শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পদ ধরে রাখতে বিএনপি নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

হাসান মোলস্না
  ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
পদ ধরে রাখতে বিএনপি নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

বিএনপিতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে পদধারী নেতারা বেশ আতঙ্কে আছেন। মূল ও অঙ্গ দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তার জন্য পদ হারানোর ভয়ে প্রভাবশালীদের দ্বারস্ত হচ্ছেন। পদে বড় নেতাদের চেয়ে নির্দিষ্ট বলয়ে থাকা কার্যকরী নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে বহুগুণে।

জানা গেছে, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় শিগগির অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি ভেঙে দিতে যাচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলসহ সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এসব সংগঠনে আগামীতে কাদের নেতৃত্বে আনা যায় এবং কমিটির বর্তমান শীর্ষ নেতাদের কোথায় পদায়ন করা হবে- সেগুলো নিয়ে এখন দলের ভেতরে কাজ চলছে। এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলেই পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কমিটিই বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্বে অঙ্গ সংগঠনগুলো সাজানো হবে। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় ১৩০টি পদ এখন শূন্য। অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের মধ্যেই মূল দলের শূন্য পদ পূরণের কার্যক্রম চলবে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুটি শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে বর্তমান দায়িত্বে থাকা নেতারা নানাভাবে পদ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পদে

আসতেও অনেক নেতা নানাভাবে তদবির শুরু করেছেন।

জানা গেছে, আন্দোলনে ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে এবার নেতৃত্ব ঠিক করা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কার্যক্রমের পর্যালোচনা হয়েছে। দলীয় পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, আন্দোলনের সময় সারাদেশে তৃণমূল নেতাকর্মী সাধ্যমতো রাজপথে থাকার চেষ্টা করলেও দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকেরই খোঁজ ছিল না। এ ছাড়া এর আগের নির্বাচনে দলের ছয় শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দায়িত্বশীল কিছু নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আন্দোলন অনেকটা চুপসে যায়। দলের সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনা হলেও আরও বেশকিছু জটিলতা তৈরি হয়। কারাগারের বাইরে থাকা নেতাদের মধ্যে শীর্ষ কয়েকজন নেতা হাইকমান্ডের সঙ্গে পর্যন্ত যোগোযোগ করেনি। ফলে বিদেশে থাকা কয়েকজন নেতাকে দিয়ে আন্দোলন সমন্বয় করতে হয়েছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের নেতাদের বেশিরভাগই মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে ছিলেন। এসব পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী আন্দোলন সামনে রেখে রাজপথের সক্রিয় নেতাদের দিয়ে দল ও অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এরপরও পদ হারানোর আতঙ্কে থাকা নেতাদের অনেকে অতিরিক্ত সুবিধা পেতে শক্তিশালী বলয়ের সদস্যদের পিছু ছুটছেন।

সূত্রমতে, আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা নেতারা তদবিরের জন্য শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তাদের কাছে তদবির নিয়ে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ লন্ডনে থাকা একটি চক্রের সদস্যদের কাছে সবচেয়ে বেশি ধরনা দিচ্ছেন তারা। এর বাইরে দীর্ঘ ৯ বছর দেশের বাইরে থাকা তারেক রহমানের আস্থাভাজানদের মধ্যে অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও পদপ্রত্যাশী একটি বড় অংশ যোগোযোগ করছেন। ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে আন্দোলন সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের কাছে সবচেয়ে বেশি ছুটছেন পদ ধরে রাখাতে আগ্রহীরা। কারণ বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব থাকা বকুল দেশে থাকা নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী। এই বকুল ছাত্রদলের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বে থাকার পরও এই সংগঠনটি আন্দোলন সফলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এরপরও সম্প্রতি গঠিত ছাত্রদলের কমিটির নেতা নির্বাচনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর বাইরে যেসব পদপ্রত্যাশী প্রভাবশালী চক্র ও সুনির্দিষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না তারা যেসব নেতা হাইকমান্ডের খুব কাছের, তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। আবার অনেকে নানাভাবে হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের কারাবন্দি গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মুক্তি চেয়ে পোস্টার, বিলবোর্ড করেছেন। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় এমন অনেক পোস্টার ও বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে। ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তির পর 'যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলে চমক আসছে' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেককে এমন পোস্ট দিতে দেখা গেছে।

দল পুনর্গঠন ঘিরে আলোচনা, সমালোচনা, লবিং, তদবির শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বশীল পর্যায়ের কোনো নেতা কিছু বলতে নারাজ। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নতুন করে কোনো কমিটি হবে কি না তা নিয়ে দলে কোনো আলোচনা কিংবা সিদ্ধান্ত নেই। এমন কোনো কিছু হলে তা জানানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে