বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
কলাবাগানে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন বানচালের সাধ্য সামর্থ্য বিএনপির নেই

'আওয়ামী লীগের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না' 'ভোট দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসের জবাব দিন'
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় পৌঁছে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান -ফোকাস বাংলা

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধ করার সাধ্য ও সামর্থ্য বিএনপির নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিএনপি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রি করত। ফলে তাদের নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হতো। এখন ভোট চুরি করতে পারে না বলেই নির্বাচনে আসে না। নির্বাচন নাকি তারা বানচাল করবে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে- এত সাহস তাদের (বিএনপি) নেই। তারা তা পারবে না।'

সোমবার রাজধানীর কলাবাগান মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করে।

বেলা ১২টা থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে দলের নেতাকর্মী জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন। বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'তারা নির্বাচন বর্জন করছে। বর্জন করাটা খুবই স্বাভাবিক। ভোট চুরি করতে পারবে না, নির্বাচন করবে না। কারণ, এরা ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের সৃষ্টি। ক্ষমতা চুরি, ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি- এ ছাড়া তো আর কিছু পারে না। এজন্যই তো নির্বাচন করতে চায় না।'

'আ'লীগের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না'

আওয়ামী লীগই প্রথম শান্তির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ''৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে এসেছে, লঙ্ঘন করেছে সংবিধান।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে। জনগণের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগই জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র থাকায় দেশে আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য কাজ করে জনগণের হৃদয় জয় করে ভোট পাই। ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'দেশের মানুষের কল্যাণে যা যা করা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ করছে। এটা প্রমাণিত সত্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের

\হমানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল, দেশের জনগণকে কিছু দেয়নি। নিজেরা সম্পদের মালিক হয়েছে, লুটপাট করে খেয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকারের কথা বলে।'

'ভোট দিয়ে অগ্নি সন্ত্রাসের জবাব দিন'

আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত অগ্নি সন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। সকাল সকাল পরিবার-পরিজন নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দেবেন। কেউ যেন আপনার ভোট ঠেকাতে না পারে। ভোট দিয়ে অগ্নি সন্ত্রাসের উপযুক্ত জবাব দেবেন।'

মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'এই নৌকা মহাপস্নাবনে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকাই মানুষের উন্নতি দেয়, এই নৌকাই মানুষকে নিশ্চিত জীবন দেয়, শান্তি দেয় সমৃদ্ধি দেয়। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা পেয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এই নৌকায় ভোট দিয়েই আজকে বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামীতে নৌকায় ভোট দেবেন, ১৯৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যই আজকে নির্বাচন।'

তরুণদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের তরুণরা, এই তারুণ্যই হচ্ছে আমাদের অগ্রদূত। কাজেই তাদেরও আমি আহ্বান করব, প্রথম যারা ভোটার তাদের আহ্বান করব নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে।'

'অস্বাভাবিক সরকারে নাকি মূল্য বাড়ে'

বুদ্ধিজীবীরা নানা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এর জবাব আমি দেব। গণতন্ত্র থাকলে নাকি তাদের (বুদ্ধিজীবীদের) মূল্য থাকে না। আর অস্বাভাবিক সরকার থাকলে নাকি তাদের মূল্য বেড়ে যায়। কার কত মূল্য সেটি দাঁড়িপালস্নায় মেপে দেখতে চাই।'

'এই ১৫ রত্ন, আপনাদের সেবক'

অনুষ্ঠানে ঢাকার ১৫টি আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, 'এই ১৫টি রত্ন আপনাদের তুলে দিলাম। এরা আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করবে।'

খেলা হবে ৭ তারিখে : ওবায়দুল কাদের

নির্বাচন জনসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বক্তব্য রাখেন। বিএনপি খেলা থেকে বাদ পড়েছে, ফাউল করে লালকার্ড খেয়েছে মন্তব্য করে বলেন, 'লালকার্ড খেয়ে ২৮ তারিখেই বাদ। ফাইনাল খেলা ৭ জানুয়ারি। খেলা হবে ৭ তারিখে। এদের লালকার্ড দেখিয়ে বের করে দিতে হবে।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে খেলা হবে উলেস্নখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এই তারেকের বিরুদ্ধে একসঙ্গে খেলা হবে। খেলা হবে, হবে খেলা, বিএনপি কোথায়? মাঠে আছে? কোথায় গেছে? পালিয়ে গেছে?'

বিএনপিকে 'স্বাধীনতাবিরোধী, লুটতরাজ, দুর্নীতিবাজ ষড়যন্ত্রকারী' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। যারা আমার প্রিয় জন্মভূমি পাকিস্তান বানাতে চায়, আফগানিস্তান বানাতে চায়, তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। খেলা হবে। জোরদার খেলা হবে। আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে। লুটপাটের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে, অবরোধের বিরুদ্ধে খেলা হবে।'

সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ।

মঞ্চে ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকার বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে