বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
জাতির উদ্দেশে ভাষণ

উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা পরাভূত করে নির্ভয়ে ভোট দিন : সিইসি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:২১
কাজী হাবিবুল আউয়াল

উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে ভোট দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালনের জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। শনিবার সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি এই অনুরোধ করেন।

নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় উলেস্নখ করে সিইসি বলেন, নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সহিংস পন্থা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পন্থায় জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাবে বলে প্রতিশ্রম্নতি ব্যক্ত করেছে। এতে জনমনে আস্থা সঞ্চারিত হয়েছিল। ঘোষিত হরতাল অবরোধের মধ্যে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা দৃশ্যমান হচ্ছে। ট্রেন, যানবাহন, নির্বাচন কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কারা দায়ী সেটি কমিশনের বিবেচ্য নয়।

সিইসি বলেন, 'নাশকতা ও সহিংসতার কতিপয় সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। তারপরও অলঙ্ঘনীয় সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনগণকে অনুরোধ করছি, আপনারা সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মূল্যবান নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন।'

নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না মন্তব্য করে সিইসি বলেন, নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগত প্রশ্নে মতবিরোধের কারণে এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সে রকম রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। নির্বাচনী সর্বজনীনতা প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। তারপরও ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সর্বমোট এক হাজার ৯৭১ জন প্রার্থী ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে

নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয় মর্মে আখ্যায়িত করা যাবে না।

তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রার্থী ও ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী ও ভোটার সাধারণকে নির্বাচন বিষয়ক বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সব কর্মকর্তাকেও আইন ও বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুধাবন, প্রতিপালন ও প্রয়োগ করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার সার্বিক বিষয়ে আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য, অসততা ও ব্যত্যয় সহ্য করা হবে না। নির্বাচন বিষয়ক আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রসমূহের পারিপার্শ্বিক শৃঙ্খলাসহ প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট, ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, অর্থের লেনদেন ও পেশিশক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে প্রার্থিতা তাৎক্ষণিক বাতিল করা হবে।

প্রয়োজনে কেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ সামগ্রিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ সময় তিনি জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ধরনের নির্বাচনী অনিয়ম-অনাচার প্রতিহত করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

'শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কঠিন হবে'

এদিকে, শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু

আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কোনো একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনতে কঠিন হবে। আশা করি- ভোটাররা আসবে। আরও ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, সেটা হয়তো দেখতে পারবেন।

সিইসি বলেন, ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ভোট কেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা হরতাল দিয়েছে (বিএনপি) তারাও বলেছিল তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, আগুন দেখে আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত। কোনো দল যদি এটি করে থাকে এটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের অনেকে এবারের নির্বাচনকে সিলেকশন বলছেন, তাহলে এই নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কি কোনো রাজনৈতিক দল? কমিশনের ওপর আস্থা থাকুক বা না থাকুক দলগুলোর মধ্যে আস্থা আছে? কোনো বিশেষজ্ঞ কী বলবেন যে, ১০ বছর নির্বাচন বন্ধ করুন, দলগুলো সমঝোতায় এলে ভোট করুন। তাহলে আমি নির্বাচন বন্ধ করে দেব?

সিইসি আরও বলেন, ইসির একজন কর্মকর্তাও ভোটগ্রহণের জন্য সম্পৃক্ত থাকবেন না। সেই ভোটগ্রহণের মধ্যেই যদি কারচুপি হয়, কিছু দায়ভার আমাদের ওপর আসবে। কেন্দ্রে সবসময় ক্ষমতার অধিকারী প্রিজাইডিং অফিসার। বারবার তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই দায়ভার আপনাকেও (সাংবাদিক) নিতে হবে। কেননা ভোটকেন্দ্রে মিডিয়ার অবাধ অধিকার থাকবে। তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। স্বচ্ছতা তুলে ধরতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেতে পারে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেকে সিলেকশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয় আরও কিছু বলছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ নয়। এ সংকট রাজনৈতিক।

'গ্রহণযোগ্যতার কোনো সুস্পষ্ট মানদন্ড নেই। কেউ বলবেন- গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি। আপনারা দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করেন। এতে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। গণমাধ্যমের প্রকৃত চিত্র উঠে এলেও মানুষ প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবে।'

অন্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮ লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভোটগ্রহণের সময় ভোটারদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। বড় দল ভোটবিরোধী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ হলে আমরা কিছু মনে করব না। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলবে, সেটা অপরাধ। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।

মার্কিন ভিসানীতির বিষয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে। কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ ও সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে। যারা এ ক্ষেত্রে বাধা তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবেন। আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা নিয়ে চিহ্নিত নই। কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়। ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী তা আমি বুঝি না। এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর।

এই নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে, সরকার কে হবে তা জানা, এই পরিস্থিতিতে আপনি বিব্রত কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই।

তিনি বলেন, আমি বলতে চাই- আমরা বিশ্বাস করি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছতামূলক নির্বাচন। স্থানীয়ভাবেই কেবল নয়, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক সেটা চাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে