শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের 'সিস্টেম লস' কমাতে মরিয়া সরকার

৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে চার লাখ ২০ হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার কেনার সিদ্ধান্ত
যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আবাসিক খাতে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণের জন্য আরও ৪ লাখ ২০ হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাকৃতিক গ্যাসের 'সিস্টেম লস' কমিয়ে গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে লাইন-গ্যাস ব্যবহারকারীরা অনেক সময় গ্যাসের অপচয় করেন। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় চুলা জ্বালিয়ে পানি গরমসহ অপ্রয়োজনীয় কাজও সারেন। এতে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রচুর অপচয় ঘটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আবাসিক খাতে গ্রাহক পর্যায়ে 'সিস্টেম লস' কমানোর উদ্দেশ্যে কেনা হচ্ছে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার। ২০২৪ সালের মধ্যে এসব গ্যাস মিটার রাজধানীসহ ঢাকা জেলার ৪১টি থানা এলাকায় আবাসিক খাতের গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এর মাধ্যমে সার্বিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবস্থাপনা ও তদারকি সংক্রান্ত ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে 'প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন (৩য় সংশোধিত)' প্রকল্পও সম্প্রতি অনুমোদন পেয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্যাস অপচয় রোধ, দক্ষ, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকসই গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং গ্যাসের সিস্টেম লস কমিয়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এসব কারণেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে ২০১৫ সালে। পরবর্তী সময়ে এ প্রকল্পটিতে এ পর্যন্ত তিনবার সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়।

প্রকল্পটির সবশেষ সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজের পরিধির পরিবর্তন, ১ হাজারটি পিওএস সাপোর্ট সার্ভিস অন্তর্ভুক্ত করা, প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয় বাড়ানো এবং সর্বশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর জন্যই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধনী

প্রস্তাব আনা হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) আওতাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)।

জানা যায়, শুরুতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল (১ম সংশোধিত) ৪৯৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। প্রকল্পের ২য় সংশোধিত প্রস্তাবে ৭৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৯২৮ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৯৭ কোটি ৪৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। প্রকল্প ঋণ বাবদ জাইকার কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৮০৭ কোটি ২৯ হাজার টাকা। এছাড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নেওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাবটি একনেকের অনুমোদন পাওয়ায় আগামী ২০২৪ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে পরিকল্পনা বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় মোট ৪ লাখ ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার লক্ষ্যে টার্ন-কি পদ্ধতিতে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার কেনা হবে এবং সেগুলো স্থাপন করা হবে। ওয়েব সিস্টেম (হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার) স্থাপন করা হবে এবং গ্রাহক আঙিনায় মিটার স্থাপন ও কমিশনিংসহ অন্যান্য কাজ করা হবে।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, 'প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন (৩য় সংশোধিত)' শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে মোট ৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল জিওবি থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ, প্রকল্প সাহায্য বাবদ ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ও সংস্থার স্ব-অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের পক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্যাস অপচয় রোধ, দক্ষ, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকসই গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং গ্যাসের সিস্টেমলস কমিয়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এমন অবস্থায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন' (৩য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য একনেক-এর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আবাসিক খাতে গ্রাহক পর্যায়ে সিস্টেম লস কমানোর উদ্দেশ্যে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার কেনা হচ্ছে। প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্যাস অপচয় রোধ, দক্ষ, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকসই গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে