শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বলছে আগুনমুখার জেলেরা!

হ দ্রব্যমূল্য এবং তেলের দামে চিড়েচ্যাপ্টা জেলেরা হ আয় ফুরিয়ে যাচ্ছে তেল খরচে
আইয়ুব খান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)
  ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

'যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন নদীতে যা মাছ পাইতাম তা দিয়েই মোটামুটি চলা যেত। কিন্তু এখন আর চলতে পরছি না। একদিকে নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ নেই। অপরদিকে তেলের দাম প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা বেড়েছে। এরপরও ধারদেনা করে বাজারের টাকা জুগিয়ে নদীতে বুকভরা আশা নিয়ে মাছ ধরতে যাই। কিন্তু ফিরে আসতে হয় আশাশূন্য হয়ে, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় চিড়েচ্যাপ্টা হওয়া পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার আগুনমুখা নদীর জেলে মো. ওমর মৃধা এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। তিনি বলেন, নদীতে প্রত্যেক যাত্রায় রসদ ও জেলেদের বেতন নিয়ে প্রায় ২০-২১ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু মাছ পাই কম। মাঝেমধ্যে মাছ বিক্রি করে খরচের টাকা জোগার হয়। বর্তমানে জ্বালার মধ্যে আছি। না পারছি জেলে পেশা ছেড়ে দিতে, না পারছি কোনো কিছু করতে। শুধু তিনি নন, তিন দিন পরে এক ঝুড়ি মাছ নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে কোড়ালিয়া মাছঘাটে ট্রলার ভেড়ান মাঝি কুরবান মিয়া। তিনিও জানালেন একই কথা। মাঝি কুরবান বলেন, 'নিত্যপণ্যের যে হারে দাম বাড়ছে তাতে জেলে-মহাজন নিয়ে আমাদের চলতে খুব কষ্ট হয়ে যায়। একদিকে নদীতে ইলিশ নেই। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যে

ও জ্বালানি খরচে পিষ্টে গেছে জেলে-মহাজনরা। এর মধ্যে ঋণের টাকার চাপ। সরকারের কাছে দাবি জানাই- তেলের দাম যাতে কমিয়ে দেয়।' একই পরিস্থিতির কথা বলেছেন ঘাটে থাকা কয়েকজন জেলে-মহাজন।

কোড়ালিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী স্বপন সাহা জানান, 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং তেলের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে অনেক জেলে মহাজন। নদীতে মাছ না থাকায় মাঝিমালস্না ছেড়ে ঘাটে ট্রলার বেঁধে রেখেছেন অনেকে। কিইবা করবেন তারা। আর কত ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে চলবেন। এজন্য আমরাও ক্ষতির মুখে আছি।'

উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে। এটিই সাফল্য। নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ মাছ সাগরের নোনা পানি থেকে নদীর মিঠা পানিতে উঠে আসে ডিম দেওয়ার জন্য। ডিম দেওয়া শেষে মাছগুলো সাগরে চলে যায়। কিন্তু নদীর জেলেরা ছোট ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে পারে না। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত মাছও পাচ্ছেন না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই নদীর জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়বে। এ উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ১২ হাজার ৮২০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় ধাপের ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, 'জ্বালানি এবং দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। এ সময় নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নেই। ফলে জেলেরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আশা করছি শিগগিরই নদীতে প্রত্যাশিত ইলিশের দেখা পাবেন জেলেরা। এবং লোকসান মিটিয়ে লাভবান হবেন।'

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, 'জ্বালানি এবং দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রান্তিক জেলে পরিবারগুলো ক্ষতির মুখে রয়েছে। আশা করছি, এ দুর্যোগ কেটে যাবে। স্বাভাবিক হবে জনজীবন। এ ছাড়া যে জেলেরা অনিবন্ধিত রয়েছেন তাদের নিবন্ধিত করে সামাজিক বলয়ে নিয়ে আসা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে