পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সংজ্ঞা পাওয়া যায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন-২০১২ এর ২(১) ধারায়। যেখানে বলা হয়েছে, 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অর্থ এমন কোনো দলিল- যাহার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তাহার পক্ষে ওই দলিলে বর্ণিত কার্যসম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করেন'। সংজ্ঞা বিশ্লেষণে দেখা যায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলত এক ধরনের দলিল। প্রচলিত দলিলের মতোই এই দলিলে দু'টি পক্ষ অর্থাৎ দাতা এবং গ্রহীতা থাকবেন। এই দলিলের যিনি দাতা হবেন তিনি তার তরফে গ্রহীতাকে কোনো কাজ করার জন্য আইনানুগভাবে ক্ষমতা অর্পণ করবেন। কি কাজ করার জন্য ক্ষমতা দেওয়া হবে তা দলিলে উলেস্নখ থাকবে। অর্থাৎ দলিলটিই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি; যেখানে দলিলদাতা তার পক্ষে অন্যকে কাজ করার ক্ষমতা দেবেন।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন-২০১২ ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা-২০১৫ এর সমন্বিত পাঠে তিন প্রকারের পাওয়ার অব অ্যাটর্নির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
যা হলো:বিশেষ পাওয়ার- পাওয়ার অব অ্যাটর্নি;
অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি; এবং
সাধারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি।
বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি
বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সংজ্ঞা পাওয়া যায় ২০১৫ সালের বিধিমালার ২(৭) বিধিতে। যেখানে বলা হয়েছে, 'বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অর্থ প্রমাণীকরণের উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারার অধীন প্রস্তুতকৃত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি'। অর্থাৎ শুধু রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারার অধীনে প্রমাণীকরণ বা অঁঃযবহঃরপধঃরড়হ-এর উদ্দেশ্যে যে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তৈরি করা হয় সেটাই বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। তার মানে আমাদের সামনে দু'টি মৌলিক প্রশ্ন হাজির হয় যে, রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারায় কি বলা আছে এবং পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন-২০১২ একটি বিশেষ আইন হওয়া সত্ত্বেও অন্য আইনের বিধান এখানে প্রয়োগযোগ্য কিনা।
এ বিষয়ে আইনের ৩ ধারায় অন্যান্য আইনের প্রয়োগ শিরোনামে বলা হয়েছে, 'এই আইনে বর্ণিত হয় নাই কিন্তু অন্য কোনো আইনে বর্ণিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত কোনো বিধান, এই আইনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, প্রয়োগযোগ্য হইবে'। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন আইন বা অন্য কোনো আইনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে কোনো বিধান থাকলে সেসব বিধান-২০১২ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে প্রয়োগ হতে কোন বাধা নাই।
আর রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারার সঙ্গে ৩২ ধারাও একত্রে পাঠ করা দরকার। ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩২ ধারায় কোনো কোনো ব্যক্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য দলিল উপস্থাপন বা দাখিল করতে পারে তার যোগ্যতার বিধান রয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী একই আইনের ৮৯ ধারায় উলিস্নখিত ক্ষেত্র ছাড়া যথাযথ পদ্ধতিতে সম্পাদিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিও রেজিস্ট্রেশনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসে দলিল দাখিল করতে পারবেন। আর ঠিক কোনো পদ্ধতিতে এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে হবে তার বিধান পাওয়া যায় এই আইনের ৩৩ ধারায়। এই ধারার বিধান অনুযায়ী, যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রিন্সিপাল বা পাওয়ারদাতা ব্যক্তি বাংলাদেশের কোনো জেলায় বা উপজেলায় বসবাস করেন তবে সেই জেলা বা উপজেলার রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্টারের সামনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে হবে এবং ওই রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক তা প্রমাণীকরণ বা ধঁঃযবহঃরপধঃবফ হতে হবে।
তবে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারায় কয়েক ধরনের ব্যক্তিদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনের জন্য রেজিস্ট্রেশন অফিস বা আদালতে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হওয়ার বিধান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মারাত্মক অসুস্থ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি, ফৌজদারি বা দেওয়ানি আইনের বিধান মোতাবেক কারাগারে থাকা ব্যক্তি এবং আদালতে আইন দ্বারা ব্যক্তিগত উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত ব্যক্তি এই বিধানের সুধিবা পাবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার, সাব-রেজিস্ট্রার বা ম্যাজিস্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন যে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলটি স্বেচ্ছায় প্রিন্সিপাল কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছে তবে সেই অফিস বা আদালতে উলিস্নখিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত উপস্থিতি ছাড়াই পাওয়ার অব অ্যাটর্নিকে সত্যায়িত করতে পারেন। কিন্তু প্রয়োজন মনে করলে সাব-রেজিস্ট্রার, রেজিস্ট্রার বা ম্যাজিস্ট্রেট স্বেচ্ছায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদিত হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করার জন্য নিজে ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রিন্সিপাল বা পাওয়ারদাতার বাড়িতে বা কারাগারে বা যেখানে তিনি আটক আছেন সেখানে গিয়ে তাকে পরীক্ষা করতে পারবেন, অথবা ওই ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য কমিশন পাঠাতে পারেন। ৩৩ ধারার বিধান অনুসরণ করে প্রস্তুতকৃত ও আদালত বা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক ধঁঃযবহঃরপধঃবফ কোনো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি যখন রেজিস্ট্রেশনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি উপস্থাপন বা দাখিল করবেন তখন এর সত্যতা প্রমাণের জন্য অন্য কিছুর প্রয়োজন হবে না।
আবার ২০১৫ সালের বিধিমালার ৬ বিধির আলোকে বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে তিনটি ক্ষেত্রে ক্ষমতা অর্পণ করা যাবে, যথা : (ক) যে ক্ষেত্রে পাওয়ারদাতা নিজেই স্বয়ং কোনো দলিল সম্পাদন করেন, কিন্তু শুধু ওই দলিলটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য তার পক্ষে পাওয়ারগ্রহীতা উপযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দাখিল করেন এবং পাওয়ারদাতার পক্ষে দলিল সম্পাদনের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। (খ) যে ক্ষেত্রে পাওয়ারদাতা নিজেই দলিল সম্পাদান করেন কিন্তু তার পক্ষে পাওয়ারগ্রহীতা সেই দলিলটি উপযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রার এর কার্যালয়ে দাখিল করেন; এবং (গ) যে ক্ষেত্রে পাওয়ারদাতার অনুকূলে কোনো দলিল সম্পাদিত হয় এবং সে দলিলটি পাওয়ারগ্রহীতা উপযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দাখিল করেন। অর্থাৎ আলোচনায় দেখা যাচ্ছে বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ক্ষেত্রে পাওয়ারদাতা তার নিজের সম্পাদিত বা তার অনুকূলে সম্পাদিত কোনো দলিল শুধু সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে উপস্থাপন, দাখিল ও রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষমতা অ্যাটর্নিকে অর্পণ করতে পারেন। এছাড়া অন্য কোনো বিষয় বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির আওতাধীন হবে না।