সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

প্রাণহীন লিটল ম্যাগ চত্বর

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
প্রাণহীন লিটল ম্যাগ চত্বর

অমর একুশে বইমেলার ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও লিটল ম্যাগ চত্বরের নির্জনতা ভাঙছে না। যা হতাশা বাড়িয়েছে লেখক ও পাঠকের মধ্যে। শেষের দিকে এসে বইমেলায় তুলনামূলক ভিড় বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে না তেমন। আর লিটল ম্যাগ চত্বর পুরোপুরি প্রাণহীন। এ বছর এ চত্বরে সম্পাদকদের আড্ডার কোনো চিত্র চোখে পড়েনি। 'একসময় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বহেরাতলায় লিটল ম্যাগ চত্বর ছিল বইমেলার প্রাণ। মেলা ঘুরে লিটল ম্যাগ চত্বরে এসে তরুণদের সঙ্গে কথা না বললে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা না দিলে যে মেলায় এসেছি; বিষয়টি পরিপূর্ণ হতো না।' কথাগুলো বলছিলেন নিসর্গর সম্পাদক সরকার আশরাফ।

সম্পাদক সরকার আশরাফ বলেন, 'বহেরাতলা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে আসার পর থেকেই লিটল ম্যাগ চত্বরে লোক সমাগম কমে আসছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বৃহৎ পরিসরে বইমেলা এসেছে ঠিক, আয়োজনও অনেক বড় কিন্তু লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি মানুষের, লেখকদের

যে টান বা দায় যেন কমে গেছে।'

কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'সাহিত্য মানুষ পড়ে না, বিষয়টা এমন না। মেলায় এ বছর বিশেষ করে অনেকের মেলায় আশার প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। সেটা রাজনৈতিক কারণ অবশ্যই। কেউ পক্ষে আছেন, কেউ বিপক্ষে আছেন। আবার কারও ভেতর থেকে বইপড়ার স্বতঃস্ফূর্ততা তৈরি হচ্ছে না।'

তবে এখনো কেউ কেউ লিটল ম্যাগ চত্বরের টানে আসেন। সরেজমিনে দেখা যায়, তরুণদের তুলনায় প্রবীণদের সমাগম বেশি। প্রবীণ পাঠকরা জানান, এ জায়গাটা শান্তির। তবে তাদের মতে আগের স্থানটি ভালো ছিল।

এদিকে শনিবারের বৃষ্টির পর রোববার মেলায় লোক সমাগম অন্যদিনের তুলনায় কম ছিল। তবুও যারা মেলায় এসেছেন, তারা বই দেখেছেন, কিনেছেন।

এদিকে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলার ২৩তম দিনে নতুন বই এসেছে ৬৭টি। মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে 'জুলাই অভু্যত্থানে নারীরা : প্রিভিলেজের দায়' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা। আলোচনায় অংশ নেন শাওলী মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন রেহনুমা আহমেদ।

প্রাবন্ধিক বলেন, '২৪-এর গণ-অভু্যত্থানে নারীদের আমরা দেখেছি মিছিলের সম্মুখভাবে মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে তুলে শ্লোগানে শ্লোগানে সকল পর্যায়ে সামিল হয়েছেন। এই আন্দোলনে এমন কোনো ক্ষেত্রে ছিল না যেখানে আমরা নারীদের উপস্থিতি দেখতে পাইনি। কিন্তু আন্দোলন সফল হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসহ নানা পর্যায়ে নারীদের অনুপস্থিতি আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে। সমাজে বিদ্যমান আধিপত্যশীল পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি নারীর রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে অস্বীকার করে এবং দেশ গঠনের কাজে নারীর অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে বৈষম্যহীন দেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।

আলোচক বলেন, '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং '২৪-এর গণ-অভু্যত্থানসহ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সকল গণ-অভু্যত্থান একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। সেটি হলো নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। '২৪-এর অভু্যত্থানে নারীরা অসীম সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। এই আন্দোলন নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে রেহনুমা আহমেদ বলেন, '২৪-এর গণ-অভু্যত্থানে নারীরা প্রচন্ড সাহসের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করেই আমরা সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য ও ধর্মীয় বৈষম্য সমাধানের দিকে অগ্রসর হবো। তাহলেই আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- লেখক ও গবেষক ড. সুকোমল বড়ুয়া এবং গবেষক তাহমিদাল জামি।

আজ বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'জন্মশতবর্ষ : অমলেন্দু বিশ্বাস' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশ নেবেন শাহমান মৈশান। সভাপতিত্ব করবেন মিলনকান্তি দে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে