আজকের যায়যায়দিন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে গত ২৮ অক্টোবর থেকে দুর্বৃত্তরা সহিংসতা ও নাশকতা করে আসছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ওই দিন থেকে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৭১ দিনে সারা দেশে দুর্বৃত্তরা মোট ৩০৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনায় ৩০২টি যানবাহন ও ২৩টি স্থাপনা পুড়ে যায়। নিহত হন ৮ জন। আহত হয়েছেন ৫ জন। অগ্নিকান্ড নির্বাপণ করতে সারা দেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৫৩৯টি ইউনিট ও ২ হাজার ৯৫৯ জন কাজ করেন।

এদিকে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অন্তত ১৮ কেন্দ্র, ৬ গাড়ি ও ৪টি ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আমাদের অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে একটি বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র পাহারার দায়িত্বে থাকা এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাকে কে বা কারা কেন হত্যা করেছে তা নির্দিষ্ট করে পুলিশ জানাতে পারেনি।

শনিবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিসংযোগের শিকার যানবাহনের মধ্যে রয়েছে- মোট বাস ১৭৬টি, ট্রাক ৪৯টি, কাভার্ডভ্যান ২৫টি, মোটর সাইকেল ২১টি, পিকআপ ১০টি, ট্রেন ৫টি, সিএনজি ৩টি, প্রাইভেট কার ৩টি, মাইক্রোবাস ৩টি, লেগুনা ৩টি, নছিমন ১টি, ফায়ার

সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি ১টি, পুলিশের গাড়ি ১টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি। অপরদিকে ২৩টি স্থাপনার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯টি, বিএনপি অফিস ৫টি, আওয়ামী লীগ অফিস ১টি, পুলিশ বক্স ১টি, কাউন্সিলর অফিস ১টি, বৌদ্ধ মন্দির ১টি, বিদু্যৎ অফিস ২টি, বাস কাউন্টার ১টি ও ২টি শোরুম রয়েছে।

অতীত ভুলে সামনে তাকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ৬ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত এই ৭১ দিনের মধ্যে ৪৭ দিন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বাকি ২৪ দিন কোনো অগ্নিকান্ড ঘটেনি। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে ১ দিন, নভেম্বর মাসে ৩ দিন, ডিসেম্বর মাসে ১৭ দিন, জানুয়ারি মাসে ৩ দিন কোনো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেনি।

অপরদিকে দেখা গেছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ জানুয়ারি (সন্ধ্যা ৬টা) পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায়। এছাড়া দেশের ৪৩টি জেলায় আগুনের ঘটনা ঘটে। বাকি ২১টি জেলায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক কোনো অগ্নিকান্ডের সংবাদ ফায়ার সার্ভিস পায়নি।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে ৯০টি উপজেলায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক অগ্নিকান্ডের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস এবং বাকি ৪০৫টি উপজেলায় কোনো আগুনের সংবাদ পায়নি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা সিটিতে ১৩৭টি, ঢাকা বিভাগে ৫৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫টি, রাজশাহী বিভাগে ৩৮টি, বরিশাল বিভাগে ৯টি, রংপুর বিভাগে ১০টি, খুলনা বিভাগে ৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬টি, সিলেট বিভাগে ৬টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৩৭টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮৯টি ও ঢাকা উত্তর সিটিতে ৪৮টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মিরপুর এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। মিরপুরে ১৯টি, গুলিস্তানে ১৪টি, নয়াপল্টন-কাকরাইল এলাকায় ৮টি, খিলগাঁও-মুগদা এলাকায় ১৪টি, পোস্তগোলা-যাত্রাবাড়ী ১৪টি, মতিঝিল-আরামবাগ ৬টি, মোহাম্মদপুর ৮টি ও বারিধারায় ৬টি আগুনের ঘটনা ঘটে।

এদিকে জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুরে ৩০টি, চট্টগ্রামে ১৮টি, বগুড়ায় ১৫টি, নারায়ণগঞ্জে ৭টি, সিরাজগঞ্জে ৬টি, নাটোরে ৬টি, বরিশালে ৫টি, মানিকগঞ্জে ৪টি, ফরিদপুরে ৪টি এবং লালমনিরহাটে ৪টি আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস।

উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। গাজীপুর সদরে ১৪টি, বগুড়া সদরে ১০টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৮টি, নারায়ণগঞ্জ সদরে ৫টি, ফেনী সদরে ৫টি আগুনের ঘটনা ঘটে।

এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার পর ৩টি অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক এলাকার বাদামতলীতে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের কালুরঘাট স্টেশনের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ময়মনসিংহ নতুন বাজারে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ময়মনসিংহ ফায়ার স্টেশনের ২টি ইউনিট আগুন নিভায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বিদ্যালয়টিতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তাগাছা ফায়ার স্টেশনের ২টি ইউনিট আধা ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিভাতে সক্ষম হয়।