মানুষ তো বটেই, সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টির আরাধ্য বিষয় হলো, স্রষ্টা দর্শন ও স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন। আলস্নাহর অত্যন্ত প্রিয়ভাজন সৃষ্টি মানুষও চায় মহামহিম প্রভুকে খুশি করতে, তার সান্নিধ্য লাভ করতে। মাহে রমজান রোজাদার মুমিন-মুসলমানদেরকে সেই সুযোগ এনে দেয়। প্রিয় রাসুল সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম বলেছেন, 'রোযাদারের জন্য দু'টি খুশি রয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো- রোযাদার যখন ইফতার করে, অপরটি- যখন সে তার প্রভুর সাথে সাক্ষাত করে' (মিশকাত)। বাস্তবিকই একজন রোযাদার ইফতার করার সময় নিজ অন্তরে যে সুখানুভূতি লাভ করেন, হৃদয়, তনুমন যে কত আনন্দধারায় অবগাহন করে, তা রোযাদার ছাড়া অন্য কেউই অনুভব করতে পারে না। সারাদিন রোযা রেখে ইফতারের প্রাক্কালে রোযাদারের মুখে দেখা যায় তৃপ্তির হাসি, জান্নাতি তাবাস্সুম।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, কালবিলম্ব না করে সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করা সুন্নাত। সূর্যাস্তের পূর্ব হতে ইফতার সামগ্রী সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। পেটে ক্ষুধা, বুকে তৃষ্ণা- এমতাবস্থায় খাদ্য ও পানীয়বস্তু সামনে নিয়ে ইফতারেরর সময়ের জন্যে অপেক্ষা করা আত্মসংবরণ ও খোদাভীতির এক অনন্য উদাহরণ। হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুলে করিম সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম ইরশাদ করেছেন- আলস্নাহ তাযালা বলেন, 'আমার বান্দাদের মধ্যে অধিকতর প্রিয় সেই ব্যক্তিরাই, যারা সূর্যাস্তের পর পরই ইফতার করে' (তিরমিজি)। তাই যখনই সূর্যাস্ত হয়েছে বলে দৃঢ় প্রত্যয় হবে, তখনই ইফতার করবেন। কারণ, বিলম্বে ইফতার করা মাকরুহ।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, মনে রাখবেন, খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত। হযরত সালমান ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, আলস্নাহর প্রিয় রাসুল সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম ইরশাদ করেছেন, 'যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা এতে বরকত রয়েছে। আর যদি খেজুর পাওয়া না যায়, তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী' (তিরমিজি)। ইফতারের দোয়া হলো- 'আলস্নাহুম্মা ইন্নি লাকা সুম্তু ওয়া বিকা আমান্তু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিয্িককা আফ্তারতু' অর্থাৎ- 'হে আলস্নাহ, আমি তোমার জন্যে রোযা রেখেছি, তোমার ওপরই ঈমান এনেছি, তোমার ওপরই নির্ভর করেছি এবং তোমার প্রদত্ত রিয্ক হতে ইফতার করেছি।'
আমাদের জানা থাকা দরকার যে, রোযাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত খুবই বেশি। নূর নবী সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম এরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি রোযাদারকে ইফতার করায়, তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আজাব থেকে নিষ্কৃতি লাভের উপায় হিসেবে বিবেচিত হবে' (বায়হাকি)। অন্য হাদিসে আছে, 'যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য বা পানীয় দ্বারা কোন মুসলমানকে ইফতার করায়, ফেরেশতারা মাহে রমজানে তার জন্যে দোয়া করেন। জিব্রাইল (আ.) তার জন্য শবে কদরে ইস্তেগ্ফার করেন' (তাবরানি)। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করা মানে অবশ্যই আপনার গুনাহ মাফ হবে এবং আলস্নাহ-রাসুল সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম এর দরবারে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এর মাধ্যমে রোজ কিয়ামতে প্রিয়নবী সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম এর হাউজে কাউছার থেকে অমূল্য পানীয় লাভ করা যাবে। নূরনবী সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম নিজেই ঘোষণা করেছেন, 'যে ব্যক্তি রোযাদারকে পান করাবে, আলস্নাহ তায়ালা আমার হাউজ থেকে তাকে এমন শরবত পান করাবেন, জান্নাতে দাখিল হওয়া পর্যন্ত সে তৃষ্ণার্ত হবে না' (বর্ণনায়- ইবনে খুযাইমা, বায়হাকী ও তিরমিজি)। অনেকেই মনে করেন যে, অন্যের ঘরে ইফতার করলে তার রোযার সাওয়াব অন্য লোক নিয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। হাদিসে আছে, 'যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করায় তাকে ততটুকু সাওয়াব দান করা হবে, যতটুকু রোযাদারকে দান করা হয়েছে। কিন্তু রোযাদারের সাওয়াব থেকে এতটুকুও কমতি করা হবে না' (বায়হাকি)। আলস্নাহ আমাদেরকে যাথাযথ আমল করার তাওফিক দিন। আমিন। বিহুরমাতি রাহমাতুলিস্নল আলামীন সালস্নলস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম।
আবছার তৈয়বী: লেখক, গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ।