মেট্রোরেলের পর এবার পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করতে চলেছে দেশ। মেট্রোরেল উড়ালপথে চলছে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত। এবার হবে দ্বিতীয় মেট্রোরেল, যা মাটির নিচ দিয়ে চলবে। মাটির নিচ দিয়ে চলবে বলে এটি পাতাল রেল নামে পরিচিতি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মাটির নিচে দিয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার এই রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এটিই হবে মেট্রোরেলের প্রথম পাতাল যাত্রা।
মঙ্গলবার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সভা কক্ষে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির এমডি এমএএন ছিদ্দিক এসব তথ্য জানান।
প্রকল্প সূত্র অনুযায়ী, পাতাল রেল নির্মিত হচ্ছে ম্যাসর্ যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায়। এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে ডিএমটিসিএল। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি ঋণ ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আর বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে।
প্রকল্প সূত্র মতে, দ্বিতীয় মেট্রোরেল হবে উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে। দু'টি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত- এই রুটে মাটির নিচ দিয়ে চলবে রেল। এটি ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট।
তথ্য অনুযায়ী, পাতাল রেলের এই রুটে স্টেশন
হবে ১২টি। এগুলো হলো- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। আর পূর্বাচল রুটে নতুন বাজার স্টেশনটি হবে পাতালে। এরপর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচলের নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে। এ রুটে আবার স্টেশন হবে নয়টি। এগুলো হলো- নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির এমডি এমএএন ছিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, '২ ফেব্রম্নয়ারি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় প্রধানমন্ত্রী এই কাজের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে রূপগঞ্জ জমতা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাজউকের কমার্শিয়াল পস্নট মাঠে সভা হবে।'
পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের জন্য এরই মধ্যে ৯২ দশমিক ৯৭২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, '২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ৫২ হাজার ৫৬১ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাইকা এর অর্থায়ন করবে।'
তিনি আরও বলেন, 'পিতলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ হবে। এর মধ্য দিয়ে পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এমআরটি-১ প্রকল্প দু'টি অংশে বাস্তবায়িত হবে। একটি অংশ হবে পাতাল ও অপরটি হবে উড়াল। দু'টি অংশের মূল ডিপো নির্মাণের কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বুধবার চুক্তি সই হয়েছে।'
বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রো ট্রেন এই ডিপোর সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। এটি নির্মাণ হলে দৈনিক আট লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে বলে জানান তিনি।
পাতাল রেল নির্মাণের সময় আশপাশের ভবনগুলোর কোনও সমস্যা হবে না জানিয়ে এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, 'টিভিএম নামে এক রোবট মেশিনের মাধ্যমে মাটি খোঁড়া হবে, যা শব্দহীন। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকবে পাতাল রেল স্টেশনে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর আটটি কোচ দিয়ে আড়াই মিনিট পরপর এক একটি ট্রেন এসে পস্ন্যাটফর্মে দাঁড়াবে। সে হিসেবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।'
প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার পর ভাড়া কেমন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'নির্মাণ ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় না। পরিচালনা ব্যয় অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ হয়। ভাড়ার বিষয়টি পরিচালনা ব্যয়ের ওপর নির্ভর করবে।'
এম এ এন ছিদ্দিক জানান, এমআরটি লাইন-৬ এ যে কন্ট্রোল সেন্টার থেকে মেট্রোরেল পরিচালিত হচ্ছে, সেটা এখন সাড়ে ৩ মিনিট পরপর চলতে পারে। এটাকে কমিয়ে এমআরটি লাইন-১ এ ১০০ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করা হবে। এটাকে হেডওয়ে বলে। ১০০ সেকেন্ডের মধ্যে একটার পর আরেকটা ট্রেনে আসবে, এটি আর কমানোর সুযোগ নেই। ৬টি কোচ দিয়ে এমআরটি লাইন-৬ শুরু হলেও এটিতে আরও দু'টি কোচ সংযোজনের সুযোগ আছে।
এদিকে আমাদের রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণখালী বালুর মাঠে মেট্রোরেল পাতাল রেলের ডিপো উদ্বোধন ও জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।