আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বৃহস্পতিবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে পাওয়ার পেস্নতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ, স্কোরকার্ডে রান তখন মাত্র ৩৯। দুবাই আন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তখন ভারতীয় বোলারদের রাজত্ব চলছে। আর সেখান থেকে দলের মান বাঁচাতে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন জাকের আলী অনিক ও তাওহিদ হৃদয়।
জোড়া ফিফটি হাঁকিয়ে টাইগারদের একটি স্বস্তিকর জায়গায়ও নিয়ে যান তারা। জাকের ৬৮ রানে আউট হলেও শেষ পর্যন্ত তাওহিদ হৃদয়ের বীরোচিত সেঞ্চুুরিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে সম্মানজনক পুঁজি গড়েছে বাংলাদেশ। ৪৯.৪ ওভারে ২২৮ রান করে অলআউট হয়েছে টাইগাররা।
৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলে বাঁ পায়ে ক্র্যাম্পের শিকার হন তাওহিদ হৃদয়। প্রচন্ড ব্যথা সহ্য করেই বাকি সময় খেলে যাওয়ার দৃঢ়তা দেখান। শুরুটা করেন চার মেরে। এরপর সিঙ্গেল নিয়েই বাকি রান করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার সেঞ্চুরি উদযাপন করেন ডানহাতি ব্যাটার। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ১১৪ বল খেলে ৬ চার ও ২ ছয়ে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান হৃদয়। নবম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিষেক ম্যাচে শতক হাঁকালেন তিনি। একই ওভারে তাসকিন আহমেদ আউট হন তিন রান করে। মোহাম্মদ শামির বলে শ্রেয়াস আইয়ারকে ক্যাচ দেন তিনি। ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে মাঠে ফেরা ভারতীয় পেসার পাঁচ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দেন।
২০৬ বলে ১৫৪ রানের অবিশ্বাস্য জুটি করেছেন জাকের ও হৃদয়। চাপের মুখে দুর্দান্ত জুটি করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসই বদলে দিয়েছেন তারা। মিনিবিশ্বকাপখ্যাত এই টুর্নামেন্টে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। এর আগে ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে ১৩১ রানের জুটি করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যান মার্ক বোচার ও জাস্টিন কেম্প। ওই ম্যাচে পাকিস্তানকে ১২৪ রানে হারিয়েছিল প্রোটিয়ারা।
বৃহস্পতিবার দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৪৩তম ওভারে জাকের আউট হলে রেকর্ড গড়া জুটিটি ভাঙে। ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কোহলির হাতে ক্যাচ হন ডানহাতি টাইগার ব্যাটসম্যান। রেকর্ড জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হলো জাকের আলী ও তাওহীদ হৃদয়ের জুটি। মোহাম্মদ শামির বলে জাকের বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়েন। ১১৪ বলে চারটি চারে ৬৮ রান করেন তিনি। তাতে ১৫৪ রানে ভেঙে গেলো জুটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ষষ্ঠ বা তার পরের উইকেট জুটিতে এটাই সর্বোচ্চ রান এবং ভারতের বিপক্ষেও বাংলাদেশের এটাই ওয়ানডে রেকর্ড জুটি। ১৮৯ রানে বাংলাদেশ হারালো ছয় উইকেট।
সবচেয়ে কম ৫১২৬ বলে দুইশ ওয়ানডে উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন শামি। অবশ্য সবচেয়ে কম ওয়ানডে খেলে এই মাইলফলক ছোঁয়ার তালিকায় দুই নম্বরে ভারতীয় পেসার। ১০২ ম্যাচে এই কীর্তি গড়েন মিচেল স্টার্ক, তার চেয়ে যৌথভাবে দুটি বেশি ম্যাচ খেলেছেন শামি ও সাকলাইন মুশতাক। এদিকে ভারতের হয়ে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি ১৫৬তম ক্যাচ নিলেন কোহলি।
৩৫ রানে পাঁচ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশের কম রানে অলআউটের শঙ্কা জেগেছিল। সেখান থেকে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ষষ্ঠ উইকেটে জাকের আলী ও তাওহীদ হৃদয়ের দেড়শ রান ছাড়ানো জুটিতে। দুজনেই ফিফটির দেখা পেয়েছেন। জাকের আলী তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। তাওহীদ হৃদয় তুলে নিয়েছেন অষ্টম। হৃদয় ফিফটি করেছেন ৮৫ বলে। জাকের ফিফটি পেয়েছেন ৮৭ বলে। ৪৩তম ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে জুটিকে দেড়শ পার করেন হৃদয়।
৯ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে রয়েছে বাংলাদেশ। ৩৫ রানে পঞ্চম উইকেট হারানো লাল-সবুজ দল ১২.১ ওভারে এসে জাকের আলী ও তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেছে। তাদের জুটি পঞ্চাশও ছাড়িয়েছে ষষ্ঠ উইকেটে। অবশ্য তাদের জুটিতে ছিল ভাগ্যের ছোঁয়া। প্রথম বলেই জাকেরের ক্যাচ ছাড়েন রোহিত শর্মা। তার পর কুলদীপের প্রথম বলে হৃদয়কে জীবন দেন হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যক্তিগত ২৪ রানে আবার জীবন পান জাকের। জাদেজার বলে স্টাম্পিং মিস করেছেন রাহুল। বাংলাদেশ সর্বশেষ প্রথম দশ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়েছে ৫৫ ম্যাচ আগে ২০২২ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
শুরু থেকে বাকিদের সঙ্গ না পেলেও একার লড়াইয়ে মেরে খেলছিলেন ওপেনার তানজিদ হাসান। নবম ওভারে এসে তাকে ২৫ রানে থামিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল। অবশ্য তানজিদ গস্নাভসবন্দি হয়েছেন কিনা সেটা নিয়ে স্পিনার অক্ষর প্যাটেল নিশ্চিত ছিলেন না। নিশ্চিত ছিলেন কিপার লোকেশ রাহুল। আম্পায়ার পল রাইফেল মাথা নাড়িয়ে আউটের সিগন্যাল দিলেও বেশ সময় গড়িয়ে গেছে। তানজিদ নিজেও রিভিউ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ায় বিদায় নিতে হয় তাকে। পরের বলে অক্ষরের জোড়া শিকার হন মুশফিকুর রহিম। ভাসানো বলে তাকে এগিয়ে এসে খেলতে বাধ্য করেন অক্ষর। ডিফেন্ড করতে চাইলেও শার্প ক্যাচ হয়ে অভিজ্ঞ মুশফিক শূন্য রানে ফিরেছেন। পরের বলে জাকের আলীরও ক্যাচ গিয়েছিল স্স্নিপে। কিন্তু রোহিত ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হলে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হন অক্ষর।
শুরুর দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সেই ধাক্কা সামলাতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান। তিনি হাত খোলার চেষ্টা করলেও প্রমোশন পাওয়া মিরাজের বিদায়ে চাপে বাংলাদেশ। প্রান্ত আগলে খেলার জন্য মিরাজকে নামানো হলেও সপ্তম ওভারে সামির শিকার হয়েছেন তিনি। স্স্নিপে তার ক্যাচ নিয়েছেন শুবমান গিল। মিরাজ আউট হয়েছেন ৫ রানে।
টস জিতে ব্যাটিং নিলেও শুরুটা হতাশাজনক হয়েছে বাংলাদেশের। শুরুর দুই ওভারেই ফিরেছেন দুই ব্যাটার। প্রথম ওভারে মোহাম্মদ শামির বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ওপেনার সৌম্য সরকার শূন্য রানে গস্নাভসবন্দি হয়েছেন। দ্বিতীয় ওভারে হর্ষিত রানার আঘাতে ফিরেছেন নতুন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। বাজে টাইমিংয়ের খেসারত দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে সরাসরি কোহলির সহজ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন তিনি। সৌম্যর মতো তিনিও শূন্য রানে আউট হয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ৪৯.৪ ওভারে ২২৮/১০ (মুস্তাফিজ ০*, হৃদয় ১০০, তাসকিন ৩, তানজিম ০, রিশাদ ১৮, জাকের ৬৮, সৌম্য ০, শান্ত ০, মিরাজ ৫, তানজিদ ২৫, মুশফিক ০, শামি ৫/৫৩,রানা ৩/৩১, অক্ষর ২/৪৩,)