শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সরকারের যত চ্যালেঞ্জ

নূর মোহাম্মদ
  ০৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
স্কুল খোলাকালীন শিশুদের উলস্নাস -ফাইল ছবি

করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৮ দফা ছুটির পর চলতি বছর স্কুল-কলেজ আদৌ খোলা হবে কিনা এমন সংশয়ের মধ্যে শীত নাড়া দিচ্ছে। নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ শীতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে এমন শঙ্কাও রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেও সংক্রমণ বাড়ায় ফের বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সরকারকে সাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। যার বেশিরভাগই সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ অবস্থায় চলতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না এমন আভাস দিয়েছেন শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। নভেম্বর মাসে স্কুল খুললে মাত্র ৩০ দিন সময় পাবে শিক্ষার্থীরা। এতে সিলেবাসের ১৫% পড়ানো সম্ভব হবে। এদিকে ক্ষতি পোষাতে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে এপ্রিল মাস থেকে চলে আসা টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন ও মোবাইলে পাঠদান চালু থাকলেও খুব বেশি কার্যকর হয়নি। শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই ছিল এ পাঠদানের বাইরে। এতে চলতি বছর শিক্ষার যে ক্ষতি হওয়া তা হয়ে গেছে। তাই এ মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে রাজি নয় সরকার।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, চলতি বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে কিনা, সব কিছুই নির্ভর করছে করোনার পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার উপর। স্কুল খোলার পর যদি আবার বন্ধ করতে হয়, সেটির চেয়ে বরং পরিস্থিতি দেখে একেবারেই খোলা উত্তম। তিনি বলেন, এ নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছি। তবে কোন মাসে খুললে কতটুকু পাঠদান করা যাবে বা না খুলতে পারলে কী করা হবে সেই পস্ন্যান আমাদের রয়েছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না খোলার সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়টি খুব বেশি সম্পৃক্ত না হওয়ায় সরকার এখানে কোনো চাপ নিতে রাজি নয়। অন্যদিকে বছরের প্রায় শেষে খুললেও পাঠদানের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে, সেটি পোষানো সম্ভব না।

\হশিশুরা করোনায় আক্রান্ত হলে দেশে হুলস্থুল শুরু হবে শেষে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। নভেম্বর থেকে শীত শুরু হওয়ায় সরকার ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন কিনা এ নিয়ে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানা হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে শহরে গণপরিবহণ চাপ আরও বাড়বে এতে শিশুরা সংক্রমণ হওয়ার বড় ঝুঁকি তৈরি হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা জানান, সরকার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার চিন্তা করলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে থেকে সরে এসেছে। কারণ প্রায় প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে সিট সংকটের কারণে রুমগুলোতে গাদাগাদি করে থাকা এবং গণরুম রয়েছে। সেখানে সংক্রমণ দ্রম্নত ছড়াতে পারে। এসব শঙ্কায় এখনই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে রাজি নয় সরকার।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাইয়ে দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি দুই সপ্তাহের মধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ হাজার শিশু। স্কুলে যাতায়াতের পথেই যে সংক্রমণ হয়েছে এবং ওই দুই সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ২৫ শিশুর মৃতু্য হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহে যদি প্রায় ১ লাখ শিশু কোভিডে সংক্রমিত হয়, তা হলে স্কুল চালু রাখলে সংখ্যাটা গিয়ে কোথায় পৌঁছবে তা নিয়ে শঙ্কিত সংগঠনটি। তবে ব্যতিক্রম শুধু ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর কোনো সমস্যা হয়নি, তাই সেখানে ক্লাস-পরীক্ষা ঠিকমত চলছে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া খুলে দেওয়ার পর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউরোপসহ পশ্চিমা অনেক দেশ ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিলেও রাজ্য সরকার যদি মনে করে খোলা যাবে না তবে সেটি চূড়ান্ত হবে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। বিশেষ করে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা যাবে না। এসব বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে নভেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে এক বেঞ্চে একজন এবং শিক্ষার্থীদের ইংরেজি 'জেড' আকারে বসিয়ে নেয়া হবে এ পরীক্ষা। করোনাকালীন শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে। সেপ্টেম্বরে খোলা সম্ভব হলে ৭০ দিন আর অক্টোবরে সম্ভব হলে ৫০ দিনের মতো পাঠদান করা যেত। নভেম্বরে খোলা সম্ভব হলে মাত্র ৩০ দিন সময় পাবে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। একই চিন্তা-ভাবনা আছে মাধ্যমিক স্তরেও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<114068 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1