মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

অবশেষ ফিফটির দেখা পেলেন শান্ত

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অবশেষ ফিফটির দেখা পেলেন শান্ত
রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে সোমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাউন্ডারি হাঁকানো নাজমুল হোসেন শান্তকে (ডানে) অভিনন্দন জানাচ্ছেন তানজিদ হাসান তামিম। শেষ পর্যন্ত তানজিদ ২৪ রানে আউট হলেও কাঙ্ক্ষিত ফিফটি তুলে নেন শান্ত -ওয়েবসাইট

প্রথম ম্যাচে ব্যক্তিগত বড় স্কোর গড়তে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বড় রানের দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে শান্তর ব্যাট হাসলেও বাংলাদেশের পুঁজি হলো মাত্র ২৩৬ রানের। অধিনায়কের ব্যাটে এসেছে ৭৭ রানের ইনিংস। তারপর জাকের আলীর ব্যাটে আড়াইশর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় সিঙ্গেল নিতে গিয়ে তিনি রান আউট হন। তাতে টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি হলো না তার। ৫৫ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৪৫ রান করেন তিনি। এছাড়া শেষ দিকে রিশাদ হোসেন ২৫ বলে ২৬ রান করে বলার মতো ভূমিকা রাখেন। তাতে বাংলাদেশ করেছে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান। তানজিদ হাসান তামিম করেন ২৪ রান।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডট। ধারাভাষ্যকক্ষে বিদেশি সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে অতিরিক্ত ডটের প্রসঙ্গে চলেছে বিস্তর আলাপ। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ওপেনার ম্যাথু হেইডেন টাইগারদের অতিরিক্ত ডট দেওয়া নিয়ে করেছেন সমালোচনা।

সোমবার রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রায় পুরোটাই এগিয়েছে শম্বুক গতিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্সের উপযুক্ত বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- প্রথম গিয়ার থেকে ফিফথ গিয়ার! স্ট্রাইক বদল করতে ব্যর্থ হয়ে টানা ডট, এরপর বড় শট খেলতে গিয়ে বিদায়।

বাংলাদেশ শেষমেশ ইনিংসের সমাপ্তি টেনেছে ১৭৮টি ডট দিয়ে! চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আর কোন ইনিংসে এত বেশি ডট দেখা যায়নি। পাওয়ারপেস্নতে ৪০টি বলে রান বের করতে পারেননি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। মাঝের ওভারের খেলা গড়তেই হয় যেখানে নিয়মিত স্ট্রাইক বদলের মাধ্যমে, সেখানে ১৮০ বলের মধ্যে ১০২টি ডট দিয়েছেন টাইগাররা। ১১তম ওভার থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত, এই সময়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান এসেছে। শেষ দশ ওভারে ৩০ ডট দিয়ে ৬৪ রানে এনেছে বাংলাদেশ।

এদিন মাইকেল ব্রেসওয়েলের মতো অফ স্পিনারের উপর বাংলাদেশ কোন চাপ প্রয়োগ করেনি। নিজের পুরো ১০ ওভার তিনি করে গেছেন টানা। ডট দিয়েছেন ৪৩টি। তার বোলিংয়ে ২৬ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। দলটি মিচেল স্যান্টনারের বাঁহাতি স্পিনে দিয়েছে ৩১ ডট। ডানহাতি পেসার কাইল জেমিসনের বোলিংয়েও সমান সংখ্যক ডট এসেছে। উইলিয়াম ও্থরর্কের সামনে ১০ ওভারের ৪২ বল রান ছাড়া পার করেছে বাংলাদেশ।

ম্যাট হেনরি ৯ ওভারে ৫৭ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট। ডানহাতি এই পেসার ২৯ বলে কোন রান খরচ করেননি। গেস্নন ফিলিপস দুই ওভার করে ডট দিয়েছেন পাঁচটি। অতিরিক্ত ডট নিজেদের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল সফরকারীরা। ক্যারিবিয়ানে বাংলাদেশি ব্যাটাররা প্রত্যেক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের থেকে বেশি বল ডট দিয়েছিলেন। তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশের ডট পার্সেন্টেজ ছিল পঞ্চাশের উপরে।

রাওয়ালপিন্ডির পিচ ব্যাটিংবান্ধব হবে, সেটি গোপন কিছু নয়। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) পিচ কিউরেটর টনি হেমিংয়ের মতে, এটি ব্যাটিং স্বর্গ। এমন পিচেও ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডিতে পুরোনো সুখস্মৃতি কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ দেখায় জয়, কোনো কিছুই যেন আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া দিতে পারেনি। চিরায়ত ব্যর্থতার প্রর্দশনীতে বাংলাদেশ পারেনি বড় সংগ্রহ গড়তে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রম্নপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে বাংলাদেশ তোলে ২৩৬ রান।

রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তুলনামূলক ভালো শুরু এনে দিয়েছেন ওপেনাররা। ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটি আসে তানজিদ তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে। প্রথম ম্যাচের পর আজও বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়ে বিদায় নেন তামিম। মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে তেন তিনি। ২৪ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ রান করা তামিমের ক্যাচ লুফে নিতে ভুল হয়নি কেইন উইলিয়ামসনের।

ওয়ানডাউনে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ সঙ্গ দিচ্ছিলেন শান্তকে। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। উইলিয়াম ও'রোর্কের বলে লেগে মিচেল স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। ১৪ বলে ১৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা হৃদয় হয়েছেন চূড়ান্ত ব্যর্থ। ২৪ বল খেলে করেন ৭ রান। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করা ব্রেসওয়েলের ডেলিভারিটি টেনে শট নেন হৃদয়। উড়ন্ত বলটি মাটিতে পড়ার আগে কাভারে লুফে নেন উইলিয়ামসন। শতরান স্পর্শ করার আগে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে পথ দেখাতে পারতেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু, এদিনও তিনি ব্যর্থ। মাত্র ২ রান করে ব্রেসওয়েলের শিকার হন তিনি। ডিপ মিডে ক্যাচ নেন রাচিন রবীন্দ্র। চোট কাটিয়ে সুযোগ পাওয়া মাহমুদউলস্নাহ দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন। ৪ রান করে তিনিও বিদায় নেন ব্রেসওয়েলকে উইকেট বিলিয়ে। ১১৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে হঠাৎ বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।

সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছিলেন শান্ত ও জাকের আলী অনিক। ব্যাট হাতে অনেকদিন পর নিজেকে খুঁজে পাওয়া শান্ত খেলেছেন ৭৭ রানের দারুণ ইনিংস। ১১০ বলে ৯টি চারে সাজানো ৭৭ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটি থামে উইল ও'রোর্কের শিকার হয়ে। মিডউইকেটে ক্যাচটি নেন ব্রেসওয়েল। ৫৫ বলে ৪৫ রান করে রানআউটের দুর্ভাগ্যে কাটা পড়েন জাকের। জাকের সঙ্গে মিলে লোয়ার অর্ডারে রিশাদ হোসেন খেলেন ২৫ বলে ২৬ রানের কার্যকরী ইনিংস। তাকে সাজঘরে ফেরান ম্যাট হেনরি।নিউজিল্যান্ডের পক্ষে মাইকেল ব্রেসওয়েল ১০ ওভারে ২৬ রানে ৪ উইকেট নেন। ২ উইকেট শিকার করেন ও'রোর্ক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৩৬/৯ (তানজিদ ২৪, শান্ত ৭৭, মিরাজ ১৩, হৃদয় ৭, মুশফিক ২, মাহমুদউলস্নাহ ৪, জাকের ৪৫, রিশাদ ২৬, তাসকিন ১০, মুস্তাফিজ ৩*, নাহিদ ০*; হেনরি ৯-০-৫৭-১, জেমিসন ৯-১-৪৮-১, ব্রেসওয়েল ১০-০-২৬-৪, ও'রোর্ক ১০-১-৪৮-২, স্যান্টনার ১০-১-৪৪-০, ফিলিপস ২-০-১০-০)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে