দেশে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই মৃতু্য ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। যা চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃতু্য। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে এ বছর প্রাণ গেল ২১০ জনের।
অন্যদিকে, একই সময় সারাদেশে ৯১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১ হাজার ৮১৯ জন। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর এক দিনে আটজন করে মারা যান এই রোগে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু সংক্রমণের চিত্র আগ্রাসী হয়ে উঠছে। এখন প্রয়োজন যাথাযথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এটা জোরদার করা জরুরি। সম্ভাব্য সব প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন তারা।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এক দিনে যে ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে, তাদের মধ্যে ছয়জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ছাড়া বরিশালে দুইজন, চট্টগ্রামে একজন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃতু্য হয়েছে।
শনিবার এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯১৫ জন রোগী। এতে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮১০ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শনিবার ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৪৩ জন, ঢাকা বিভাগে ৮৮, ময়মনসিংহে ৪৫, চট্টগ্রামে ১৯৭, খুলনায় ৯৭, রাজশাহী বিভাগে ২৪, রংপুর বিভাগে ৯, বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন এবং সিলেট বিভাগে
চারজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৪৯ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৬৫১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১৮৪৯ জন; আর ১৮০২ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
এ বছর মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে ২৩ হাজার ৮৫১ জন ঢাকার বাইরের রোগী। ঢাকার দুই মহানগর এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭ হাজার ৯৫৯ জন।
সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ২৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ওই মাসেই সবচেয়ে বেশি ৮৩ জনের মৃতু্য হয়েছে।
অক্টোবরের প্রথম ১২ দিনে ১০ হাজার ৮৭২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃতু্য হয়েছে ৪৭ জনের।
এর আগে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এক হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃতু্য হয়েছে তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন, যাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃতু্য হয়েছে। এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃতু্য হয়েছে দুইজনের। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃতু্য হয়েছে ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃতু্য হয়েছে আটজনের।
জুলাই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃতু্য হয়। আগস্টে ৬৫২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃতু্য হয়।
এর আগে ২০২৩ সালে এই রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃতু্যও হয় বলে খবর দেয় স্বাস্থ্য অদিধপ্তর।