ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আক্কাস আলী বলেছেন, মামলার
তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। হাকিম জাকির হোসেন গালিব ওই আবেদন মঞ্জুর করে সস্ত্রীক নিক্সন চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে। তারা দেশত্যাগের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দুদক।
নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের বিরুদ্ধে 'অবৈধ' সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা দুইটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। নিক্সন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বৈধ উৎসের বাইরে ১৯ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক।
দুজনের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৭২টি ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।
নিক্সন চৌধুরী নিজের ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৫ ব্যাংক হিসাবে এক হাজার ৪০২ কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯১ টাকা 'অস্বাভাবিক' লেনদেন করেছেন।
মামলায় তার বিরুদ্ধে ১১ কোটি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৩৫ টাকার 'অবৈধ' সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিক্সনের স্ত্রী তারিন হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলায় তার নিজের ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি ব্যাংক হিসাবে এক হাজার ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৩২০ টাকা 'অস্বাভাবিক' লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তারিনের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭০৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে সহযোগিতার অভিযোগে নিক্সন চৌধুরীকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
খাইরুল আর আবেদ আলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী সদস্য খাইরুল ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। প্রশ্নফাঁস কান্ডে আলোচিত পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের ক্ষেত্রেও একই আদেশ এসেছে।
দুদকের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব।
খাইরুল ইসলামের বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক (মানিলন্ডারিং) এস এম মামুনুর রশীদ।
আবেদনে বলা হয়, খাইরুলের বিরুদ্ধে ভুয়া সম্পত্তিকে জামানত দেখিয়ে বেসিক ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিদেশে পালাতে পারেন বলে জেনেছে দুদক। সেই কারণে তার বিদেশ গমন ঠেকানো প্রয়োজন। আর আবেদ আলীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন।
আবেদনে বলা হয়, আবেদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। ওই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।