পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের। সরকার বিএসইসিতে বারবার অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ায় এক শ্রেণির কর্মকর্তারা এর সুযোগ নিচ্ছে।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএসইসি পুনর্গঠনের জন্য গত মঙ্গলবার ড. এম মাশরুর রিয়াজকে নিয়োগ দেয়। এরপরই অভিযোগ ওঠে তিনিও পুঁজিবাজার বিষয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা রাখেন না। তবে অর্থনীতিবিদ হিসেবে সুনাম রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিএসইসির সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবইয়াত-উল-ইসলামের ঘনিষ্ঠ। তাই বিএসইসির কর্মকর্তাদের একটি অংশ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগও মাশরুর রিয়াজের নিয়োগ আদেশ ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেয়।
এদিকে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের সঙ্গে জড়িত এবং এ বিষয়ে ডিগ্রি রয়েছে- এমন কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া উচিত। সরকার বারবার বিএসইসি কমিশন গঠনে ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলীও শেয়ারবাজার বিষয়ে আগে কোনো অভিযোগ ছিল না। ফলে বিএসইসির এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তারা এর সুযোগ নিয়ে দুর্নীতি করেছেন।
এদিকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে ড. এম মাসরুর রিয়াজের নিয়োগ আটকে গেছে। তার বিষয়ে কিছু অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নির্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মাসরুর রিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বুধবার অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তার (মাসরুর রিয়াজ) বিষয়ে কিছু প্রশ্ন আছে। সে বিষয়টি আমি দেখব। দেখে দুই-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।
মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উলেস্নখ করা হয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩-এর ধারা-৫ ও ৬ এর বিধানাবলী প্রতিপালন করতে এই আইনের ধারা ৫ (২) অনুসারে তাকে নিয়োগের তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছর মেয়াদের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রজ্ঞাপনে উলেস্নখ করা হয়।
বিএসইসিতে যোগদানের বিষয়ে মাসরুর রিয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, অর্থ উপদেষ্টা ব্যস্ত থাকায় তার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। রোববার যোগদান করতে পারি। মূলত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে যোগদান করে বিএসইসিতে যেতে হবে। তাই দুই-এক দিন সময় লাগতে পারে।
অন্যদিকে সরকারের নিয়োগ পাওয়া নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুরের বিষয়েও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন এবং তাকে চান না বলে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার। আবার গত বুধবার নিয়ম বহির্ভূত মাসরুরকে নিয়ে এমনটি করা হয়েছে বলে ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে একই সংগঠনের সাত সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদের ছয়জন। একই সঙ্গে মাসরুরকে নিয়ে দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানান সেই ছয়জন কার্যনির্বাহী সদস্য।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান পদ দখল করে থাকা শিবলী রুবায়েতের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় ড. এম. মাসরুর রিয়াজকে। পরে তাকে নিয়ে বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে শুরু হয় বিতর্ক। যদিও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন খোদ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। সরকারের পতন হলে ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করার পর গত ১১ আগস্ট মোহাম্মদ মোহসীন চৌধুরীকে নিয়ন্ত্রক সংস্থারটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়।