বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসব ও শঙ্কার ভোট আজ

ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনাই বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখের বেশি সদস্য মাঠে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে আ'লীগসহ ২৮ দল বিএনপিসহ সমমনাদের নির্বাচন বর্জন
আলতাব হোসেন
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:১৯
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের। ছবিটি শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার লাভ রোডস্থ এইচআরসি মিডিয়া ভবনের সামনে থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে উৎসব ও শঙ্কার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চেষ্টার কমতি রাখেনি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে বিএনপিবিহীন নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইসি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সারাদেশের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট দেবেন ভোটাররা। গত ৩ জানুয়ারি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা। গত ২৯ ডিসেম্বর নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের মৃতু্য হওয়ায় বিধি অনুযায়ী আসনটির ভোট স্থগিত করে ইসি। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবন থেকে। আজ সারা দেশে সাধারণ ছুটি।

নির্বাচনকালীন সব ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে ও ভোটের পরিবেশ সুরক্ষায় মাঠে দায়িত্বপালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখের বেশি সদস্য। নির্বাচনে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রসহ সারাদেশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি,র্ যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে আছেন। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে সারা দেশে।

এ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন। এবারের নির্বাচনে মোট চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১৪৮টি এবং চূড়ান্ত ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৪২ হাজার ১৪৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২৩ হাজার

\হ১১৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ মোট ভোট কেন্দ্রের অর্ধেকের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

সারা দেশে ৪২ হাজার ১৪৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯ হাজার ৬১টি কেন্দ্রে আজ সকালে ব্যালট পৌঁছাবে। দুর্গম অঞ্চলের চার হাজার কেন্দ্রে ব্যালট ও নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে শনিবার। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন কেন্দ্রে পৌঁছাচ্ছে ব্যালট পেপার।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪ হলেও নির্বাচিত অংশ নিচ্ছে না বিএনপিসহ ১৬টি দল। ইসির তথ্য অনুযায়ী, এবার ২৮টি রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে দলীয় প্রার্থী ১৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন। এবার সবচেয়ে বেশি ২৬৬ জন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপরই রয়েছে জাতীয় পার্টি, তাদের প্রার্থী ২৬৫ জন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (আম) ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) ৯৬ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (একতারা) ৭৯ জন, জাসদের (মশাল) ৬৬ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (ছড়ি) ৬৩ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙ্গর) ৫৬ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (টেলিভিশন) ৪৫ জন, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪২ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ জন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের (ফুলের মালা) ৩৮ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩০ জন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির (হাতুড়ি) ২৬ জন, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১ জন, গণফ্রন্ট (মাছ) ২১ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৬ জন, জাতীয় পার্টি জেপি (বাই সাইকেল) ১৩ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১১ জন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১০ জন, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১০ জন, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৫ জন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (চাকা) ৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত পাঞ্জা) ৪ জন।

বিদেশি ও স্থানীয় ২৩ হাজার পর্যবেক্ষক:নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ১৮৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক মাঠে আছেন। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে চারজন, কমনওয়েলথ থেকে ১৭ জন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) থেকে ১২ জন, ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন থেকে ১০ জন, জাপান থেকে ১৬ জন, আফ্রিকান ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্স থেকে ১০ জন রয়েছেন। এছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের তালিকায় আছেন দেশি আরও ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করছেন।

বিচারিক হাকিম:

মাঠে ৬৫৩ বিচারিক হাকিম, ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট-অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি: নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অপরাধের বিচার করতে মাঠে রয়েছেন ৬৫৩ বিচারিক হাকিম। পাঁচদিন নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন তারা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবার রহমান সরকার বলেন, তিন থেকে সাত বছরের দন্ড দিতে পারবেন বিচারিক হাকিমগণ।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণের কাজে ৯ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও ১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবে ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক মাঠে থাকছেন। তারা যেকোনো অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবেন। এবার ভোটের সর্বশেষ আপডেট জানার জন্য 'স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি' অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটের সর্বশেষ পরিস্থিতির সঠিক তথ্য সম্পর্কে জনগণ যে কোনো জায়গা থেকে সহজে জানতে পারবে। এছাড়াও ভোটাররা তার ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম এবং অবস্থান জানতে পারবে। গোগল পেস্ন স্টোরে গিয়ে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।

ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক। ভোটের ফলাফল ঘোষণার জন্য ইসি ভবনের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে মূল মঞ্চ। মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সাংবাদিকদের জন্য স্টল। বিশাল তাঁবুর মধ্যে ছোট ছোট স্টলে সাজানো হয়েছে ফলাফল সংগ্রহের বুথ। সেখান থেকেই প্রচার করা হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল।

নির্বাচনের ব্যয়: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৩শ' কোটি টাকা। এ নির্বাচনে আসনপ্রতি ৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

\হভোটার উপস্থিতিই বড় চ্যালেঞ্জ

এবারের নির্বাচনের ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আশা নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, দেশের রাজনীতিতে 'গুরুত্বপূর্ণ' দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। পাশাপাশি তাদের শরিকরাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ ছাড়া, বিভিন্ন কারণে ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় আউয়াল কমিশনকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার আনার চ্যালেঞ্জে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রার্থীরাও।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গড়ে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ২৫৯টিতে জয়ী হন। তাদের শরিক দলগুলো ২৯টি আসনে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগসহ শরিক দলগুলো মিলে গঠিত মহাজোট ওই নির্বাচনে মোট ২৮৮টি আসন পায়। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হয়।

ওই সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদা বলেছিলেন, 'ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর জাতি মূলত ভোট উৎসবে মেতেছিল।'

এছাড়া, সর্বশেষ তিনটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল সবচেয়ে বেশি, ৮৭.১৩ শতাংশ। যা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বিগত ১১ জাতীয় নির্বাচন

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় মোট ভোটার ছিল তিন কোটি ৫২ লাখ পাঁচ হাজার ৬৪২ জন। ভোটে এক কোটি ৯৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৮৩ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোট পড়ার হার ছিল ৫৫ শতাংশ।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৭৯ সালের ২৮ ফেব্রম্নয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোটার ছিল তিন কোটি ৮৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৮ জন। এর মধ্যে এক কোটি ৯৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২৪ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। ভোট পড়ার হার ছিল ৫১.১২ শতাংশ।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন : তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল চার কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৯ জন। এ নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছিল দুই কোটি ৮৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৫০টি। ৫৯.৫৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছিল।

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল চার কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৯। নির্বাচনে দুই কোটি ৫৮ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৮ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। ৫৪.৯২ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ছয় কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৩। এ নির্বাচনে মোট তিন কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৩ জন ভোট দিয়েছিলেন। ভোট পড়েছিল ৫৫.৪৫ শতাংশ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ দুই হাজার ৪১২। ভোট দিয়েছিলেন এক কোটি ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮১ জন। যা মোট ভোটারের মাত্র ২৬.৫ শতাংশ।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৩ জন। ভোট পড়েছিল ৭৪.৯৬ শতাংশ। ভোট দিয়েছিলেন চার কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ৫৭৬ জন।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সাত কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৪ জন ভোটারের মধ্যে পাঁচ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৭৫.৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ছবিসহ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আট কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার তিনজনের ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই ভোটে সাত কোটি ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৫ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ নির্বাচনে গড়ে ৮৭.১৩ শতাংশ মানুষ ভোট দেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোটার ছিল নয় কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন। এ নির্বাচনে ১৫৩ আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্‌িদ্বতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৪০.০৪ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ সংসদীয় আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় গাইবান্ধা-৩ আসনে এক প্রার্থীর মৃতু্য হওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত করা হয়। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪০ লাখের বেশি। সেই হিসাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

প্রতিক্রিয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হতে পারে- এমন প্রশ্নে সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে যে উপনির্বাচনগুলো হয়েছে, সেখান থেকে দেখেছে যে কোনোভাবেই ভোট কাস্ট ৪০ শতাংশ হয় না। এবার বিএনপি নির্বাচনে নেই, সেহেতু কোনোক্রমেই ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়বে না।

৪০ শতাংশ ভোট পড়লে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যাবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আইনে বলা আছে ৫ শতাংশ ভোট পড়লেও সেটা আইনানুগ নির্বাচন। তবে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নির্ভর করে অন্য জিনিসের ওপর। ভোটার উপস্থিতির ওপর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নির্ভর করে না। যত শতাংশই ভোট পড়ুক না কেন সেটা আইনানুগ হবে। কিন্তু ভোট কম পড়লে সেটা নিয়ে কথা হবে।'

সুষ্ঠু ভোট করার ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনকে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে সাবেক ইসি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ শব্দগুলো প্রচন্ড আপেক্ষিক বিষয়। আমরা এবারই দেখছি, আওয়ামী লীগ সমর্থিত লাঙ্গলের প্রার্থী। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বলছেন, 'আমি নৌকার প্রার্থী, বিজয়ী হলে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করব'। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও বেশির ভাগই কিন্তু নৌকাবিরোধী নয়, তারা ব্যক্তিবিরোধী। কাজেই এবার দলীয় কোনো লড়াই থাকছে না। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির লড়াই চলছে। জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের, বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।'

তিনি বলেন, 'দল বাদ দিয়ে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির লড়াই হলে মারামারি-হানাহানি বাড়ে। এবার সংসদ নির্বাচনেও এমনটা হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদি দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় তাহলে মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড কম থাকে।'

বর্তমান কমিশনের প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে- উত্তরে তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগকে শুরু থেকে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর অবস্থান নেওয়া দরকার। তারা দৃষ্টান্তমূলক কঠোর অবস্থানে যদি না যায়, নিশ্চিতভাবে পরিবেশ কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করা সম্ভব হবে না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বিঘ্নিত হবেই।'

বর্তমান কমিশন সহিংসতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে কি না- এমন প্রশ্নে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এ কমিশন নিয়ে আমি কিছু বলব না। তবে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগ এক হলে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্ভব। যেটা ২০০৮ সালের পর আর কখনও হয়নি। ইতোমধ্যে দর্শকের ভূমিকা পালন করায় দু'জন ওসিকে বদলি করেছে কমিশন। এতেই বোঝা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এটা যদি চলতে থাকে তাহলে এ কমিশনের সুষ্ঠু ভোট করতে কষ্ট হয়ে যাবে।

\হতিনি বলেন, 'সরকারের অধীনে থেকে যারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে আসে তারা নির্বাচন কমিশনের আদেশ-নির্দেশগুলো খুব একটা মানতে আন্তরিক হয় না। এটা সাম্প্রতিক সময়ের কার্যক্রমেই দেখা গেছে। এ আন্তরিকতার আমূল পরিবর্তন না হলে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব থেকেই যাবে। এটি থেকে মুক্তি পাবে না নির্বাচন কমিশন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে