মিয়ানমারের ক্ষমতাচু্যত নেত্রী অং সান সু চিকে চার বছরের কারাদন্ড দিয়েছে দেশটির সামরিক আদালত। 'গণ অসন্তোষে উসকানি' আর 'কোভিডবিধি ভাঙার' অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ রায় দিয়েছেন আদালত। এদিকে, ফেব্রম্নয়ারিতে সামরিক অভু্যত্থানের পর থেকে বন্দি সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনসহ ১১টি মামলা হয়েছে। সবগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হলে নোবেলজয়ী এ নেত্রীর সর্বোচ্চ ১০০ বছরের বেশি কারাদন্ড হতে পারে। এর মধ্যে প্রথম মামলায় দুই অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো।
সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এ কথা জানানো হয়।
সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দলের অন্যতম নেতা ও ক্ষমতাচু্যত প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকেও একই অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল, তাকেও একই সাজা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১ ফেব্রম্নয়ারি
অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সেদিনই সু চি ও তার দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সু চিকে তখন থেকেই গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এ ধরনের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে আসছে।
সোমবারের রায়ের পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক উপ পরিচালক মিং উ হাহ এক বিবৃতিতে বলেন, 'বিরোধীদের নির্মূল করে মিয়ানমারের কণ্ঠরোধ করার জন্য সামরিক বাহিনী কী করতে পারে, ভুয়া অভিযোগে সু চিকে এরকম শাস্তি দেওয়া হলো তার সর্বশেষ নমুনা।'
বিবিসি জানিয়েছে, ৭৬ বছর বয়সি সু চিকে মামলার বিচারে আদালতে হাজির করা হয়েছে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য শোনার সুযোগ কমই হয়েছে।
অভু্যত্থানবিরোধীদের গড়ে তোলা পস্ন্যাটফর্ম 'জাতীয় ঐক্য সরকারের' একজন মুখপাত্র ডা. সাসা বিবিসিকে বলেছেন, 'সু চি খুব ভালো অবস্থায় নেই। মিলিটারি জেনারেলরা তাকে ১০৪ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। তারা চায়, কারাগারেই তার মৃতু্য হোক।'
প্রসঙ্গত, বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুর পর ২০১৫ সালে মিয়ানমারে প্রথম জাতীয় নির্বাচন হয় এবং বড় জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। ওই মেয়াদের পাঁচ বছরে সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই এনএলডি দেশ পরিচালনা করে।
কিন্তু গোল বাধে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ভোট ঘিরে। ওই নির্বাচনে আরও বড় জয় নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে সু চির দল এনএলডি।
সেনা সমর্থিত বিরোধী দল থেকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটের ফল অস্বীকার করে নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপা উত্তেজনা চলে।
এ বছর ১ ফেব্রম্নয়ারি নতুন সরকারের পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন ভোরেই সু চি এবং প্রেসিডেন্ট মিন্টকে আটক করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয় জরুরি অবস্থা।
ওই অভু্যত্থানের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়। সেই বিক্ষোভ দমাতে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মাত্রা আরেক দফা বাড়ে। রাজনৈতিক কর্মী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ গণতন্ত্রপন্থি দশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের হিসাবে ফেব্রম্নয়ারির অভু্যত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৩ জন নিহত হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে।