বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে ২ দিনের কর্মসূচি

দেশে এখন শপথবদ্ধ এমপি ৬৪৮ :রিজভী

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বুধবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী -ফোকাস বাংলা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংবিধান, আইন, নিয়মনীতি- সবকিছু পদপিষ্ট করে দেশে একচ্ছত্র শাসন কায়েম করেছে সরকার। তাড়াহুড়ো করে ক্ষমতা নবায়ন করার শপথ নিতে গিয়ে তারা আইন ও সংবিধানের কবর রচনা করেছে। দেশে এই মুহূর্তে একাদশ সংসদে 'রাতের ভোটে' ৩৫০ জন আর 'ডামি' দ্বাদশ সংসদের ২৯৮ জন মোট ৬৪৮ জন শপথবদ্ধ এমপি রয়েছেন। এখন রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন ডাকলে দুই সংসদের সদস্যরাই এতে যোগ দিতে পারেন। অথচ এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ।

বুধবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, '২৯ জানুয়ারি একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়াঅবধি এই অরাজকতা থাকবে। একাদশের রাতের ভোটের সংসদ ভেঙে না দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্বাদশ সংসদের সদস্যরা অবৈধভাবে শপথ নিয়েছেন। ফলে দেশে এখন দুই সংসদের সংসদ সদস্য রয়েছেন। এটি একটি চরম সাংবিধানিক লঙ্ঘন। সংবিধান অনুসারে এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। এ জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতিও এই দায় থেকে মুক্ত নন। ফলে অবৈধ মন্ত্রিপরিষদের কোনো অন্যায্য আদেশ-নির্দেশ দেশের জনগণ মানতে বাধ্য নয়।

রিজভী বলেন, 'পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের ভোট রঙ্গ ও ভোট গণনা শেষ না হতেই ডামি এমপিদের নামে গেজেট করা, শপথগ্রহণ, মন্ত্রিপরিষদের নাম ঘোষণা, মন্ত্রীদের শপথগ্রহণের মতো প্রক্রিয়া অভাবনীয় দ্রম্নততায় মাত্র চার দিনেই সম্পন্ন করেছেন।'

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, সংবিধানের ৭২ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, 'রাষ্ট্রপতি আগে সংসদ ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে।' সংবিধানের এই বিধানমতে, ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২৯ জানুয়ারি। যেহেতু রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেননি, সে কারণে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ সংসদের যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তারা সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল আছেন।

রিজভী আরও বলেন, দেড় দশক ধরে দেশের ভোটবঞ্চিত মানুষের প্রাণের দাবি-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে একটির পর একটি 'বিনা ভোট', 'নিশি ভোট', 'ডামি নির্বাচন' করে ক্ষমতা দখল করে দেশে একচ্ছত্র শাসন কায়েম করেছে।

রিজভী অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ হাজার হাজার রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে চলমান একদফার আন্দোলনে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি

১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর-উত্তমের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে দুই দিনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শুক্রবার বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরের জিয়ার কবরে ফাতিহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দিবসটি উপলক্ষে পোস্টার ও পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এদিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর রমনার ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে দলটি। এ ছাড়া দলের অঙ্গ, সহযোগী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করবে।

এদিকে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার দলটির পক্ষ থেকে রুহুল কবির রিজভীর সই করা পাঠানো চিঠিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

সরকার সংবিধান

মানে না : জয়নুল আবদিন

৩০০ আসনের জাতীয় সংসদে ৬০০ সংসদ সদস্য থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সংবিধান মানে না। তাই সংবিধানের কথা বলে আর বাংলাদেশের মানুষকে অপমান করবেন না। এখনো সময় আছে, সংবিধান মতো চলেন, পদত্যাগ করেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বাংলাদেশে এখন এমপি ৬০০। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ সংসদের সদস্য এখনো বহাল আছেন। আবার নতুন সংসদের সংসদ সদস্যরাও শপথ নিয়েছেন। কী করে সম্ভব?

তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এটা দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। এটা লজ্জার। মামলা-হামলা-জেলজুলুম করছেন। কোনো লাভ হবে না। এই সরকার যত কলাকৌশল করুক না কেনো, তারা এ রকম ভুয়া পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। জনগণ অবশ্যই তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করবেই।

সংগঠনের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, তথ্য ও গবেষণা সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে