মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে :বিএনপি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে :বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের আন্দোলনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এটা একটা ভুয়া নির্বাচন। জনগণ ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে এক অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা শুধু নির্বাচনকেই বয়কট করেনি, ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগকেও বয়কট করেছে। এই নির্বাচনে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, আওয়ামী লীগের বিবেকবান লোকও ভোট দিতে যায়নি। সব মিলিয়ে ২ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে যায়নি।

রোববার গুলশানে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান তার বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একতরফা নির্বাচন বর্জনের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপিসহ ৬২ দল এই নির্বাচন বয়কট করেছে। তাই বিএনপির নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এই ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতাকর্মী ভোটকেন্দ্রে যায়নি। কারণ, তারা জানে যে, তাদের প্রার্থী এমনিতেই পাস করবে। সে জন্য ভোটকেন্দ্রে এসে নিজেদের সময় নষ্ট করতে চায়নি।

ভোটের হার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, আজকে যদি নির্বাচন কমিশন শত শত মিডিয়ার সামনে বলেন, ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, তাহলে সেটা কি নিষেধ করা বা না করা বা প্রতিবাদ করার কোনো রাস্তা বাংলাদেশে আছে? এ জন্যই তারা সেটা বলবে। সরকার যেটা বলে, সেটাই তারা উপস্থাপন করছে। সেখানে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ কি বলল এর তো কোনো মূল্য নেই। সেই কারণেই তো আমাদের এই আন্দোলন, জনগণের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা।

ডক্টর মঈন খান বলেন, প্রহসনের তামাশার ভোট, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করছে, সেখানেও এই অবস্থা। আমরা কি কারণে ভোট বর্জন করেছি, তা প্রমাণিত। এখন যতই রিগিং করে ভোটের হার বাড়ানোর চেষ্টা করা হোক না কেন, জনগণ আর তা বিশ্বাস করবে না।

ভোট বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে আবদুল মঈন খান বলেন, নিশ্চয়ই সফল হয়েছে। এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের লগিবৈঠার আন্দোলন আন্দোলন না। বিগত ১৫ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখ বানোয়াট গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে, ৫০ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এ রকম ঘটনা নেই।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গরু-ছাগল দেখা গেছে, এবারের ভোটের দিন যুক্ত হয়েছে বানরও। এই শীতের সকালে শত শত ভোট কেন্দ্রের সামনে কুকুর রোদ পোহাচ্ছে। সিংহভাগ ভোটকেন্দ্র প্রায় ভোটারশূন্য অবস্থায় ছিল। কি ভোট হয়েছে,

সেটা সারা বিশ্ব দেখছে, বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। তাই নির্বাচন কমিশন কি ঘোষণা করল, এতে কিছু যায় আসে না বলেও দলটি মনে করছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জনের যে আহ্বান জানিয়েছে, তা জনগণ মেনে কেন্দ্র যায়নি। এতে বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা আনন্দিত। জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে। ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। আগের রাতে অনেক ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়েছে। রাত থেকেই অনেক ঘটনা জানতে পেরেছি। নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে। যা প্রমাণ হয়েছে নির্বাচনের দিন সকালে অনেক ব্যালট পেপারের বইয়ে শুধু নৌকা মার্কায় সিল দেখা গেছে। তাহাজ্জুদের নামাজের সময় ভোট চুরি করেছে। নিজেরা নিজেরা ভোট করেও আবার এই ডাকাতির আশ্রয় নিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, দোহারে শিশু বাচ্চাদেরও ভোট দিতে দেখা গেছে। এ এক অভিনব কায়দা। সরকারের কোনো লজ্জাও নেই। কেন্দ্র ফাঁকা, অথচ বলে বেরাচ্ছে ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে। এই ভোট কোথা থেকে আসবে। ভোটের হার বাড়িয়ে দেখানোর সব আয়োজন চলছে। জনগণ এত বোকা নয়। হুমকি-ধমকি দিয়ে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও সত্যকে আড়াল করা যাবে না। জনগণ সরকারের ধোঁকাবাজির চরিত্রটা দেখছে। রোববার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী অভিযোগ করেন, ভোটকেন্দ্রে লাইন দীর্ঘ করার জন্য কোনো কোনো জায়গায় নার্স, আবার অনেক জায়গায় ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসা হয়। ছবি তোলার জন্য ডামি লাইন করা হয়। কেন্দ্রের বাইরে ভোটার নেই, কিন্তু ভেতরে নৌকায় সিল মারছে- এসব ভিডিও এখন ভাইরাল। বেশিরভাগ জায়গায় প্রকাশ্যেই সিল মেরেছে। নির্বাচন ও গণতন্ত্র এসব বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগ। যার প্রতিফলন এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঘটেছে।

হরতাল সমর্থনে বিএনপিসহ সমামনা দলের বিক্ষোভ

চলমান অসহযোগ আন্দোলন ও 'একতরফা' নির্বাচন বর্জনে ঘোষিত সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি সফলে বিএনপিসহ গণতন্ত্র মঞ্চ ও সমমনা অন্যান্য দল ও জোট মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ভোট শেষ হলেও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন-কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপি ও মিত্ররা। আন্দোলনে বিরতি না দিয়ে আগামীকাল থেকে বিএনপি নতুন কর্মসূচি শুরু করা হতে পারে। সরকার পতনের 'এক দফা' দাবি আদায়ের পরবর্তী কর্মপন্থা দ্রম্নত ঠিক করা হবে। এ ক্ষেত্রে কালো পতাকা মিছিল বা সমাবেশের চিন্তা করা হচ্ছে।

রোববার সকালে ঢাকার কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে এয়ারপোর্ট অভিমুখে সড়কে মিছিল ও পিকেটিং করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের সব মানুষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন করেছে। এটা একতরফা নির্বাচন। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষও যায়নি। অথচ একতরফা নির্বাচনেও সরকার শনিবার গভীর রাতে তাহাজ্জুদের সময় ব্যালট বাক্স ভরে ফেলেছে।

দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের এক সমাবেশে নেতারা বলেন, 'ডামি ভোটের নির্বাচন' বলে 'জনগণ এই ভোট বর্জন করেছে। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভয়ভীতি, গ্রেপ্তার চালিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ভোটাররা ভোট দিতে যায়নি। মিডিয়াতে ভোটকেন্দ্রগুলোর যে চিত্র উঠে এসেছে, এতে এটা পরিষ্কার যে, জনগণ এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আগামীতে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে বলেও জানান মান্না।

বাংলাদেশের বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া দেয়নি। এই ডামি নির্বাচন বর্জনের ডাকে জনগণ সাড়া দিয়েছে। সরকারের নাশকতা ও উসকানি মোকাবিলা করে তারা ভোট বর্জন করেছে।

নেতারা বলেন, ৭ জানুয়ারি যেমন বাংলাদেশের জন্য সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকির ফেলানি দিবস, তেমনি আজকে রচিত হলো দেশের জন্য কালো দিবস। আজকের দিন ক্ষমতাসিনরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকেও কাঁটাতারে ঝুলিয়ে দিয়েছে। জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে মঞ্চের অন্যান্য শরিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের একতরফা, ডামি নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের এই ভোট বর্জন ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে থাকবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও পল্টন এলাকায় ১২-দলীয় জোট আয়োজিত হরতাল ও গণকারফিউর সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্যে এসব কথা বলেন নেতারা।

এর বাইরে এলডিপি, গণফোরাম, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোটসহ অন্যান্য দলের উদ্যোগেও অভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে