বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি—এসএসবি) সভাপতি অধ্যাপক হালুক গরগুন আগামী ৮ জুলাই এক দিনের সফরে ঢাকা আসছেন।
এ নিয়ে কুটনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের পর পর তার এই সফর বেশ গুরুত্ব বহন করে।
এই সফরে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
তুরস্কের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, এই সফরে দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, প্রযুক্তি স্থানান্তর, সমরাস্ত্র কেনাকাটা ও বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রত্যক্ষ অধীনস্থ এসএসবি মূলত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সমরাস্ত্র নকশা ও উৎপাদন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং বিনিয়োগের বিষয়ে নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে কাজ করে।
বাংলাদেশের কূটনীতিকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা।
২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং যৌথ উদ্যোগে প্রতিরক্ষা শিল্প উন্নয়নের মাত্রা বেড়েছে বহুগুণ। গত সাত বছরে বাংলাদেশ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র—বারাক্তার টিবি-২ ড্রোন—তুরস্ক থেকে সংগ্রহ করেছে।
এসব সহযোগিতার আওতায় বাংলাদেশ কোবরা সাঁজোয়া যান, স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, মাইন প্রতিরোধী যান, বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং স্বয়ংক্রিয় কামানের গোলা সংগ্রহ করেছে।
এছাড়া, সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রির বিষয়েও তুরস্ক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে গোলা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তরও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল রাজনৈতিক দিকগুলো দেখভাল করলেও, অধ্যাপক হালুক গরগুন কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত দিকগুলোর নেতৃত্ব দেন।
এসএসবি বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে মুখ্য ভূমিকা রাখে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত ঢাকা সফর করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেন।
ঢাকায় আসন্ন বৈঠকে এসব আলোচনার ধারাবাহিকতা আরও এগিয়ে নিতে এবং ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা প্রকল্পের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে কাজ করবেন অধ্যাপক গরগুন।
কূটনীতিকদের ধারণা, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা এবং দেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে তুরস্ক হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার।