লেবাননে ইসরাইলের বিমান হামলায় মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (৩২) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহত নিজাম উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের খাড়েরা গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।
গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকালে লেবাননের বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি এলাকায় ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলা চালালে সেখানে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে নিজাম উদ্দিন নিহত হন।
এ খবর জানার পর নিজামের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজন ও বোনদের গগণবিদারি কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। পরিবারের সদস্যরা এ হামলার নিন্দা জানিয়ে দ্রম্নত নিজামের লাশ দেশের মাটিতে আনার দাবি জানান।
নিহত নিজামের স্বজনরা জানান, ২ ভাই বোনের মধ্যে নিজাম উদ্দিন সবার ছোট ছিলেন। পরিবারের একটু সচ্ছলতার জন্য ধারদেনা করে ২০১২ সালে অবৈধ পথে নিজাম উদ্দিনকে লেবাননে পাঠায় পরিবারের লোকজন। সেখানে তিনি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। দীর্ঘ ১২ বছর পর আগামী ডিসেম্বর মাসে তার দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। শনিবার রাতে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে নিজামের মৃতু্যর খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে শুরু হয় শোকের মাতম।
নিজামের পিতা-মাতা মারা গেছেন অনেক আগেই। নিজাম লেবাননে যাওয়ার ৬ মাস পরই তার মা মারা যান।
বোন সায়েরা বেগম বলেন, আমার ভাইরে আমি ঋণ করে টাকা এনে বিদেশ পাঠিয়েছি। গত ১২ বছর ধরে সে দেশে আসে না। অবৈধভাবে লেবাননে থাকার কারণে দেশে আসতে পারছে না। ধারদেনা করে যাওয়া ঋণ এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। শনিবার লেবানন থেকে তার এক বন্ধু ফোন দিয়ে জানিয়েছে আমার ভাই বিমান হামলায় মারা গেছে। তিনি ইসরাইল বাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়ে দ্রম্নত তার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
নিজামের আরেক বোন পারুল বেগম বলেন, আমার আদরের ছোটভাই ছিল সে। শনিবার তার এক বন্ধু ফোন দিয়ে খবর দেয় আমার ভাই ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। আমার ভাইয়ের লাশ যেন সরকার দ্রম্নত আমাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে সেই দাবি জানাই।
নিহতের বড়ভাই জালাল উদ্দিন বলেন, আমরা চাই আমার ভাইয়ের লাশ সরকার দ্রম্নত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আশিক আহমেদ জানান, ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতার সাক্ষী হলো আমাদের কসবার খাড়েরা গ্রাম। আমরা এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি নিজাম উদ্দিনের মরদেহ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশে আনার দাবি জানাই।
খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিজানুল ইসলাম জানান, নিজাম উদ্দিন মারা যাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও পরিবারটির সার্বিক খোঁজ-খবর রাখছেন। আমরাও পরিবারটি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহরিয়ার মোক্তার বলেন, 'আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে নিজাম উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। পরিবারের পক্ষ থেকে তারা কিছু কাগজপত্র আমার কাছে দিয়ে গেছে। আমি লাশ আনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।'