মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

সারাদেশে নৌকার জয়জয়কার

মোট আসন ২৯৯ রাত দেড়টা পর্যন্ত ঘোষিত আসন ২৭৬ আওয়ামী লীগ ২১৪ স্বতন্ত্র ৫০ জাতীয় পার্টি ১১ অন্যান্য ১
বিশেষ প্রতিনিধি
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১৮
সারাদেশে নৌকার জয়জয়কার

তুলনামূলক কম ভোটারের উপস্থিতি, কয়েকটি আসনে গোলযোগ আর অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে মোটাদাগে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। বিএনপির বর্জন আর হরতালের মধ্যে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ চলে। এরপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কেন্দ্রের ভেতরে লাইনে অপেক্ষমাণ ছিলেন, তাদের ভোট নিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসাররা।

ভোট শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয়ে যায় ভোট গণনা। এরপর একীভ‚ত ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। রিটার্নিং অফিসারের পাঠানো চ‚ড়ান্ত ফলাফল নির্বাচন কমিশন থেকেও ঘোষণা করা হয়। রাত দেড়টা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে ২৭৬ আসনের ফল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২১৪টি আসন। স্বতন্ত্র ৫০ ও জাতীয় পার্টি ১১ ও অন্যান্যরা পেয়েছেন ১টি আসন। সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটেছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কৃষক শ্রমিক লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুল রহমান, বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপি সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তৈমূর আলম খন্দকার এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাম, বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম হেরে গেছেন। বাকি আসনগুলোর অধিকাংশেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন।

ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘গুরুতর সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল।’

ভোট শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, বিভিন্ন আসন থেকে যে তথ্য তারা পেয়েছেন, তাতে ভোটের হার ৪০ শতাংশের মতো হতে পারে।

পরিপূর্ণ তথ্য আসার পর এটা বাড়তেও পারে, নাও পারে।

এর আগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮.৫% এবং বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫% ভোট পড়ার হিসাব নির্বাচন কমিশন দিয়েছিল।

ভোটের সকালে মুন্সীগঞ্জে একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নৌকার প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। তবে ওই হত্যাকাÐের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে।

অন্য দিকে, কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের কাশারিখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে নির্বাচনী সহিংসতায় নৌকার এক সমর্থক নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নোয়াব আলী-(৬০) নামে নিহত ওই ব্যক্তি উপজেলার ১০ নম্বর গুনাইঘর (দ.) ইউনিয়নের কাশারিখোলা গ্রামের মৃত আবদি মিয়ার ছেলে। তিনি নৌকা প্রতীকের সমর্থক ছিলেন। রোববার সকাল ১০টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে।

সারা দেশে ৪২ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে সাতটি কেন্দ্রের ভোট। ইসি সচিব জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, জাল ভোট পড়ায় এবং ভাঙচুর হওয়ায় এসব কেন্দ্রের ভোট বাতিল হয়েছে।

গতকাল বিকালে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘ছোটখাটো ৩০-৩৫টি জায়গায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও আমাদের পুলিশ অফিসারের গাড়ির গøাস ভাঙচুর করা হয়েছে। কোথাও ভোটকেন্দ্রের পাশে ককটেল ফোটানো হয়েছে। আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

জাল ভোট দেওয়ায় বা সে কাজে সহায়তা করায় এদিন ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দÐিতদের মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারও আছেন।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে একটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর ভোট বর্জন করেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী। পরে ওই বিদ্যালয়ের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র দুটির ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়।

নরসিংদী-৪ আসনের একটি কেন্দ্রে জোর করে ঢুকে ব্যালটের ১২টি বইয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারার ঘটনায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।

চট্টগ্রাম-১০ আসনের পাহাড়তলী কলেজ কেন্দ্রের বাইরে নৌকা ও স্বতন্ত্রের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে; তাতে দুজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে নৌকার কর্মীদের ধাওয়ার মুখে পড়েন।

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে একটি ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত দুইজন আহত হন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনায় ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক হয়।

ময়মনসিংহে একটি কেন্দ্রে ‘প্রকাশ্যে সিল মারা’ এবং ‘নৌকার পক্ষে’ কাজ করায় অভিযোগে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

কুমিল্লা-৭ আসনের চান্দিনা উপজেলায় তিনটি ভোটকেন্দ্রে আগে থেকে নৌকায় সিল মারা ব্যালট জব্দ করা হয়; পরে সেগুলো বাতিল করা হয়।

যশোরের একটি ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে আনসার সদস্য আহত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটেছে।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের রায়গঞ্জ উপজেলায় অন্যদের ভোট দিতে আসা দুজনকে আটকের পর ৬ মাস করে কারাদÐ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৫৫টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন যশোর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন।

মেহেরপুরে কেন্দ্রে ভোট প্রদানে বাধা দেওয়ায় তিনজনকে ৭ দিনের কারাদÐ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভোট শুরুর আগে এবং ভোট চলার সময় রাজধানীর তিনটি কেন্দ্রের বাইরে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুসহ চারজন।

অন্তত দুই ডজন আসনে বিরোধী দল লাঙ্গলের প্রার্থীরা ভোট প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।

ভোটকেন্দ্রগুলোতে সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রাখার বিষয়ে বারবার জোর দিলেও ভোটের দিন সকালে তেমনটি দেখেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘ভোটকেন্দ্রগুলোতে (সব প্রার্থীর) পোলিং এজেন্ট নেই। আসলে মনে হচ্ছে প্রতিদ্ব›দ্বী বা প্রতিপক্ষ প্রার্থী যারা, অনেকেরই বোধহয় সে সামর্থ্য (পোলিং এজেন্ট দেওয়ার) নেই, যা আমি এক্সপেক্ট করেছিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেন, ‘এদিন নির্বাচনটা যে আমরা সুষ্ঠুভাবে করতে পারছি, সে জন্য আমি আমার দেশের মানুষের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

মানুষ তার ভোটের অধিকার ‘ফিরে পেয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অনেক বাধা ছিল, অনেক বিপত্তি ছিল, কিন্তু দেশের মানুষ তাদের ভোটের প্রতি যে সচেতন হয়েছে। নির্বাচনটা যে জরুরি, কারণ পাঁচ বছর পর আরেকটা নতুন সরকার আসবে। জনগণ তার ইচ্ছামতো ভোট দেবে, সেই ভোট দেওয়ার পরিবেশটা আমরা তৈরি করেছি।’

নোয়াখালীতে নিজ আসনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। যারা নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে তারা পরাজিত হয়েছে। নির্বাচনের যে পরিবেশ আর ভোটারদের যে স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণ তাতে মনে হচ্ছে, যারা বর্জন করতে আহŸান করেছিল, ভোটাররা তাদেরই বর্জন করেছে।’

তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রংপুরের তোজাম্মেল হোসেন মেমোরিয়াল শিশু মঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটুকু খবর পেলাম, রংপুরের পরিস্থিতি ভালো, উপস্থিতিটাও স্বাভাবিক। তবে অন্যান্য জায়গা থেকে যেসব খবর পাচ্ছি সেগুলো স্বস্তিদায়ক নয়। আবার অনেক জায়গা থেকে পিসফুল খবরও পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে ভোটে নিয়ে এসে কোরবানি দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করা হয় কি না সেটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

বর্জন, অবরোধ ও হরতালের মধ্যে এবারের নির্বাচন হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেও তৎপরতা ছিল।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, ‘যে পরিমাণ ভোটার উপস্থিতির প্রত্যাশা ছিল, তার চেয়ে কম উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এরপরও শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হলে আরও ভালো হতো।’

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখের বেশি সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। এরপরও কিছু জায়গায় গোলযোগ, সংঘর্ষের খবর এসেছে। মুন্সীগঞ্জে একজনের মৃত্যুর খবর এসেছে।

তিনি বলেন, ‘একটু ভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচনটা হলো। অতীতের অন্য নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবার জাতীয় নির্বাচনের দিকে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর নজরও বেশি ছিল।’

ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবেদ আলী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে যা দেখেছি, ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। বর্জন, হরতাল, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নানা বাধার মধ্যে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক। আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আমরা পরে দেব।’

আমাদের প্রতিনিধি দলের পাঠানো খবর :

গাজীপুরে নৌকার এজেন্টকে মারধর

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর-৩ আসনের তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকার পর আধঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ ফের শুরু হয়।

রোববার দুপুর ১টা থেকে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়। আধঘণ্টা পর দুপুর দেড়টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটগ্রহণ পুনরায় শুরু হয়। ১নং বুথের ট্রাক প্রতীকের এজেন্ট ২নং বুথের নৌকা প্রার্থীর এজেন্টকে মারধর করায় ভোট সাময়িক বন্ধ থাকে।

কেন্দ্রের ১নং বুথের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট শফিকুল ইসলাম বলেন, এক ভোটার তার ব্যালট পেপার নিয়ে গোপন ভোট কক্ষে না গিয়ে টেবিলের ওপর প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারতে উদ্যত হন। বিষয়টি আমি প্রতিবাদ করায় ২নং বুথ থেকে ট্রাক প্রতীকের এজেন্ট মোস্তফা কামাল এসে তর্কে জড়ায়, এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করে। মারধরে চোখের নিচে জখম হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রের ২নং বুথের ট্রাক প্রতীকের মোস্তফা কামাল জানান, ওই ভোটারটা কিছু প্রতিবন্ধী ধরনের। তাই সে গোপন কক্ষে না গিয়ে সবার সামনে ব্যালটে সিল মারতে চাইলে তাকে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট বাধা দেয়। এতে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। মারধরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

