বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২
মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাতের শপথ আজ

নগরপিতাকে বরণে প্রস্তুত চসিক চেয়ারে বসেই পড়বেন চ্যালেঞ্জে

খোরশেদুল আলম শামীম, চট্টগ্রাম
  ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নগরপিতাকে বরণে প্রস্তুত চসিক চেয়ারে বসেই পড়বেন চ্যালেঞ্জে
ডা. শাহাদাত হোসেন

আজ শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেনের নতুন যাত্রা শুরু হবে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রের আসনে বসছেন তিনি। ঢাকায় শপথগ্রহণের পর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আসবেন নতুন নগরপিতা বা নগরপ্রধান। তাকে বরণে এর মধ্যেই প্রস্তুত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে বিভিন্ন মহলের অভিমত, চেয়ারে বসতেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন তিনি।

জানা গেছে, নতুন মেয়রের আগমনকে ঘিরে মেয়রের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। মেঝেতে বিছানো হয়েছে নতুন ফ্লোরমেট। মেয়রের জন্য বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার, বার্নিশের পর ঝকঝক করা হচ্ছে সব আসবাবপত্র। ফুলের টবসহ ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কিছুটা বাহ্যিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ছাড়া নগরভবনে আয়োজন করা হয়েছে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া।

সূত্রমতে, আগামী ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে

সকালে রেলপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবেন ডা. শাহাদাত। দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দলীয় নেতারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবেন। পরে সেখান থেকে হযরত আমানত শাহ এবং হযরত বদর শাহ (রহ.) এর দরগাহ জেয়ারত করবেন তিনি। এরপর তিনি সিটি কর্পোরেশনের নতুন ভবনে (লালদীঘির পাড়) একটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবেন। পরে সেখানেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।

সেখান থেকে বাদে আসর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া শেষে মোনাজাতে অংশ নেবেন। পরে সেখান থেকে বাসায় ফিরবেন। আর পরদিন থেকে নিয়মিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অফিস করবেন বলে জানা গেছে।

নতুন মেয়রকে বরণে প্রস্তুত জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'মেয়রের জন্য নতুন একটি চেয়ার বসানো হয়েছে। ফ্লোরে নতুন ফ্লোরমেট, সোফা-টেবিল বার্নিশ করে নতুন টব বসিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।'

কাজে গতি ফেরার কথা জানিয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'মেয়র-প্রশাসক না থাকায় রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া সবকিছু ছন্দহীন ছিল। নতুন মেয়র দায়িত্ব নিলে কাজের গতি ফিরবে। এতদিন প্রশাসক মহোদয় ছিলেন। তবে তিনি অনেক কিছুই এড়িয়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি হয়তো সেগুলো সামাল দিতে পারবেন।'

নতুন মেয়রকে বরণে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'মেয়র মহোদয়কে বরণে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। উনি শপথগ্রহণের পর কার্যালয়ে আসবেন। এরপর আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিকতা সারব।'

ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরীকে বলেন, 'আগামী ৩ নভেম্বর শপথগ্রহণ হবে। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমরা অতিথির একটি তালিকা জমা দিয়েছি। ১৫ থেকে ২০ জন শপথগ্রহণের সময় উপস্থিত থাকতে পারেন। এতে পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক সিনিয়র নেতা এবং ঘনিষ্টজনরা আছেন। উপদেষ্টা মহোদয় অসুস্থ থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে উপস্থিতির সংখ্যাটা একটু কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে।'

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসা নগরের বাদশা মিয়া সড়কে। আদালতের রায়ে 'মেয়র' ঘোষণার পরই এবড়োথেবড়ো ওই সড়ক মসৃণতার ছোঁয়া লাগাতে নেমে পড়ে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ। নতুন করে করা হয়েছে কার্পেটিং। এ ছাড়া একসময় আলো-আঁধারিতে থাকা বাদশা মিয়া সড়কে এখন নিয়মতি জ্বলছে সড়কবাতি। সড়ক বাতির 'জ্যোতি' ছড়িয়েছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। বিদু্যৎবিভাগ থেকেও সড়কবাতি দেখভাল করা হচ্ছে নিয়মিত।

ডা. শাহাদাত হোসেনকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুনে ভরে গেছে নগরের টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় সড়ক। দলীয় নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছেন। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও তৈরি করা হচ্ছে ব্যানার ফেস্টুন, তোরণ।

বিভিন্ন মহলের নানা অভিমত, চেয়ারে বসতেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন ডা. শাহাদাত হোসেন। মেয়র ও কাউন্সিলরদের সবাইকে অপসারণ করায় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে চসিকের। নড়বড়ে হয়ে গেছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও। এটি দ্রম্নততম সময়ে ঠিক করতে হবে তাকে। গত ১৫ বছর বিরোধী দলে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। থমকে যাওয়া জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজে গতি আনতে হবে। আবর্জনা পরিষ্কার ও আলোকায়নের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে হবে। ডা. শাহাদাত মেয়র হওয়ায় তার অনুসারীরা এখন চাঙ্গা আছেন। তাদের প্রত্যাশাও এখন তুঙ্গে। এটির লাগামও টানতে হবে নতুন এ মেয়রকে। এ ছাড়া দেনার ভারে জর্জরিত হয়ে আছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। বর্তমানে ৪১১ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেনা রয়েছে সংস্থাটির। যার সিংহভাগই পাবেন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদাররা। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা, বিদু্যৎ বিল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্যৎ তহবিল খাতে রয়েছে বাকি দেনা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচনী ট্রাইবু্যনালে রেজাউল করিমসহ ৯ জনকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। আদালত গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেন। ওইদিন আদালত ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে সরকারকে নির্দেশ দেন। আদালতের এ রায়ের ৮ দিনের মাথায় গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনার সচিব শফিউল আজিম এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে