রাহিত্যের রপ্তানিকৃত রৌদ্রের রুধির অলিতাজ মনির কবিতার বই। তিনি একটু ভিন্নভাবে কবিতাকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। তার কবিতার বইয়ের শিরোনামটাও অদ্ভুত। কবি শিরোনামের ক্ষেত্রে অন্য বিকল্প চিন্তা করলেও পারতেন। তার কবিতা এমন- মনের দমন নিপীড়ন আনমনে হাসে-দ্রবীভূত প্রয়োজনে ভাসে/খনন আয়োজন উদার-উদ্ধার জল-তরঙ্গে তারাও পথে আসে/সংশপ্তক বোধের ব্যাকরণপুষ্ট আঘাতে নান্দনিকতার প্রখর রস/মানুষের স্বপ্নের সীমিত চাষগন্ধের চিত্রকল্পে গ্রাম-গরিমা টসটস।

কেউ কবিতা লেখেন জটিল শব্দ প্রয়োগ করে, কেউ প্রয়োগ করেন সহজ শব্দ। শব্দ জটিল কি সহজ, তার চেয়ে বড় ব্যাপার হলো, কবিতার মাধ্যমে কবি কী ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন পাঠককে। তার বার্তা পাঠকের চেতনায় নাড়া দেয় কিনা। লেখার মধ্যে জীবনের গভীরতা রয়েছে কিনা। অনেকেই শব্দের পর শব্দ বসিয়ে পাঠককে চমক দেওয়ার জন্য কবিতা রচনা করেন। কবি কী বলতে চেয়েছেন, তা যদি পাঠক উপলব্ধি করতে না পারেন, তা হলে বিরক্ত হন কবির ওপর। ব্যতিক্রম জটিল কাব্য উপস্থাপক হিসেবে হয়তোবা এই কবির স্বীকৃতি মিলতে পারে পাঠকমহলে। তার কিছু কবিতার শিরোনাম, স্থানীয় অমাবস্যায় খুঁটিতে ঝুলে সময়োত্তীর্ণ অগ্রাধিকার, কান্নার ক্রোধে বুকের বোধে, জানালায় ধায় বিশেষ্যের প্রতি বিস্তৃতি, দেখার দাবড় দাহন, সাধ্য দারুণ অবাধ্য. স্মরণে বরণে মরণে ইত্যাদি। তার কবিতার শিরোনামগুলো লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, সহজ ও জটিল দুই ধরনে শিরোনাম।

আধুনিক বা উত্তর আধুনিক কবিতা কোনো সুনির্দিষ্ট ছক মানে না, তবে এক ধরনের সাজুয্যবিন্যাস সম্মিলন থাকা উচিত। তার সৃষ্টির দৃষ্টি কবিতা এমন- জমিনের আসমান-প্রাণ অফুরান বৃষ্টি/দিগন্তে দিয়ড়ি দুয়ার-দূরে দহে দৃষ্টি/অজানায়দরদ-দায় হয় সৃষ্টি। এই কবিতায় প্রাচীন আবেশ লক্ষ্য করা যায়। কিছু কবিতা পাঠে মনে হলো একই সঙ্গে বিপস্নবী ও আধ্যাত্মিক চেতনা তিনি কবিতায় ধারণ করতে চান। কবির ভেতর অসাম্যের বঞ্চনার দ্রোহ আছে, সমাজ পরিবর্তনের ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। সেজন্য যে ধরনের কাব্যিক উপস্থাপনা প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে তিনি হয়তো ততটা মনোযোগী নন। এখনো পাঠক কবিতার দুর্বোধ্যতা থেকে মুক্তি চান। সে মুক্তি দিতে পারবেন কবিই।

রাহিত্যের রপ্তানিকৃত রৌদ্রের রুধির, কবি-অলিতাজ মনি, মিজান পাবলিশার্স, মূল্য ২০০ টাকা

জসীমউদ্‌দীনের লোকসাহিত্য

সালেহ ইমরান