শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বদরবারে বাংলা ভাষার বিস্তার বাড়াতে হবে একুশে বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদু্যৎ উৎপাদনে আলোচনা চলছে হ ২০২২ সালে বিদেশে গেছেন ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মী হ কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আমরা ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছি সংসদে শেখ হাসিনা
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রাপ্তদের সঙ্গে ফটো সেশনে অংশ নেন -ফোকাস বাংলা

সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সুবিধা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, '২১ ফেব্রম্নয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পাওয়ায় আমাদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়েছে। বিশ্বদরবারে বাংলা ভাষার বিস্তার বাড়াতে বেশি করে অনুবাদ করতে হবে। মানসম্মত ইংরেজি ও বিভিন্ন ভাষায় এই অনুবাদ হতে হবে।'

বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'এখন কেউ বই পড়তে চায় না। মানুষ হাঁটতে-চলতেও শুনতে পারে এমন অডিও বই করা উচিত, ডিজিটাল ভার্সন করা উচিত। অনলাইনে লাইব্রেরির সুবিধাও নেওয়া যেতে পারে।'

স্কুলজীবন থেকে প্রতিবার বইমেলায় আসতেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'সারা দিন ঘুরঘুর করতাম। এখন তো (প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর) অনেক বিধিনিষেধ। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দিন বইমেলায় আসতে পারিনি। দুই বছর সরাসরিও আসতে পারিনি। আজ (বৃহস্পতিবার) দীর্ঘদিন পর এসে খুব ভালো লাগছে।'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন উলেস্নখ করে তার কন্যা বলেন, 'তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি যতবার ভাষণ দিয়েছি জাতিসংঘে, বাংলায় ভাষণ দিয়েছি।'

তরুণদের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা এবং খেলাধুলায় আগ্রহী করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ আরও বাড়াতে হবে। অনেক দেশেই বইমেলা হয়। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ থাকলে আমাদের ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে। ততই আমাদের ভালো হবে। আদালতে বাংলায় রায় দেওয়া শুরু হয়েছে। সব ক্ষেত্রে আমাদের এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'অর্থনৈতিক চিন্তার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চিন্তাও করা উচিত। ১৯৪৮ থেকে ভাষার সংগ্রামের শুরু। ভাষার অধিকার থেকেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সুফল মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে, ভাষা সাহিত্যেরও উৎকর্ষ ঘটাতে হবে।'

২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এই সময়ে অর্থনীতিতে, সাহিত্যচর্চায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'শিশুসাহিত্যটা আরও বেশি দরকার। আকর্ষণীয় বই দরকার।'

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী স্মারকে সই করেন। বইগুলো হলো- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-১, কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ

\হও আমার দেখা নয়াচীন পাঠ বিশ্লেষণ, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রচিত আমার জীবন নীতি, আমার রাজনীতি এবং জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২ (১ম খন্ড)।

প্রধানমন্ত্রী এরপর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২প্রাপ্ত ১৫ জন কবি, লেখক ও গবেষকের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত (যৌথভাবে কবিতায়), তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), মাসুদুজ্জামান (প্রবন্ধ/গবেষণায়), আলম খোরশেদ (অনুবাদ), মিলন কান্তি দে এবং ফরিদ আহমদ দুলাল (যৌথভাবে নাটকে), ধ্রম্নব এষ (কিশোর সাহিত্য), মুহাম্মদ শামসুল হক (মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা), সুভাষ সিংহ রায় (বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা), মোকারম হোসেন (কল্পবিজ্ঞান), ইকতিয়ার চৌধুরী (জীবনী-ভ্রমণকাহিনী) এবং আব্দুল খালেক ও মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (যৌথভাবে) লোকসংস্কৃতিতে।

বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের সঙ্গীত 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি' সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের পাশে নির্মিত মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবাই অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করে বইমেলা উদ্বোধনের পর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।

উলেস্নখ্য, এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য- 'পড়ো বই, গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ'। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে দর্শক, ক্রেতা ও পাঠকরা রাত সাড়ে ৮টার পরে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারবেন না। সরকারি ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দুপুরে খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।

এবারের মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৫৩টি স্টল রয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১২৭টি, ২০২১ সালে ১৪০টি এবং ২০২০ সালে ১৫৫টি। অন্যদিকে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বইমেলা ভেনু্য ও এর আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। মেলার ১১ লাখ বর্গফুট জায়গার প্রতিটি স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে