চড়ুই পাখির মতো তিড়িংবিড়িং নাচতে নাচতে রেজাল্ট শিট নিয়ে হাজির হয় আদ্রিতা। এসেই বাবার সামনে মেলে ধরে রেজাল্ট শিট। আদ্রিতা বাবাকে বলে 'বাবা দেখো আমি অদিতিকে পেছনে ফেলে পরীক্ষায় ফাস্ট হয়েছি।' অদিতি ও আদ্রিতা একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। আগে সব সময় অদিতি পরীক্ষায় ফাস্ট হতো। কিন্তু এবার আর অদিতি আদ্রিতার সঙ্গে পেরে উঠল না। আদ্রিতার বাবা জসিম সাহেব। পরীক্ষার আগে আদ্রিতাকে বলেছিল, 'মা মণি, এবারের অদিতিকে পেছনে ফেলতে হবে, যদি ওকে পেছনে ফেলতে পার তাহলে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব।' সারপ্রাইজের কথা শুনে ছোট্ট আদ্রিতা পড়ালেখায় ভীষণ মনোযোগী হয়। নিরলস পরিশ্রম করে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে। যার ফলে, আজ তার এই সাফল্য।
মেয়ের সাফল্যে আদ্রিতার বাবা অনেক খুশি হয়। একজন পিতা হিসেবে তিনি আজ নিজেকে নিয়ে গর্বিত।
এদিকে, আদ্রিতা সারপ্রাইজের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। আদ্রিতা বাবাকে বললো- আমার সারপ্রাইজ কোথায় বাবা?
তাড়াতাড়ি আমার সারপ্রাইজ দাও, 'বাবা বলল, মা মণি,
-একটু অপেক্ষা কর!
- না বাবা, আমার এখনই লাগবে। এক্ষুনি দাও!
অগত্যা বাবা বললেন, 'ঠিক আছে মা মণি, তাহলে দ্রম্নত তোমার পিংক কালারের নতুন জামাটা পরে রেডি হয়ে এসো।
আদ্রিতা এক দৌড়ে চলে যায় গোসলখানায়। ঝরনা ছেড়ে গোসল সেরে নেয়। পৌষ মাসের বিকাল বেলার এই তীব্র শীত যেন তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। আদ্রিতার মা কাছে গিয়ে মেয়ের শরীর মুছে দেয়। গায়ে মেখে দেয় লৌশন। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চুলগুলো ঝুঁটি বেঁধে সাজিয়ে দেয়। আদ্রিতাকে দারুণ লাগছে। তার সৌন্দর্যের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। এ যেন আকাশ থেকে সদ্য নেমে আসা ডানাকাটা পরী।
সাজুগুজু শেষে এবার আদ্রিতা পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু মনে খানিকটা কৌতূহল। কোথায় নিয়ে যাবে বাবা সে এখনো কিছুই জানে না। বাবাকে বলে-
বাবা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
তোমার নানার বাড়িতে।
নানার বাড়িতে?
হঁ্যা।
সত্যি?
সত্যি।
কয় সত্যি, তিন সত্যি?
হঁ্যা, তিন সত্যি।
একথা শুনে আদ্রিতা আনন্দের আতিশয্যে লাফিয়ে উঠে। সে কী আনন্দ আদ্রিতার মনে।
অনেক দিন যাবত নানার বাড়ি যাওয়া হয় না আদ্রিতার। আজ তার মনে আনন্দের ফল্গুধারা বইছে। আদ্রিতা মনে মনে ভাবছে, মামা ও খালামনিরা যখন শুনবে আমি পরীক্ষায় ফাস্ট হয়েছি তখন তারা নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে। সারাবাড়িজুড়ে মিষ্টি বিতরণ করবে। ভারী মজা হবে।
পশ্চিমাকাশে সূর্যটা লাল রং ছড়িয়ে অস্তমিত হচ্ছে। পাখিরা নীড়ে ফিরছে। হিম শীতল বাতাস বইছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সন্ধ্যার আগমনী বার্তা।
এই গোধূলি বেলায় আদ্রিতার বাবা জসিম সাহেব মেয়েকে নিয়ে নানার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়।আদ্রিতার নানার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার মুসুলিস্নর একটি গ্রামে। আদ্রিতার নানার বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। তাই সন্ধ্যা সাতটার আগেই পৌঁছে যায়।
সন্ধ্যে বেলায় আদ্রিতার অপ্রত্যাশিত আগমনে সবাই আনন্দিত।
বাবার আগেই আদ্রিতা সবাইকে সালাম দেয়। খালামনিকে বলে 'খালামনি, আমি পরীক্ষা প্রথম হয়েছি। তাই বাবা আমাকে এখানে নিয়ে এসে সারপ্রাইজ দিয়েছে'। একথা শুনে খালামনি ছোট্ট আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। সবাই আদ্রিতা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
পরদিন সকাল বেলা। মিষ্টি রোদের আলোয় কুয়াশা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। হিমশীতল বাতাস বইছে। পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে আছে পরিবেশ। এমন সময় আদ্রিতার খালামনি তৃষ্ণার সঙ্গে আদ্রিতা বাহিরে হাঁটতে বের হয়। খালিপায়ে গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে হাঁটছে দুজন। পথের ধারে সারি সারি খেজুর গাছ। একটু সামনে এগুতেই দেখে একটি গাছ থেকে আদ্রিতার মামা খেজুরের রস সংগ্রহ করছে। আদ্রিতা গাছের নিচে দাঁড়ায়। একটু পরেই নিচে নেমে আসে ওর মামা। আদ্রিতা আগে কখনোই খেজুরের রস খায়নি। এবার আদ্রিতাকে খেজুরের রস পান করতে দেওয়া হয়। আদ্রিতা রস পান করে অনন্য এক স্বাদ অনুভব করে এবং আলস্নাহর শুকরিয়া আদায় করে।