বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সমুদ্র সৈকতে স্বপ্নপূরী ট্রেন 'পর্যটক এক্সপ্রেস'

জাবেদ আবেদীন শাহীন (কক্সবাজার)
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সমুদ্র সৈকতে স্বপ্নপূরী ট্রেন 'পর্যটক এক্সপ্রেস'

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার একটি আকর্ষণ সমৃদ্ধ পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণপিপাসুরা মুগ্ধ হয়েছেন। তাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যটন শিল্প। পর্যটক না থাকলে এর আর্থিক প্রভাব পড়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। তাইতো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্বল্প ব্যয়ে ও স্বল্প সময়ে আরামদায়ক ভ্রমণে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে এবার যুক্ত হয়েছে 'পর্যটক এক্সপ্রেস' নতুন ট্রেন। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। বিশেষ করে সে সময় ছুটির দিন ছাড়াও সাধারণ সময়ে এখানে এত বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে যে, হোটেল-মোটেলগুলোতে মানুষের তিল ধারণের জায়গা হয় না।

এবার ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন চালুর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় 'পর্যটক এক্সপ্রেস' যুক্ত হওয়ার ফলে পর্যটন শিল্প থেকে শুরু করে বাণিজ্য ব্যবস্থায় অবদান রাখছে। 'পর্যটক এক্সপ্রেস' নামের এই আন্তঃনগর ট্রেনটি শুধু ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। নিরাপদ বাহনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান। যাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, রেলপথে চলাচলে নিরাপত্তা ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করা হোক।

কক্সবাজার রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী জানান, ট্রেনে চড়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুরা। তাই ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিক ট্রেন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। গত ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে 'কক্সবাজার এক্সপ্রেস' নামে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন এবং ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করেন।

'পর্যটক এক্সপ্রেস' ভ্রমণকারী ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার সোহরার হোসাইন বলেন, 'ট্রেনযাত্রা সবসময় আরামদায়ক। বাসে যাতায়াতের চেয়ে কক্সবাজারে প্রথমবার পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণ অনেক নিরাপদ। পরিবার নিয়ে ট্রেন ভ্রমণ খুবই ভালো লেগেছে। আমার সিট জানালার পাশে হওয়ায় ভ্রমণ করার সময় বাইরের যে এত সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায় তা আমি আগে জানতাম না। দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করেও ক্লান্তি আসেনি। তাছাড়া বাসের তুলনায় এই ট্রেনে ভাড়াও কম। যথা সময়ে বিকালে আমরা পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আইকনিক ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছালাম।'

ট্রেনের আরেক যাত্রী খুলনার বাসিন্দা গৃহিণী মিথিলা মারজান বলেন, 'কক্সবাজারে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। খুব সহজে আসা যাচ্ছে। রাজধানী থেকে সরাসরি কক্সবাজারে মাত্র ৯ ঘণ্টায় আসতে পেরেছি। ট্রেনে ওঠা থেকে শুরু করে শেষ অব্দি আমাদের এই ট্রেন ভ্রমণ ছিল খুব আনন্দদায়ক। বিশেষ করে ঝিনুক আকৃতি আইকনিক রেলস্টেশনটি অসম্ভব নান্দনিক হয়েছে। প্রথম দেখাতে যে কারো নজর কাড়বে। সরকারকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হয়। মনে হচ্ছে কক্সবাজারে আসাটা আমাদের সার্থক হয়েছে।'

স্পেন প্রবাসী মোজাম্মেল হক জানান, 'দূরপালস্না বাসে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় হরহামেশায় দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া ট্রেনের ভিতরে হাঁটাচলা করা যায়, বাথরুম ব্যবস্থাও আছে। তাই পরিবারের ইচ্ছাতে এবার নতুন ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস করে কক্সবাজার বেড়াতে আসা। ভ্রমণটা আমার কাছে খুবই আরাম লেগেছে। কল্পনা করিনি ট্রেনে করে কক্সবাজার আসব। সেই ৫ বছর আগে দেশে এসে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলাম। এবার দেশে এসে চারদিকে অনেক পরিবর্তন দেখছি। বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।'

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে কক্সবাজারের নন-এসি শ্রেণির 'শোভন চেয়ার' ভাড়া ৬৯৫ টাকা এবং এসি শ্রেণির 'স্নিগ্ধা' ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা। বিমানবন্দর স্টেশন থেকেও একই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি কক্সবাজার স্টেশন থেকে ৮১৫ নম্বর ট্রেন রাত ৮টায় ছেড়ে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে। ২৫ মিনিট বিরতি দিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়বে রাত ১১টা ১৫ মিনিটে। এরপর বিরতিহীনভাবে ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে ভোর সাড়ে ৪টায়।

অন্যদিকে ৮১৬ নম্বর ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছাবে ভোর ৬টা ৩৮ মিনিটে। সেখানে ৫ মিনিট বিরতি দিয়ে ভোর ৬টা ৪৩ মিনিটে বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়বে। এরপর বিরতিহীনভাবে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে। সেখানে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়বে। কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে বিকাল ৩টায়। পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের রেকে থাকবে মোট ১৬টি কোচ। মোট আসন ৭৮৫টি। কক্সবাজার রেলস্টেশনকে ট্রেনের রেক বেইজ ধরা হয়েছে। সেখানেই ট্রেনের ওয়াটারিং, সার্ভিসিং ও ক্লিনিং করা হবে। পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ রোববার।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শদ চৌধুরী বলেন, শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, কক্সবাজারের স্থানীয়দের জন্যও এটি একটি সুখবর। রেল যোগাযোগের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজারের আমূল পরিবর্তন আসবে। সরকার কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের সাথে ঢাকার সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করে তুলবে। শুধু আমাদের দেশের মানুষ নয়, অন্যান্য দেশ থেকে আগত পর্যটকদের কাছেও কক্সবাজার অন্যতম আকর্ষণ। এই রেলপথ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে