সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

অন্যায়-অশ্লীলতা ও মিথ্যা থেকে বিরত থাকুন

আবছার তৈয়বী (আবুধাবি থেকে)
  ০৫ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
অন্যায়-অশ্লীলতা ও মিথ্যা থেকে বিরত থাকুন
অন্যায়-অশ্লীলতা ও মিথ্যা থেকে বিরত থাকুন

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস- মাহে রমজানুল মোবারকে সিয়াম (রোযা) পালন করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিসম্পন্ন, সুস্থ ও মুসাফির নয়- এমন মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরয বা অবশ্য পালনীয় আমল। ইসলামের মূল ৫টি রুকনের মধ্যে 'সাওম' অন্যতম। 'সাওম' শব্দের অভিধানিক অর্থ- বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, ইবাদাতের নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো ঈমানদার মুসলমান স্বেচ্ছায় পানাহার এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নামই 'সাওম'।

বিখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাযযালি (রহ.) সাওমকে ৩ স্তরে ভাগ করেছেন- ১. সাধারণ মুসলমানদের রোযা- তা হচ্ছে পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকা। ২. সালেহীন বা পুণ্যবান বান্দাদের রোযা- এটা হচ্ছে উপরোক্ত কার্যাদি ছাড়া রোযাদার নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়সমূহকে সকল প্রকার গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখা। ৩. সালেহীন বান্দাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিদের রোযা- আর তা হচ্ছে উপরোক্ত দু'টি স্তর পালন করা ছাড়া রোযাদারের নিজ মন-মানসিকতা, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা সব কিছুকে শুধু আলস্নাহ্‌ তায়ালা ও

প্রিয় রাসূল সালস্নস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নামের দিকেই পরিচালিত করা।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা মূলত শুধু পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকাই রোযার উদ্দেশ্য নয়। রোযার বিধান প্রবর্তনের উদ্দেশ্য হলো- মানুষকে সকল প্রকার মিথ্যা, পাপাচার, অশ্লীলতা, অন্যায় ও সমাজবিরোধী কাজ থেকে বিরত রেখে আলস্নাহ্‌ তায়ালা ও তার প্রিয় রাসূল সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নামের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়াতে শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করা। তাই রোযাদারকে সর্বতোভাবে মিথ্যা ও যাবতীয় অন্যায়-অশ্লীলতা, পাপাচার ও জুলুম অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল মেশানো, খাদ্যসামগ্রী গুদামজাত করা এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মূল্যে তা বিক্রি করা খুবই অন্যায়। প্রকৃতপক্ষে, এ রকম গর্হিত কাজ পবিত্র মাহে রমজানের সঙ্গে খেল-তামাশারই নামান্তর।

নূরনবী হযরত রাসূলে করিম সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম এরশাদ করেছেন, 'কতেক রোযাদার আছে তাদের শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও উপবাস ব্রত ছাড়া আর কিছুই পালিত হয় না।' প্রিয়নবী সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম আরও বলেন, 'যে রোযাদার রোযা রেখে মিথ্যা, অন্যায় ও অশ্লীলতা পরিত্যাগ করেনি, আলস্নাহর কাছে তার রোযার কোনো মূল্য নেই।' তাই প্রত্যেক রোজাদারকে এই বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামান্য ভুলের জন্য ১৩/১৪/১৫ ঘণ্টার এই রোযা যেন শুধু 'উপবাস ব্রতে' পরিণত না হয়। আলস্নাহ আমাদেরকে প্রিয়নবীর (দরুদ) শেখানো পন্থায় উত্তমভাবে রোযা রাখার তাওফিক দিন। আমিন, বিহুরমাতি রাহমাতুলিস্নল আলামীন সালস্নালাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম।

আবছার তৈয়বী : লেখক, গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে