আর তিন দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে বাঙালির প্রাণের বইমেলা। মেলার শেষভাগে বেচাকেনা বাড়লেও এবছর প্রকাশকের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে মেলা উপলক্ষে বই প্রকাশের কমতি নেই এ বছরও। এবারের একুশে বইমেলার যত দিন অতিবাহিত হচ্ছে, আসছে- নানা ধরনের নতুন বই। তবে, পাঠকদের আগ্রহে যা-ই থাকুক না কেন; প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি আসছে কবিতার বই।
মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক এবং বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তারাও জানাচ্ছেন একই কথা। প্রতিদিন যেসব বই প্রকাশিত হচ্ছে তার প্রায় অর্ধেকই কবিতা বই। বিক্রয়কর্মীরা জানান, কবিতার বই তেমন বিক্রি হয় না। যা বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই পুরোনো বরেণ্য কবিদের বই। নতুনদের কবিতার বই কম বিক্রি হয়। যারা বেশি কবিতা ভালোবাসেন এবং যারা কবিতা লেখেন বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারাই মূলত নতুনদের কাব্যগ্রন্থ কেনেন।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার নতুন বই এসেছে ৯৮টি। এদিন বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'জন-আকাঙ্ক্ষার নাট্যকলা-যাত্রা:ঐতিহ্যের পরম্পরায় জাতীয়তাবাদী শিল্পরীতি এবং অমলেন্দু বিশ্বাস' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশ নেন শাহমান মৈশান। সভাপতিত্ব করেন মিলনকান্তি দে।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত রীতি-পদ্ধতির সর্বাধিক জনসম্পৃক্ত একটি নাট্যধারা-যাত্রা। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যাত্রা শিল্পের জগতে স্বদেশীয় রাজনীতি ও দ্রোহচেতনার বিস্তারে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন অমলেন্দু বিশ্বাস। তার অভিনয় জীবনের প্রারম্ভে রয়েছে নগরকেন্দ্রিক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিমন্ডলে দীর্ঘ এগারো বছরের আধুনিক থিয়েটার চর্চার অভিজ্ঞতা। আধুনিক নাট্যচর্চার জ্ঞানতাত্ত্বিক ও সাংগঠনিক পরিসরেও ছিল তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। তিনি বাংলাদেশের যাত্রাশিল্পে পশ্চিমবঙ্গের মুখাপেক্ষিতা থেকে বের হয়ে দেশীয় নাট্যকারদের দিয়ে নাটলিপি রচনার উদ্যোগ গ্রহণে যাত্রাদলের মালিক ও পরিচালকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজীবন তিনি দেশ ও সমাজ সংস্কারে যাত্রাশিল্পকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
আলোচক বলেন, অমলেন্দু বিশ্বাস যাত্রাশিল্পের একজন কিংবদন্তি। তার অভিনয় হাজার হাজার দর্শককে আপস্নুত করেছে, সম্মোহিত করেছে। তবে তিনি নিছক একজন যাত্রাশিল্পীই ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিশেষ এক প্রপঞ্চ। এই সমাজের মধ্যে সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের যে দ্বন্দ্ব আছে তার নিরিখেই অমলেন্দু বিশ্বাসকে বিচার করতে হবে। তিনি যাত্রায় অভিনয় করেছেন, যাত্রার ইতিহাস রচনা করেছেন এবং যাত্রাকে তত্ত্বায়িত করেছেন। সর্বোপরি যাত্রাকে তিনি জনগণের শিল্পভাষা হিসেবে গণ্য করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মিলনকান্তি দে বলেন, 'যাত্রাশিল্পের মানসপুত্র হিসেবে অভিহিত করা যায় অমলেন্দু বিশ্বাসকে। তার শিল্প-চেতনায় ছিল লোকজ আঙ্গিকের সঙ্গে আধুনিক নাট্যরীতির সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াস। তাঁর অভিনয়, যাত্রা দর্শন ও চিন্তাচেতনা গভীরতর গবেষণার দাবি রাখে।'
এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি শাহীন রেজা, কবি এজাজ ইউসুফী এবং কবি শোভা চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ফাতিমা তামান্না, টোকন ঠাকুর এবং রশিদ কামাল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহবুব মুকুল এবং নূরুল হাসনাত জিলান। সোমবার ছিল সেলিনা ফারজানা কেয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বুলবুল ললিতকলা একাডেমী' এবং আলী আশরাফ আখন্দ-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'জিয়া
সাংস্কৃতিক জোট'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আহমেদ শাকিল হাসমী, মো. ইকবাল হোসেন, শাহ আল চৌধুরী মিন্টু, বিমল দাস, দিপা আফ্রিদি, রোমানা আক্তার, মিসেস খালেদা বেগম, রাতুল শাহ, শেলী চন্দ, আঞ্জুমান আরা শিমুল, মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, আজমা সুরাইয়া শিল্পী, নাফিসা ইসলাম ফাইজা।
আজ মেলার পঁচিশতম দিনে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'জুলাই অভু্যত্থান: গ্রাফিতি' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মুনেম ওয়াসিফ। আলোচনায় অংশ নেবেন তাসলিমা আখতার এবং কামার আহমাদ সাইমন। সভাপতিত্ব করবেন ফারুক ওয়াসিফ।