নৌকার এজেন্ট আরও বলেন, সুস্থ সবল মানুষকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে উপস্থাপন করে ভোটে গÐগোল করার পথ খুঁজছে তারা।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. রায়হান খান জানান, একজন ভোটার তার প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারায় প্রতিবাদ করা নিয়ে সামান্য গÐগোল হয়েছে। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।

সিলেটে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

সিলেট অফিস জানায়, সিলেটের হরতালের সমর্থনে বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। দুপুরে পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে হরতালের সমর্থনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। এ সময় তাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে বিএনপির তিন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, ভোটকেন্দ্রের কাছে কিছু দুর্বৃত্ত বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

সোনাগাজীতে ব্যালট পেপার সিল

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনী-৩ আসনের সোনাগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক ব্যালট পেপারে ছিনিয়ে নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে সিল মারতে দেখা গেছে।

এ সময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রে প্রবেশের খবর পেয়ে সিল মারা বেশকিছু ব্যালট বক্সে ঢুকাতে পারলেও কয়েকটি পেপার বাইরে রেখেই স্থান ত্যাগ করেন প্রার্থী মাসুদ চৌধুরী সমর্থিত সরকারি দলের ওইসব নেতাকর্মীরা।

এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা কয়েকটি ব্যালট পেপার জব্দ করেছেন বলে জানা গেছে।

উক্ত কেন্দ্রে জাল ভোট ও অনিয়মের অভিযোগ করেন কয়েকজন প্রার্থী।

মাদারীপুরে সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটকচর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র দখল করাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর থেকে বিকাল পর্যন্ত সহিংসতা উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ভোটারদের মাঝে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও মস্তফাপুর, ঝাউদির তালতলাসহ কালকিনি কয়েকটি স্থানে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মাদারীপুর-১ ও ২ আসনের সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। কোথাও থেকে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের সমর্থক আকবর মাতুব্বর প্রথমে ভোট প্রদানে বাধার সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ করেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক আফজাল মুন্সী। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা যায়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রের সামনে জড়ো হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ভোটকেন্দ্র দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। পরে ব্যর্থ হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পরপর ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল হাসান জানান, দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনার খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একযোগে কাজ করেন।

মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম, জাতীয় পার্টি মো. আব্দুল খালেক, তৃণমূল বিএনপির প্রবীন হালদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস।

কাউখালীতে ‘ফাঁকা গুলিবর্ষণ’

কাউখালী(রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগের রাতেই পাহাড়ি গ্রামে গুলির খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের কোলাপাড়া এলাকায় তিনটি ফাঁকা গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনও গুলিবর্ষণের ঘটনার নিশ্চিত করেছে।

অভিযোগ উঠেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য স্থানীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ সময় তিনটি ফাঁকা গুলি করা হয়। এলাকাটি পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা হওয়ায় অভিযোগের তীর ইউপিডিএফের দিকেই। তবে এ ঘটনায় ইউপিডিএফ বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কাউখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, ‘কোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের কেন্দ্র রয়েছে। ভোটকেন্দ্রের পাশে গুলির শব্দ শোনা গেছে। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে বিজিবি, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা গেছেন।’

কাউখালীর ইউএনও এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। কী উদ্দেশ্যে এমনটি হলো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এখানে বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ- সবাই কাজ করছে।’

ঈশ্বরদীতে ককটেল ও গুলিবর্ষণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সঙ্গে আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে তিন দফা ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আজ (রোববার) দুপুর সাড়ে ১২টা ও সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী সাড়া ইউনিয়নের গোকুলনগরে, মাঝদিয়া মাদ্রাসা মাঠে ও শহরের স্কুলপাড়া মোড়ে এসব ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সদস্যরা জানান, দুপুরে ঈশ্বরদী-লালপুর মহাসড়কের গোকুলনগরে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ৮-১০ জনের একটি দল মুখ বেঁধে ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ, কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। খবর পেয়ে নৌকার প্রার্থী গালিবুর রহমান শরীফের ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমালের নেতৃত্বে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এর আগে সকালে ভোট শুরু হওয়ার আগে মাঝদিয়া মাদ্রাসা ও শহরের স্কুলপাড়া মোড়ে ৪-৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী ঘটনাস্থল থেকে জানান, নাশকতা সৃষ্টির জন্য একটি গ্রæপ পৃথক তিনটি স্থানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়েছে। এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে কাউকে আটক করা যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে