নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আগে অনেক সংস্কার কমিটি ছিল, কিন্তু তারা কোনো কিছুই সংস্কার কিংবা পরিবর্তন করতে পারেনি। তারা সংস্কার করলে ৫ আগস্ট সৃষ্টি হতো না। এজন্য এবার সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য কিছু সময় দিতে হবে। যেন অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা ফিরে না আসে। এজন্য যৌক্তিক সময় দিতে হবে।
শুক্রবার এফডিসিতে 'সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন, প্রার্থী ও নাগরিকের ভূমিকা' শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বদিউল আলম বলেন, বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছে তাদের সবাইকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারী নির্বাচনী অপরাধ করেছে তাদের বিচারের জন্য সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। তবে শপথ ভঙ্গ করে যেসব নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের বিচার কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নির্ধারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এ প্রতিবেদনের আলোকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা যেতে পারে। নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জরুরি সংস্কারের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে এবং সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়া উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটার তালিকা সংশোধন ও হালনাগাদ করা জরুরি। জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা যেতে পারে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের স্বার্থে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধের উপায় বের করতে হবে। আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ থাকবে না, তাই কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে বলে আশা করা যায়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব। যদিও অন্তর্র্বর্তী সরকার প্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু এ ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে তা জনগণ জানতে পারলে ভালো হয়। বর্তমান সরকারের বিবেচনায় নেয়া উচিত নির্বাচন বিলম্বিত হলে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে 'সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চেয়ে প্রার্থীসহ জনগণের ভূমিকাই বেশি' শীর্ষক ছায়া সংসদে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এসএম মোর্শেদ, সাংবাদিক একরামুল হক সায়েম, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, সাংবাদিক মশিউর রহমান খান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।