এক বছরের বেশি সময় পর গানে ফিরছেন কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। এরই মধ্যে রিহার্সাল শুরু করেছেন টিমের সঙ্গে। ৩১ জানুয়ারি গান নিয়ে মঞ্চে উঠবেন সাবিনা ইয়াসমিন। পর পর দুইদিন এইচএসবিসির করপোরেট শোতে গান গাইবেন তিনি। একই আয়োজনে আগামী ১৮ ফেব্রম্নয়ারি গাইবেন চট্টগ্রামে। পাশাপাশি নতুন গানের রেকর্ডিংয়ের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন শিল্পী নিজেই। সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'এইচএসবিসির তিনটি করপোরেট অনুষ্ঠানে গান গাইব। তিনটিই আমার একক গানের অনুষ্ঠান। ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকার দুটি অনুষ্ঠানে গাইব। এরপর তাদেরই আরেকটি অনুষ্ঠানে গাইব চট্টগ্রামে। সেটা হবে ১৮ ফেব্রম্নয়ারি। নিজের পছন্দের গানগুলোর পাশাপাশি শ্রোতাদের পছন্দের গানও গাইবার চেষ্টা করব। প্রায় এক বছরের বেশি সময় পর গান নিয়ে মঞ্চে উঠছি। খুবই ভালো লাগছে। এরই মাঝে টিমের সঙ্গে রিহার্সাল করছি। সর্বশেষ মঞ্চে গান গেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়াতে।'
নতুন গানের খবর জানতে চাইলে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'নতুন গান করার ব্যাপারে কয়েকজন আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। গানগুলো ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন পস্ন্যাটফর্মে রিলিজ দিতে চান। ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত হলে গানের গীতিকার, সুরকারের নামসহ বিস্তারিত জানাতে পারব।' সিনেমার কোনো গান করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সিনেমার কোনো গান নিয়ে এখনো কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি। তবে, আমি গানের শিল্পী, আলোচনা হলে, ভালো লাগার মতো গান হলে অবশ্যই গাইব।'
সর্বশেষে ২০২৩ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে একাধিক স্টেজ শো করেছেন সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর দেশে ফিরলেও নতুন কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। গত বছরের শুরুর দিকে আবার তার অসুস্থতার খবর প্রকাশ পায়। সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, ক্যানসারের চিকিৎসার পর নিয়মিত ফলোআপে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছে। একপর্যায়ে আবার অসুস্থতা দেখা দিলে গত বছর ৭ ফেব্রম্নয়ারি তার অস্ত্রোপচার হয়, এরপর রেডিওথেরাপি নিতে হয়। ইচ্ছে করেই নিজের অসুস্থতার খবর সবাইকে জানাতে চাননি তিনি। চিকিৎসা শেষে গত মে মাসে ঢাকায় ফেরেন সাবিনা। এখন শরীর কেমন জানতে চাইলে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'আলহামদুলিলস্নাহ, এখন পুরোপুরি সুস্থ আছি। সবার দোয়ায় ভালো আছি এখন। আলস্নাহর অশেষ রহমত, দেশবাসীর দোয়া আর মনের জোর ছিল বলেই বিপদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।'
সাবিনা ইয়াসমিন এক পারিবারিক সুরের আবহাওয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা লুৎফর রহমান সরকারি চাকরি করলেও চমৎকার রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন। মা মৌলুদা খাতুন মুর্শিদাবাদের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন। সাবিনা ইয়াসমিন ওস্তাদ পিসি গোমেজের কাছে একটানা ১০ বছর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। তবে মঞ্চে গান গাইতে উঠেছেন মাত্র ৭ বছর বয়সে।
১৯৬২ সালে 'নতুন সুর' চলচ্চিত্রে শিশু কণ্ঠশিল্পী হিসেবে, রবীন ঘোষের সুরে একটি গান গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে তিনি বেতারে ছোটদের গানের অনুষ্ঠান 'খেলাঘর'-এ নিয়মিত অংশ নিতেন। ১৯৬৭ সালে 'আগুন নিয়ে খেলা' ছবিতে পেস্ন-ব্যাক শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে সাবিনা ইয়াসমিনের। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা।
চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গানের সংখ্যা কয়েক হাজার। পেয়েছেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৪ বার। আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০১৮-এ আজীবন সম্মাননা পান সাবিনা ইয়াসমিন। তার প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে এইচএমভি'র ডবল পস্নাটিনাম ডিস্ক, উত্তম কুমার পুরস্কার, বিশ্ব উন্নয়ন সংস্থা থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা।
সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে 'শুধু গান গেয়ে পরিচয়', 'জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো', 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই', 'চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও', 'শুধু গান গেয়ে পরিচয়', 'অশ্রম্ন দিয়ে লেখা এ গান', 'দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা', 'এ সুখের নেই কোনো সীমানা', 'বরষার প্রথম দিনে' ও 'আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা' উলেস্নখযোগ্য।
তার দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে 'জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো', 'সব ক'টা জানালা খুলে দাও না', 'ও আমার বাংলা মা', 'মাঝি নাও ছাড়িয়া দে', 'সুন্দর সুবর্ণ' ও 'একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা' উলেস্নখযোগ্য। ভারতের বরেণ্য সুরকার আরডি বর্মণের সুরে গান করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। কিশোর কুমার ও মান্না দে'র সঙ্গে দ্বৈতগানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।