বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

হিমেল হাওয়ায় কাবু ঢাকাবাসী

দেশের বেশিরভাগ এলাকা কুয়াশাচ্ছন্ন ২১ জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দক্ষিণাঞ্চলে বুধবার হতে পারে বৃষ্টি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুর ও বদলগাছীতে অনেক স্কুলেই হয়নি পাঠদান
যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হিমেল হাওয়ায় কাবু ঢাকাবাসী

এবার মাঘ আসার আগে থেকেই তীব্র শীতের কবলে পড়ে রাজধানীবাসী। তবে গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমেল হাওয়া। যা শীতের প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার সকালে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে। এতে করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষ ও ছিন্নমূলদের অবস্থা বেশ শোচনীয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজধানীর। অন্যদিকে, দেশের বেশিরভাগ এলাকা কুয়াশায় ঢাকা। যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জসহ ২১ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এর মধ্যেই বুধবার হতে পারে বৃষ্টি। তবে বৃষ্টি হবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবং তা মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত আসতে পারে।

আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুর ও বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল

\হটেকনাফে ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ঢাকায় তাপমাত্রা আরও এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। একেবারে শৈত্যপ্রবাহ বইবে, এটি বলা যাচ্ছে না। তবে কনকনে বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা আরও কিছুটা বাড়তে পারে ঢাকায়।

এদিকে যেসব এলাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়, সেসব এলাকার স্কুল বন্ধ রাখা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সোমবার পাঠদান হয়নি।

ভোগান্তিতে নগরবাসী

শীতের প্রকোপে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। সকালে চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত গরম কাপড় পেঁচিয়ে যার যার গন্তব্যে ছুটে যেতে দেখা গেছে।

সকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে মতিঝিলের অফিসে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মালিহা রহমান। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'বাসায় ঘরের কাজ করতে করতে ঠান্ডা এত বেশি বুঝতে পারিনি। বের হয়েই জমে গেছি। এখন মনে হচ্ছে আরেকটা শাল নিয়ে বের হওয়ার দরকার ছিল।'

পল্টনের সরকারি অফিসের চাকরিজীবী পলি সরকার বলেন, 'কাঁপতে কাঁপতে অফিসে এসেছি। বুঝতেই পারিনি আজ এত বেশি হবে ঠান্ডা। অফিসের দরজা-জানালা সব আটকানো, তাই ঠান্ডা কিছুটা কম। তবে বাইরে যারা কাজ করছেন, তাদের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। আমি তো বের হয়ে বাসায় কীভাবে যাবো, সেটা নিয়েই চিন্তায় আছি।'

রিকশাচালক শহিদুল বলেন, 'রাতে শীতে ঘুমাতেও পারিনি। এখন ভোরে উঠে কাজে বের না হলে পেটেও কিছু পড়বে না। বাধ্য হয়েই কাজে বের হইছি। এখনই হাত-পা বরফ হয়ে যাইতেছে। দুপুরের পর মনে হয় আর রিকশায় চালাতে পারমু না।'

ঢাকায় অনেকেই ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালান। তীব্র শীতে নাকে-মুখে মাফলার পেঁচিয়ে, হাতে মোজা পরে কেউ কেউ মোড়গুলোতে অপেক্ষা করছেন যাত্রীর। তবে ঠান্ডায় মোটর সাইকেলে যাত্রী তেমন একটা উঠছেন না।

এদিকে ফুটপাতে যেসব হকার ছোটখাটো ব্যবসা করেন, তীব্র শীতে তারাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই দোকানই খোলেননি। কয়েকজন শীত উপেক্ষা করেই পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। পল্টন মোড়ের হকার আক্কাস আলীর বলেন, 'পরিচিত দোকানদারদের অনেকেই আজ ফুটপাতে বসেননি। তবে দোকান না খুললে খাবো কী, পেটের টানে বাধ্য হয়ে বসেছি। শীত বাড়লে বিক্রি বাড়ে, তাই এই শীতেও আমরা বসছি। তবে সারা দিন থাকা যাবে কিনা, বুঝতেছি না।'

সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন ফুটপাতে থাকা ভাসমান মানুষ। পল্টনে, মতিঝিলে, প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায়, ফকিরাপুলে এমন অনেক মানুষের দেখা পাওয়া যায়। কেউ কেউ দিনের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।

কষ্টে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ

হাঁড়কাপানো শীতে কষ্টে আছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ। শীতের দাপটে ঠান্ডাজনিত অসুখবিসুখে ভুগছেন শিশু ও বয়স্করা। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে।

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সোমবার কিশোরগঞ্জের নিকলী আবহাওয়া অফিস সর্বশেষ শীতের তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১০.৫০ সেলসিয়াস। হাওড়ের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তি মালিকানা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের কাঁপুনিতে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত শীতের সাথে সাথে ঝির ঝির বাতাস বয়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগ, ডায়রিয়া ও কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধরা। বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের সিটে কাতরাচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধ।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলার ওপর দিয়ে দুই দিন ধরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র ঠান্ডায় বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শ্রমজীবী ও নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরের মানুষগুলো। অপর দিকে শৈত্যপ্রবাহের কারণে জেলার সব প্রাথমিক ও ম্যাধমিক বিদ্যালয়ে বন্ধ রয়েছে। সোমবার সকাল ৬টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের সাথে উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে গোটা জনপদ। তীব্র ঠান্ডার কারণে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। কুড়িগ্রামে প্রায় দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, শীতার্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ৭০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, জেলা শৈত্যপ্রবাহ থাকলে সব স্কুল বন্ধ থাকবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্কুল খুলবে। এরকম একটি চিটি জেলার ৯ উপজেলায় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমরা প্রতিদিন সকাল ৯টার মধ্যে তাপমাত্রার খোঁজখবর রাখছি।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ রকম তাপমাত্রা আরও দুই-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

আমাদের রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় সোমবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। প্রচন্ড ঠান্ডায় এ অঞ্চলের মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় ধাপে শৈত্যপ্রবাহে মানুষ নাকাল হয়ে পড়েছেন। শৈত্যপ্রবাহ হলেও সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণে তেমন সাড়া দিচ্ছে না। ফলে অসহায় দুস্থ মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। সরকারিভাবে মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে। তাই অনেকে একটু উষ্ণতা নিতে খড়কুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিচ্ছেন।

প্রচন্ড ঠান্ডা ও শীতের কারণে গত দুই সপ্তাহে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে গেছে। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভিড় করছেন রোগীরা। তবে চিকিৎসা সেবায় কোনো ওষুধের ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় শীতজনিত কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধি জানান, জেলার শ্রমজীবী মানুষগুলো সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, সোমবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমের সবনিম্ন তাপমাত্রা।

এদিকে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় পাবনা জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোমবার একদিনের জন্য বন্ধ ছিল।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকাল ৯টায় নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। চলতি মৌসুমে এটাই জেলায় রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি বিবেচনায় এদিন জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের ১ হাজার ৩৭৪টি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলো সকাল ১০টার আগে শুরু হয় না। তাই সকাল ৯টার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা সম্ভব নয়। এরপরও সোমবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে গত কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহে নওগাঁর হাসপাতালগুলোতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সি রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। বর্তমানে শহরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অনেক রোগীকে শয্যা সংকটে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছেন, যা চরম দুর্ভোগে ফেলেছে রোগীদের।

২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও ভারপ্রাপ্ত) আবু আনছার আলী বলেন, শীতজনিত রোগ এখন শিশু আর বয়স্কদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। সব বয়সি মানুষই সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৪ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যতক্ষণ আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।

সোমবার শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর হলেই জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ। ঘর থেকে বেরিয়ে বাজারে আসার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তাদের অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। হতাশ হয়ে আবারও ফিরে যেতে হচ্ছে বাড়িতে। তীব্র শীতের কারণে কাজের সংকট দেখা দেওয়ায় এসব মানুষের জীবনযাত্রায় বেশ প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও গরম কাপড়ের অভাবে চরম বেকাদায় পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিন শীষ বলেন, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, কনকনে ঠান্ডার সাথে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে যশোর। জবুথবু অবস্থায় প্রাণীকুলের। এরইমধ্যে জেলাতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। সোমবার যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলেও জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। 'পূর্বাভাস জটিলতায়' মঙ্গলবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি শিক্ষা অফিস।

খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা) খোন্দকার রুহুল আমীন জানান, যশোরে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দশ ডিগ্রির নিচে ছিল। কিন্তু স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয় পূর্বাভাসের ওপরে ভিত্তি করে। মঙ্গলবার যদি দশ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামার পূর্বাভাস থাকে তাহলে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

রংপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার থেকে তিন দিন জেলার সব প্রাথমিক স্কুলের পাঠদান বন্ধ থাকবে। তবে অফিস খোলা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।

রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টায় পর্যন্ত রংপুরে ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

পাবনা প্রতিনিধি ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় পাবনা জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোমবার বন্ধ ছিল।

এর আগে রোববার রাতে পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা ও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রোস্তম আলী হেলালী স্বাক্ষরিত পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল বন্ধের কথা জানানো হয়েছে।

এদিকে, ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলেও জানিয়েছেন ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন।

ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুবির কুমার দাশ বলেন, তাপমাত্রা কম থাকার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, উত্তরে হিমেল হওয়া ও ঘন কুয়াশায় টাঙ্গাইল জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সোমবার সকালে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কনকনে শীতে এরই মধ্যে পাঁচ মাস বয়সি দুই যমজ শিশুর মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দিনভর শীতের তীব্রতা থাকায় জনজীবন এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম সাধারণ ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলবাড়ীসহ জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতিকুর রহমান জানান, প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এ কথা বিবেচনা করে রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. মোজাহিদুল ইসলাম, মহপরিচালকের সাথে পরামর্শ ক্রমে মঙ্গলবার ও বুধবার জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমি কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

অপরদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূর আলম জানান, আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি দুই দিন ছুটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার জেলায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে