বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কেন্দ্রে ভোটার কমানোর টার্গেট বিএনপির

দেশব্যাপী হরতাল আজ
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:২৩
কেন্দ্রে ভোটার কমানোর টার্গেট বিএনপির

নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না এমন সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে একাদশ সংসদ মেয়াদের পুরোটা সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে বিএনপি। কিন্তু রাজপথের প্রধান বিরোধী এই দলটি নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তবে আজ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিনে তাদের টার্গেট ভোটার কমানো। লক্ষ্য পূরণে দেশব্যাপী হরতাল পালনের পাশাপাশি ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, একদলীয় সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা এই জনপ্রিতিনিধিত্ববিহীন সরকারের কোনো হুমকি-ধমকি অথবা তাদের কোনো ভয়-ভীতিতে চিন্তিত হবেন না। আপনারা সাহসিকতার সঙ্গে ভোট বর্জন করুন।

ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণসহ নানাভাবে প্রচারণা চালিয়েছে দলটি। বিএনপি মনে করছে, এই প্রচারণায় জনগণ ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা জোরজবরদস্তি করলেও কেবল আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা ছাড়া অন্যদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারবে না। কারণ, 'একতরফা' ভোট নিয়ে মানুষের কোনো আগ্রহ-উৎসাহ নেই। এবার কোন প্রক্রিয়ায় কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে জনগণের কাছে তা একেবারেই স্পষ্ট। তাই ভোটের দিনও বিএনপির নেতাকর্মী যথাসম্ভব গ্রেপ্তার এবং সংঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোট বর্জনে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি সরকারি চাপে

দলের কেউ-ও যাতে ভোট দিতে না যায়, সেটাও নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।

জানা গেছে, আজ দিনব্যাপী মনিটরিং শেষে ভোটের সার্বিক চিত্র নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হবে। এ ছাড়া তথ্য-প্রমাণসহ সংগৃহীত উপাত্ত দ্রম্নততম সময়ে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশ্ব ও বিদেশি সংস্থার কাছে তুলে ধরবে দলটি।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, জনগণ ভোট বর্জন করলে নির্বাচন হলেও তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর এমন নির্বাচন এবার পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ, পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ভিসানীতি কার্যকর করেছে। তাই নেতাদের ধারণা, সরকার নির্বাচন করে ফেললেও দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নানামুখী পদক্ষেপ আসতে পারে। করে ক্ষমতাসীনরা ব্যাপক চাপের মুখে পড়বে। তাই নির্বাচনের পর আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের ইতিহাসে ৭ জানুয়ারি আরও একটি একতরফা পাতানো নির্বাচনের সবচেয়ে অন্ধকারময়-তিমিরাচ্ছন্ন অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। অভিনব মডেলের ডামি নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় থাকতে এক বিপজ্জনক খেলার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে অনুষ্ঠিতব্য এই ভোট রঙ্গ বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর বিপদের অতলে। ইতোমধ্যে এই তামাশার নির্বাচন বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

বিএনপির ডাকে দেশব্যাপী চলমান ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আজ রোববার ভোটের দিনও অব্যাহত থাকবে। মূলত 'একতরফা' নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে ডাকা এই হরতাল ঘিরে ভোটের দিন কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়াতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চলমান হরতালের সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে একতরফা নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে ভোটের পরের দিনও হরতালের ডাক দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া ভোটের দিনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হরতালের মেয়াদ আরও একদিন বাড়তে পারে। এরপর সমাবেশ, বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। নূ্যনতম দেড় থেকে দুই মাস কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান তারা।

এদিকে নির্বাচনের নামে প্রহসনের প্রতিবাদে গণতন্ত্র মঞ্চ আজ রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। জানতে চাইলে মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা দেশবাসীকে আসন্ন ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান-বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছি। ভোটারদের প্রতি আমাদের আহ্বান, নির্বাচনের দিন ভোটের সময়টাতে আপনারা বাসায় থাকবেন, ব্যক্তিগত কাজে ও পরিবারকে সময় দেবেন। একই সঙ্গে সচেতন নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে একজন মানুষ যেমন ভোটদানে বিরত থাকবেন, তেমনি তার পরিচিত আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অন্যরাও যাতে এই নির্বাচনী প্রহসনে অংশগ্রহণ না করে- সেই উদ্যোগ নেবেন, তাদের নিরুৎসাহিত করবেন। শোনা যাচ্ছে, টাকা দিয়ে ভোট কেনা হচ্ছে। কেউ টাকার কাছে ভোট বিক্রি করবেন না।

রাজধানীতে হরতালের সমর্থনে মিছিল

শনিবার ভোর ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে দেশব্যাপী এ হরতাল চলবে আগামীকাল সোমবার ভোর ৬টা। হরতালের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন।

রাজধানীর পরীবাগ থেকে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা হয়। নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, একতরফা নির্বাচন আয়োজন করতে যানবাহনে আগুন দেওর মতো পুরনো খেলায় মেতেছে সরকার।

নির্বাচন বর্জনের দাবিতে ও হরতালের সমর্থনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক দলের উদ্যোগে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষক দলের উদ্যোগে মিরপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ও সহস্বেচ্ছাবেক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর কাদির ভুইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে মালিবাগ বাজার-বিশ্বরোডে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল হয়।

বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর, ওয়ারী গেন্ডারিয়া, কোতোয়ালি এবং বংশাল এলাকা নিয়ে গঠিত জোন-৬ এর বিএনপি নেতাকর্মী হরতালের সমর্থনে মিছিল করে। খন্ড খন্ড মিছিল হয় এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। স্থানীয় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী অংশ নেন। এ সময় কবি নজরুল কলেজের ছাত্রদল সভাপতি সাঈদসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে