সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফেনীতে বাঁধের ১০ স্থানে ভাঙন, ৪০ গ্রাম পস্নাবিত

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীতে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত -সংগৃহিত

ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীতে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১০টি স্থানে ভাঙনে অন্তত ৪০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার পরিবার।

কোমর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শুক্রবার রাত থেকে ফেনী-পরশুরাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভেসে গেছে শত শত মাছের পুকুর ও ঘের।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, শনিবার সকাল ৯টায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীতে সর্বোচ্চ ২৫৫ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে শুক্রবার রাতে।

এ ছাড়া শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ বছরের সর্বোচ্চ।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, পানির চাপে পরশুরাম উপজেলার বক্স মাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর নামক স্থানে দুটি জায়গায়, সাতকুচিয়ায় দুটি জায়গায়, পরশুরাম পৌরসভার দুবলা চাঁদ, চিথলিয়া ইউনিয়নে নোয়াপুর, দক্ষিণ শালধর, জঙ্গলঘোনা, মির্জানগর ইউনিয়নে পূর্ব সাহেব নগর, পশ্চিম মির্জা নগরসহ মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি জানান, মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগরের সিলোনিয়া নদীর বেডিবাঁধের একটি স্থানে ভাঙনের উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, কাউতলী ও দাসপাড়া গ্রামের প্রায় তিনশত পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

চিথলিয়া ইউনিয়নের শালধর গ্রামে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙনে দক্ষিণ শালধর, মালীপাথর, পাগলীরকুল গ্রামে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের দক্ষিণ টেটেশ্বর গ্রামে কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনে দক্ষিণ টেটেশ্বর, সাতকুচিয়া, কহুয়া, চারিগ্রাম, বাঘমারা, জমিয়ারগাও গ্রামে প্রায় আটশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাপলা বলেন, পরশুরাম পৌরসভার বাজার সংলগ্ন মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাউতলী রাস্তার দুটি স্থানে এবং পরশুরাম থানা সংলগ্ন একটি স্থান দিয়ে বাজারের দিকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, পৌরসভার বাউরপাথর, বাউরখুমা, দুবলাচাঁদ, কোলাপাড়া, অনন্তপুর, উত্তর গুথুমা, বেড়াবারিয়া গ্রামে প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে পরশুরাম পৌরসভার উত্তর বাজার এলাকায় বন্যার কারণে আটকে যাওয়া প্রায় ১০ পরিবারকে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে ৫৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, মুহুরী নদীর পানি শনিবার সকালে বিপৎসীমার ১৫৬ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে শুক্রবার রাতে বিপৎসীমার ২০০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ২৮টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এদের মধ্যে ফুলগাজীর ছয়টি, আমজাদহারট পাঁচটি, মুন্সিরহাটে ৯টি, দরবারপুর পাঁচটি, আনন্দপুরের তিনটি গ্রাম রয়েছে।

পানিবন্দি হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। দুর্যোগ মোকাবিলায় ফেনী জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

দক্ষিণ টেটেশ্বর গ্রামের সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুন বলেন, গত ৩০ বছরেও এমন বন্যা দেখি নাই। আজ দুদিন হলো পানিবন্দি, কিন্তু কেউ কোনো খবরও নেয়নি। চুলা পানিতে নিমজ্জিত। রান্নার উপায় নেই।

পাগলীরকুল গ্রামের হারিস মুন্সী বলেন, 'প্রতিবছর বর্ষায় নদীর বাঁধ ভাঙে। আমরা বাঁধসংলগ্ন গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হই। বছরের পর বছর আমাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলেও স্থায়ী কোনো সমাধান পাই না। আমাদের দুঃখ কেউ দেখে না।'

কৃষক আবদুল আলিম বলেন, 'এক মাসের ব্যবধানে দুইদফা বন্যায় সবজি ও আমন ধানের বীজতলা পানিতে ভেসে গেছে। এবার রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে, এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো গতি দেখছি না।'

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীতে পানি আরও বাড়তে পারে।

নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর দুপাশে ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। গত মাসে বাঁধের ১১টি স্থানে অন্তত দেড়শ মিটার ভেঙেছিল। এর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেগুলো মেরামত করা হয়েছে।

'ফের নতুন করে যেগুলো ভাঙছে পানি নেমে গেলে ভাঙন স্থানগুলো মেরামত করা হবে। আর যেন বাঁধের কোনো স্থান ভাঙতে না পারে সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছে।'

ফেনী জেলা প্রশাসক মোছাম্মদ শাহীনা আক্তার বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় বন্যার বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করছেন। বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, শুক্রবার বিকালে ভাঙনকৃত এলাকা পরিদর্শন করেছি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নতুন করে মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ শুরু হবে।

'এ নিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পের একটি সমীক্ষা চলছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উত্থাপন করা হবে।'

এ নদীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ হলে আশা করি ভবিষ্যতে এ ধরনের পস্নাবন হবে না, বলেন সংসদ সদস্য।

গত ৪৮ ঘণ্টায় টানা বর্ষণে ফেনী শহরের বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের শহীদ শহীদুলস্না কায়সার সড়ক, মিজান রোড, একাডেমি রোড, শান্তি কোম্পানি সড়ক, শান্তিধারা আবাসিক এলাকা, পুরনো পুলিশ কোয়াটারসহ নিচু এলাকায় হাঁটুপানি জমে গেছে। থই-থই পানিতে বিগত দুদিন ধরে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী।

তবে পানি নিরসনে নিরলস কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভা মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি। বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে