতম্য পরিলক্ষিত হয় না।
৬. গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু প্রবাহের ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষিকাজে উন্নতি সাধিত হয়েছে। ফলে মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত অঞ্চল ঘনবসতি এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে।
৭. শীত ও গ্রীষ্মকালে বায়ুপ্রবাহ বিপরীতমুখী হয়।
৮. শীতকালীন মৌসুমি বায়ু জলীয়বাষ্প বহন করে না, কিন্তু গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু প্রচুর জলীয়বাষ্প বহন করে।
উলিস্নখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ মৌসুমি বয়ুকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে।