শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনের পরীক্ষায় বিএনপি নেতারা

মাঠে না থাকলে মনোনয়ন মিলবে না নিষ্ক্রিয় থাকলে হারাতে হবে পদ
হাসান মোলস্না
  ২০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ২০ আগস্ট ২০২২, ১০:১৪

লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে ২২ আগস্ট থেকে মাঠে নামছে বিএনপি। জনসম্পৃক্ত ইসু্যতে এই কর্মসূচি শুরু হলেও এর ধারাবাহিকতা প্রধান দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে চায় দলটি। আসন্ন কর্মসূচিগুলোতে একজন নেতাকর্মীও যেন নিষ্ক্রিয় না থাকে সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিগত সময়ে দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের এবার সরাসরি আন্দোলনের মাঠে থাকতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি সূত্রমতে, বিগত নির্বাচনের আগেও অনেক নিষ্ক্রিয় নেতা এমনকি সংস্কারবাদীদের একটি অংশ দলের মনোনয়ন পেয়েছে। তাতে নির্যাতিত ত্যাগী নেতারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছে। এবার এমন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আন্দোলনের মাঠে পরীক্ষা দিয়েই দলের মনোনয়ন নিতে হবে। এছাড়া দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের জন্য দুর্দিন আসছে। ২২ আগস্ট থেকে কর্মসূচিতে সরাসরি না থাকলে দল শোকজ করবে। সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে পদ কেড়ে নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, বিএনপিতে এখন নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মী নেই বললেই চলে। এর পরেও ২/৪ জন যারা আছেন তাদের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিএনপির কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুরু করেছেন। সবশেষ কয়েকটি সফল কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি এর প্রমাণ মেলে। সবশেষ ঢাকার সমাবেশে নেতাকার্মীদের চাঙ্গা করেছে। অবস্থা দেখে দলের নীতি-নির্ধারকের একাংশ পর্যন্ত এখনই হরতাল অবরোধের কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু হাইকমান্ড চাইছে কেন্দ্রীয় নেতাদের পুরোপুরি সক্রিয় করার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের আন্দোলনে সামনের কাতারে নিয়ে আসতে। তাতে দলের নির্বাচনমুখী মনোভাব থাকবে। আর সাধারণ মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবে। এজন্য মামলা-ভয় এমনকি মৃতু্য উপেক্ষা করে জনসম্পৃক্ত ইসু্যতে বিএনপি রাজপথে আছে এমন বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। এর পরেই সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসবে বিএনপি। তবে জনসম্পৃক্ত ইসু্যতে কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। সূত্র মতে, চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এক. আন্দোলনে সফল তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করা। দুই. জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পাওয়া সব প্রার্থীকে সরাসরি মাঠের আন্দোলনে যুক্ত করা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে আগামী ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে সব স্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি তেল, পরিবহণ ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম ও ছাত্রদল নেতা নূরে আলম হত্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচি সফলে ৬ নির্দেশনা দিয়ে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে- 'প্রতিটি উপজেলা, থানা, পৌর কর্মসূচির তারিখ নির্ধারণ করবেন জেলার নেতারা। ২২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন প্রতিটি জেলা, মহানগরের কমপক্ষে একটি উপজেলা, থানায় কর্মসূচি পালিত হবে। সেসব কর্মসূচিতে জেলার নেতারা এবং ওই সব জেলার অধিবাসী কেন্দ্রীয় নেতারা ও সাবেক সংসদ-সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের স্ব-স্ব ইউনিটের নেতারা কর্মসূচি সফল করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন। এ বিষয়ে স্ব-স্ব সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সার্বিক সমন্বয় করবেন এবং ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দেবেন। আরও বলা হয়েছে- বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে সার্বিকভাবে সমন্বয় করবেন। বিভাগীয় মনিটরিং টিম প্রধানদের চিঠি দিয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চিঠিতে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্তরা কর্মসূচি সুচারুভাবে পালন করছে কিনা তা তদারকি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে