শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতাল

অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ

সারা দেশে অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলো পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ

অবৈধ ও অননুমোদিত সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অনেক সমস্যা রয়েছে, বিষয়টি তিনিও জানেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, "আমি বলেছি দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় দেব না। এই অননুমোদিত, লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল- এগুলো চলতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি একদিনে পারব না। কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে যে, এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী এগুলোর জন্য।"

১৯৮২ সালের মেডিকেল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনেস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর জানা গিয়েছিল, অনুমোদন ছাড়াই চলছিল ওই হাসপাতাল।

২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর জানা যায়, ওই হাসপাতালও সেবা দেওয়ার অনুমোদন পায়নি।

এরপর সারা দেশে অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলো পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ওই তালিকায় সারা দেশের ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের নাম আসে, যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছিল সে সময়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে সময় বলেছিল, ওই তালিকার মধ্যে ২ হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। ৯ হাজার ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে কোনো কোনোটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেও এখনো অনুমোদন পায়নি। আবার কোনো কোনোটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেই অর্থে সেগুলোও অবৈধ।

অনুমোদনহীন যেসব চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র তখন চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার মধ্যে ৩ হাজার ৫৩৫টি ছিল ঢাকা বিভাগে, ২ হাজার ২৩২টি চট্টগ্রাম বিভাগে, ১ হাজার ৫২৩টি খুলনা বিভাগে, ১ হাজার ৪৩৮টি রাজশাহী বিভাগে, ১ হাজার ৯৯টি রংপুর বিভাগে, ৯৬৩টি ময়মনসিংহ বিভাগে, ৬০৩টি বরিশাল বিভাগে এবং ৫৪৬টি সিলেট বিভাগে।

ওই তালিকা হওয়ার পর কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে আড়াই হাজারের মত অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভিন্ন ক্লিনিককে জরিমানাও করা হয়।

এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দাবি করেন, অনুমোদনহীন কোনো ক্লিনিক-হাসপাতাল ঢাকায় আর 'চালু নেই।'

ঢাকা মহানগরীতে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৪৮৪টি বলেও সে সময় তথ্য দেন জাহিদ মালেক।

কিন্তু চলতি জানুয়ারিতে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান আহমেদ নামে এক শিশুর মৃতু্যর পর জানা যায়, ঢাকার সাঁতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতাল অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

ওই ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আয়ানের পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করেন। তারা আয়ানের মৃতু্যর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন, আইন অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা তিনি নেবেন।

এদিন মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সারাজীবন যেভাবে কাজ করে গেছেন, এখনো সেভাবেই কাজ করতে চান।

"মানুষের কষ্টটা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এতে কোনো সন্দেহ নাই, রোগীরা মাটিতে শুয়ে থাকে, চিকিৎসা পায় না। আমি চেষ্টা করব বিষয়গুলো ধরে আগাতে। ইট উইল টেক টাইম, একদিনে হবে না। সবাই আমাকে সহযোগিতা করলে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।"

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে